Tuesday 01 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্ট্রেস যেভাবে যৌনজীবনে প্রভাব ফেলে


২৭ জুলাই ২০২০ ১৬:২২ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১৩:০৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দীর্ঘদিন ধরে ঘরে-বাইরে কাজ, পরিবার, সন্তান ও সামাজিক চাপ সামলানোর পর স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আসা স্বাভাবিক। আর করোনার এই অস্বাভাবিক সময়ে কমবেশি সবাই মানসিক চাপে ভুগছেন। মানসিক চাপের প্রভাব ব্যাপক। এটি আমাদের ধারণারও বাইরে শারীরিক, মানসিক এবং সম্পর্কের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এমনকি এটি প্রভাব ফেলতে পারে আপনার যৌনজীবনেও।

আবার, স্ট্রেস সেই অদ্ভুত বিষয়গুলির একটি যা কেবল আপনার যৌনজীবনকে প্রভাবিতই করে না, যৌন মিলনের মাধ্যমে তা এড়ানোও যায়। আজ আসুন জেনে নেই মানসিক চাপ কীভাবে আপনার যৌন জীবনকে প্রভাবিত করে।

১. মানসিক চাপে ওজন বাড়ে যা কমায় আত্মবিশ্বাস
স্ট্রেসের সাথে জড়িত হরমোনগুলি আমাদের বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। খুব বেশি আলস্য বোধ করলে তা নিজের অজান্তেই ওজন বাড়িয়ে তোলে যা আমাদের শারীরিক অবয়ব সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে শেখায়। নিজের শরীর সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব সঙ্গির সামনে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় যার প্রভাব পড়ে যৌন সম্পর্কে।
এর থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ না। কারণ, প্রক্রিয়াটি চক্রাকার। আত্মবিশ্বাসের অভাবে যৌনতায় ঘাতটি আর যার ফলে সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব। আসলে আমাদের সম্পর্ক হওয়া উচিৎ এমন যা আমাদের নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। সঙ্গির সামনে আমাদের যেন কিছুতেই আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতে না হয়। তাই স্ট্রেস কিছুতেই বাড়তে দেওয়া যাবে না।

বিজ্ঞাপন

২. স্ট্রেস আমাদের কাজকর্মে প্রভাব ফেলে
শৈশব থেকে কৈশোরকাল, গর্ভাবস্থা, মেনোপজ এবং তার বাইরেও নানাভাবে হরমোন আমাদের শরীরকে অসংখ্য উপায়ে প্রভাবিত করে। স্ট্রেস দ্বারা উত্পাদিত হরমোনগুলির মধ্যে একটি হল কর্টিসল। কর্টিসল রক্তে চিনির মাত্রা ও মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে রাখে। আমাদের শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী কর্টিসল উৎপাদন করে। কর্টিসল উৎপাদন কমে গেলে অতিরিক্ত ক্লান্তি, বমিভাব, ওজন কমে যাওয়া, পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া ও পেটে ব্যাথা দেখে দিতে পারে।
কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত উৎপাদন হলে তা ওজন বাড়ায়। বিশেষত মুখ ও পেটের চারপাশে চর্বি জমায়, ত্বক দুর্বল হয়ে যায় ও ব্রণ দেখা দেয়, মেয়েদের মুখে পশম দেখা দেয় ও পিরিয়ড অনিয়মিত হয়।
আমাদের দেহে এই হরমোন প্রয়োজন, তবে স্বল্প সময়ের জন্য স্বল্প পরিমাণে। যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ মাত্রার কর্টিসল উত্পাদন হয়, তবে তারা আমাদের যৌন হরমোনকে দমন করে। কম পরিমাণে যৌন হরমোন মানে কম লিবিডো যার প্রভাবে যৌন সম্পর্কে সমস্যা।

৩. স্ট্রেস আমাদের আমাদের সম্পর্ক এবং সঙ্গি বিষয়ে প্রশ্ন তোলায়
আমরা যখন মানসিক চাপে থাকি তখন আমাদের আশপাশের মানুষের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর হয় না। কারণ দেখা যায় মানসিক চাপে থাকা আপনি সবার সঙ্গে চিৎকার করছেন, হতাশা প্রকাশ করছেন বা সামান্য কারণে ঝগড়া করছেন। এসময়ে যখন আপনার সঙ্গি উল্টো আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তখন তা পরিস্থিতি আরও বিগড়ে দেয়। এবং আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি সেই ব্যক্তিটি হতে চাইবেন না যিনি সঙ্গিকে হতাশ করে ও ঝগড়ায় উসকে দেয়। এভাবে সম্পর্কে অবনতির ফলে স্ট্রেস বাড়তে থাকে যার প্রভাব পড়ে যৌন জীবনে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে সঙ্গির সঙ্গে আপনার মানসিক অবস্থা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলতে হবে। তবে সেই কথা বলার মানে যদি হয় চিৎকার ও ঝগড়া তা পরিস্থিতি আরও বিগড়ে দেবে। ঠান্ডা মাথায় নিজের পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলতে হবে ও স্ট্রেস কমানোর সমাধান খুঁজতে হবে।

৪. মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান
অনেকেই হতাশা বা খারাপ সময় পার করতে মদ্যপান শুরু করেন। মদ্যপান মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে তা যৌন জীবনে প্রভাব ফেলে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ইরেকশন বা লিঙ্গোত্থানে সমস্যা দেখা যায় আর নারীদের ক্ষেত্রে মদ্যপান যৌনতার ইচ্ছা ও উপভোগ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও মদ্যপান আমাদের শরীরে পানির ঘটতি তৈরি করে যা লুব্রিকেশন কমিয়ে দেয় ও যৌন সম্পর্কের সময় ব্যাথা অনুভব করায়। ফলে যৌনতা চুড়ান্ত আনন্দের পরিবর্তে কষ্টকর অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায় যা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৫. মানসিক চাপ মেয়েদের ঋতুচক্রে প্রভাব ফেলে
উপরে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে মানসিক চাপ কীভাবে কর্টিসলের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে যৌনতার উপর প্রভাব ফেলে। স্ট্রেসের ফলে মেয়েদের ঋতুচক্র ও সন্তান ধারণ ক্ষমতায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
স্ট্রেস আমাদের পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে যা থাইরয়েড, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয় নিয়ন্ত্রণ করে। ডিম্বাশয় ঠিকভাবে কাজ না করলে মেয়েদের ঋতুচক্রে বিরূপ প্রভাব পড়ে। পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে এর ফলে। তাই কেউ গর্ভধারণ করতে চাইলে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নাই।

তাই আপনি যদি স্ট্রেসে থাকেন আর তার প্রভাব পড়তে থাকে আপনার যৌন জীবনে অর্থাৎ সম্পর্কে। তবে সতর্ক হওয়ার এখনই সময়। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ভালো লাগার কাজ করুন, সঙ্গিকে সময় দিন ও সুস্থ সুন্দর যৌনতার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কর্টিসল মানসিক চাপ যৌন জীবন যৌনতা লিবিডো সুস্থ যৌনতা স্ট্রেস