Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঘুম না হওয়ার কারণ ও সমাধান


৯ আগস্ট ২০২০ ২১:১৪

করোনাভাইরাসে অতিমারির এই সময়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। নিজের ও কাছের লোকের আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক তো আছেই, সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যা। আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়াও অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন দুশ্চিন্তার মত সমস্যায়। এতে দেখে দিয়েছে ঘুমুহীনতার সমস্যা।
এই সময়ে এসে লোকজন একটু একটু করে কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু গত কয়েক মাসের সাধারণ ছুটি ও ঘরে থাকার অভ্যাস বদলে দিয়েছে আমাদের ঘুমের রুটিন। কিন্তু সুস্থতা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন ছাড়াও ঘুম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে প্রতিদিন ঠিকমত ঘুম আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও আবেগপ্রবণ স্বত্বাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। একইসঙ্গে তা স্ট্রেস, বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তার মত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

ঘুমহীনতার কারণগুলো বিস্তারিত জেনে নেই চলুন

প্রাত্যহিক জীবনযাপনে পরিবর্তন
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, হোম কোয়ারেন্টাইন, ওয়ার্কিং-ফ্রম-হোম ইত্যাদি বদলে দিয়েছে আমাদের প্রাত্যহিক রুটিন। প্রতিদিনের ব্যস্ত সূচী থেকে বের হওয়ার ফলে সারাদিনের কাজের সময়সূচী ঠিক রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সারাদিন ঘরে থাকার ফলে আমাদের শারীরিক কার্যক্রমও সীমিত হয়ে যায়। তাছাড়া অনেকের ঘরে ঠিকমত সূর্যের আলো আসে না যার ফলে দেখা দিতে পারে নানারকম শারীরিক সমস্যা। তাছাড়া ঘরে বসে কাজ করার কারণে অনেকেরই কাজের সময় আগের মত নির্ধারিত নাই। ফলে, দেখা দিয়েছে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা ও অতিরিক্ত ঘুমানোর সমস্যা। আট ঘন্টার বেশি ঘুম অনেকসয় মেজাজ খিটখিটে করে দেয়, অলস আর দুর্বল লাগে।

দুশ্চিন্তা আর উদবিগ্নতা
কোভিড অতিমারিতে নানারকম দুশ্চিন্তা আমাদের ঘিরে রেখেছে। অধিকাংশ মানুষেরই প্রধান আতঙ্ক তারা যেন কিছুতেই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত না হয়। সেই সঙ্গে পরিবারের বয়স্ক ও রোগা ব্যক্তিদের নিয়েও রয়েছে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করলেও আমরা এখনও নিশ্চিত নই কবে সেটি বাজারে আসবে বা কতটা নিরাপদ।
সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা। অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন, কমে এসেছে অন্যান্য কাজ ও ব্যবসার সুযোগ। পৃথিবী কবে স্বাভাবিক হবে, এই চিন্তা কমবেশি সবাইই করছেন।

বিষণ্ণতা
কারও পরিবারে বা কাছের কেউ কোভিড আক্রান্ত হলে তা বাড়িয়ে দিচ্ছে দুশ্চিন্তার মাত্রা। সঠিক নিয়মে আইসোলেশন ও স্বাস্থ্যবিধি মানা শুধু রোগীরই নয়, তার স্বজনদেরকেও রেখেছে চিন্তার মধ্যে। বিশেষ করে প্রতিদিনই যখন সারা বিশ্বে এত হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, তা দেখে স্বস্তিতে নাই কেউই। এমন পরিস্থিতিতে বিষণ্ণতায় ভুগছেন অনেকেই।

কাজের চাপ
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে অফিস করায় অনেকেরই কাজের চাপ বেড়েছে। নানারকম দুশচিন্তার সঙ্গে কাজের চাপ যোগ হয়ে স্ট্রেস বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণ। সেইসঙ্গে ঘরের বাড়তি কাজের চাপ তো আছেই। কাজের চাপ জনিত স্ট্রেসেও ঘুমহীনতা দেখা দিচ্ছে অনেকের।

বৈদ্যুতিক যন্ত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয়
মোবাইল, কম্পিউটার, ট্যাব ইত্যাদি যন্ত্রের নীলচে আলো চোখের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি তা ঘুমেরও সমস্যা সৃষ্টি করে। মেলাটোনিন নামক হরমোন আমাদের শরীরকে ঘুমিয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেয়। বৈদ্যুতিক যন্ত্রের পর্দার এই নীল আলো মেলাটোনিন উৎপাদনে বাঁধা দেয় যা ঘুমের সমস্যা ডেকে আনে।

স্ট্রেসজনিত অবসাদ
একটানা স্ট্রেস অবসাদ ডেকে আনে। আর অতিমারির এই স্ট্রেস নানারকম শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। টানা মাথাব্যাথা, ভুলে যাওয়া ও হজমে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আর অবসাদের ফলে আরও কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। কাজের শক্তি, উদ্যম ও মনযোগ খুঁজে না পাওয়া এর অন্যতম। অবসাদে ভুগলে রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও দেখা যায় সকালে উঠে কাজের উদ্যম খুঁজে পাওয়া যায় না

অতিমারিতে ঘুম কেন জরুরি
ঘুম এমন একটি শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ড যা একইসঙ্গে অবশ্য দরকারি কিন্তু কিছুটা জটিল। এই ভয়ংকর দুঃসময় পার করার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য ঘুম খুবই দরকার। আসুন জেনে নেই ঘুম কেন এত জরুরি।

১. রাতের গভীর ঘুমে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করে। এটি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম দ্রুত ও উন্নত করে।  ঠিকমত ঘুম হলে মস্তিষ্ক ঠিকমত কাজ করতে পারে। এতে আমরা দ্রুত মুখস্ত করতে পারি, জটিল চিন্তা করতে সক্ষম হই ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

২. ঘুম ভালো তো মন ভালো। ঘুমের অভাব একজন ব্যক্তিকে দ্রুত বিরক্তি ডেকে আনে, বল কমিয়ে দেয় ও বিষণ্ণতা বাড়িয়ে দেয়।
সময়ে ভালো ঘুমের জন্য যা করবেন

উপরে আমরা ঘুম না হওয়ার কারণ ও এর ফলে কি কি হতে পারে তার একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনা দেখেছি। এখন দেখে নেই অতিমারির এই সময়ে ঘুমের সমস্যা দূর করতে যা করবেন। তবে মনে রাখবেন, ঘুমের সমস্যা দূর করতে আপনাকে ধৈর্য ধরতেই হবে। অল্পেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

১. রুটিনমাফিক জীবন
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি করবেন না করবেন তার একটা তালিকা তৈরি করে ফেলুন। এই তালিকা অনুযায়ী ঠিক করুন প্রাত্যহিক রুটিন। ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা ছাড়াও সেই যোগ করুন প্রতিদিনের কাজ, স্ক্রিন টাইম, খাওয়া, গোসলের মত দৈনন্দিন কার্যক্রম। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার পাশাপাশি ব্যায়ামের জন্যও সময় নির্ধারিত করুন। সেই রুটিন মেনে চললে মনকে ঘুমানোর জন্য রাজী করানো সহজ হবে।

২. ঘুমের সময় ছাড়া বিছানায় নয়
একমাত্র ঘুমানোর সময় ছাড়া বিছানায় যাবেন না। এতে আপনার মনের মধ্যে ঘুমানোর জন্য বিছানার একটি ধারণা তৈরি হবে। তাই যারা ঘরে বসে কাজ করছেন তারা ভুলেও বিছানায় বসবেন না কাজের জন্য। একইসঙ্গে মুভি বা সিরিজ দেখার জন্যঅ বিছানায় মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে গড়াগড়ি করবেন না। এতকিছুর পরেও যদি রাতে ঘুম না আসে শুয়ে থেকে এপাশওপাশ না করে ২০ মিনিটের মধ্যে উঠে পড়ুন আর অল্প আলোয় অন্য কোন কাজ করুন। গান শোনা বা হালকা হাঁটাহাঁটি করে তারপর শুতে যান। বারাবার করে ঘরের চাদর বদলান, বালিশ রোদে দিন ও ঘর পরিষ্কার রাখুন।

৩. নিয়ন্ত্রিত আলো
স্বাভাবিক ঘুম আসার প্রক্রিয়ার জন্য আলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক আলোয় সময় কাটাতে। এতে আমাদের শরীর দিন ও রাতের পার্থক্য ধরতে পারবে ও রাত হলে মেলাটোনিন উৎপাদন হয়ে ঘুম আসবে। সারাদিনই যদি কৃত্রিম আলোয় কাটাই তাহলে আমদের শরীর দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতে পারবে না। একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করুন স্ক্রিনের সামনে কাটানো সময়ের পরিধি। আপনার যদি ঘুমের সমস্যা থাকে তাহলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রে যতটা সম্ভব কম সময় দিন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে তো অবশ্যই নয়।

৪. সাবধান দিনের ঘুমে
দিনের বেলা হালকা একটু ঘুমিয়ে নেওয়া অনেকের জন্যই দারুণ উপকারি কিন্তু বাসায় থাকার মানেই সারাদিন ঘুমাবেন তা কিন্তু না। রাতে ঠিকমত গভীর ঘুম চাইলে আপনাকে দিনের ঘুম বিসর্জন দিতেই হবে।

৫. শারীরিক পরিশ্রম
ঘরের কাজ, হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম ইত্যাদি করে শরীরকে দিনের বেলা সচল রাখুন যাতে রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুম চলে আসে। করতে পারেন ঘুমের জন্য বিশেষ যোগব্যায়াম বা পিলাটিসও।

৬. যোগাযোগ বাড়ান, দয়াশীল হন
আপনি ভাবতে পারেন ঘুমের সঙ্গে এর সম্পর্ক কি! কিন্তু অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ও দয়া প্রদর্শন স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। চারদিকে যতই নেতিবাচক সংবাদ শুনুন না কেন, চেষ্টা করুন দয়া ও ভালোবাসার কথা ভাবতে ও প্রচার করতে।

৭. বিশ্রামের উপযুক্ত উপায় খুঁজে বের করুন
ঘুমের সমস্যা দূর করতে আমাদের বিশ্রামের অনন্য উপায় খুঁজে বের করতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদির পাশাপাশি মন শান্ত করে এমন গান শোনা ও বই পড়তে পারেন। প্রতিদিনের জীবনে এগুলো অভ্যাস করলে আপনার মন শান্ত থাকবে ও ঘুমাতে সাহায্য করবে। আর সারাদিন করোনাভাইরাস ও অন্যান্য নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন যতটা সম্ভব।

৮. খাবার ও পানীয়
ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা। তার জন্য আমাদের পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। নিয়মিত পানি পান করতে হবে। মিষ্টিজাতীয় পানিয়ের পাশাপাশি অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন গ্রহণে সতর্ক হতে পারে।

সবশেষে যদি নিজে নিজে চেষ্টা করে ঘুমের সমস্যা সমাধান করতে না পারেন তাহলে চিকিৎসকের শরানপন্ন হন।

ঘুম ঘুমহীনতা ঘুমের সমস্যা ঘুমের সমস্যায় করণীয়


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর