Wednesday 10 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুস্থ দাম্পত্য বজায় রাখার রহস্য


২৬ আগস্ট ২০২০ ২২:৫৮ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১৩:০৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুস্থ সম্পর্ক, স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক- শব্দবন্ধগুলো প্রায়ই শুনে থাকি আমরা। এখন, একটি সম্পর্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে কোন বিষয়গুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করে? তা আসলে নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।

একটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি, সম্পর্কেরব ঘনিষ্ঠতা পরিমাপের আসলে কোন সূত্র হয় না। আবার ঘনিষ্ঠতা সবার জন্য একই মাপকাঠি মেনেও হয়না। তবে কিছু বেসিক জিনিস থাকে যা দিয়ে দুজন পার্টনারের সম্পর্কের সুস্থতার বিষয়টি পরিমাপ করা যায়। এগুলোর মধ্যে আছে যোগাযোগ, যৌনতা, স্নেহ, স্পেস (নিজেদের মধ্যে সময় ভাগ করে নেওয়া), মূল্যবোধ ও শখ ভাগাভাগি করে নেওয়া।

সম্পর্ক গবেষকরা একটি বিষয়ে একমত আর তা হল, সুস্থ সম্পর্কের জন্য প্রয়োজন একে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা। এছাড়াও আরও যেসব বিষয় কাজ করে চলুন দেখে নেই সেসব-

বিজ্ঞাপন

খোলামেলা যোগাযোগ
সাফল্য, ব্যর্থতা, স্ট্রেস, ভালো লাগা, খারাপ লাগা- ইত্যাদি সব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলতে পারা একটি সম্পর্ককে সুস্থ রাখে। বিভিন্ন নাটক সিনেমায় যে দেখায় একজন সঙ্গি আরেকজন থেকে তার অনেক বিষয় গোপন করে সম্পর্কে জড়ায়, তার ফলাফল কখনোই ভালো হয়না। এর ফলে মানসিক চাপ বাড়ে যা দুজন সঙ্গির মধ্যে দুরত্ব বাড়াতে পারে।

যেকোন বিষয়েই আপনার সঙ্গির সঙ্গে কথা বলার মত অবস্থান তৈরি করতে হবে। তাদের মতামত মন দিয়ে শুনুন। সেটি গ্রহণ করতে হবে তা না, তবে আলোচনার মাধ্যমে একটি অবস্থানে পৌঁছানো যায়। তবে যোগাযোগে ক্ষেত্রে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা হল, জাজ করার প্রবণতা। যখন কোন একজন সঙ্গি তার দুরবস্থা শেয়ার করে, তখন যেন আমরা চট করে তাদেরকে ভালো অথবা মন্দ হিসেবে রায় না দিয়ে দেই। এভাবে দূরত্ব বাড়বে। তাই সম্পর্ক সুস্থ রাখতে মানসিক দূরত্ব কমান ও একে অন্যের সঙ্গে কথা বলা বাড়ান।

বিশ্বাস
বিশ্বাস শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সততা ও বিশুদ্ধতা। একে অন্যের কাছ থেকে কিছু গোপন করা, মিথ্যা বলা কখনোই সুস্থ সম্পর্কের লক্ষণ নয়। প্রথমত, যার কাছে আপনার গোপনীয়তা নিরাপদ নয় অর্থাৎ সম্পর্ক ভেঙে গেলে সে এসবের ফায়দা তুলতে পারে, তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে ভাবুন। একটি সুস্থ সম্পর্কের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ থাকবে। যেকোন কিছু নির্ভয়ে শেয়ার করার আত্মবিশ্বাস থাকবে।

নিজের আলাদা ব্যক্তিত্ব ধরে রাখা
যে সম্পর্ক আপনার নিজস্বতা মুছে দেয় তা সুস্থ সম্পর্ক নয়। দোষগুণ মিলিয়েই আপনি একজন মানুষ। তাই আপনার নিজস্বতা ধরে রাখুন। আপনার ভালো লাগা, শখ, আহ্লাদ সঙ্গির পছন্দ অনুযায়ী বদলে ফেললে তা সুস্থ সম্পর্কের উদাহরণ নয়। অপর ব্যক্তির ভালোলাগা-মন্দলাগার বিষয়টাকে সম্মান করেই আমাদের একটি সম্পর্কে প্রবেশ করা উচিৎ। এভাবেই একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় থাকে।

আবার অনেকেই সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের পরিবার, বন্ধু ও অন্যান্য সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়না। এই অভ্যাসও ত্যাগ করতে হবে। একইসঙ্গে জীবনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিতদের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে ও সঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের শ্রদ্ধা করতে হবে।

সম্পর্ক মানেই একে অন্যকে কব্জা করে ফেলা নয়, প্রয়োজন পূরণ নয়। একে অন্যের কাছাকাছি থেকেও দুজন আলাদা ব্যক্তিত্বের মানুষ যখন একে অপরের আলাদা ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ করে দেয়, সেটিই সুস্থ সম্পর্কের উদাহরণ।

কৌতুহল বা আগ্রহ
একটি সুস্থ সুন্দর দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল একে অন্যের প্রতি কৌতুহল বা আগ্রহ বজায় রাখা। আপনার সঙ্গির চিন্তা, উদ্দেশ্য, ও প্রাত্যহিক জীবনযাপন সম্পর্কে আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। আপনার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ, আপনার সঙ্গি যেন তার সর্বোচ্চ দিয়ে জীবনে যুন্দর কিছু করে তা দেখা। তবে আমরা কেয়ার করার নামে অনেকসময় সঙ্গির ব্যক্তিত্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করি, তা অস্বাভাবিক। সে কি করছে, কি ভাবছে তা সম্পর্কে আগ্রহ থাকার মানেই কিন্তু তার জীবনের গতিপথ বদলে দেওয়া নয়। বরং সে যা করতে চায় বা করে তা উপভোগ করা, পাশে থাকা।

প্রয়োজন কিছুটা দূরত্ব
অধিকাংশ সম্পর্কের মধ্যেই একসঙ্গে সময় কাটানোর চাহিদা থাকে। এটি মানেই দুজন একসঙ্গে রোমান্টিক সময় কাটানো নয়। ব্যক্তিগত চাহিদা, কাজকর্ম ও অন্যান্য কমিটমেন্ট মিলিয়েই কিন্তু এই সময় কাটানো।

যতটা সময়ই একসঙ্গে কাটান না কেন, সম্পর্কে সম্মান বজায় রাখার জন্য স্পেস অর্থাৎ ব্যক্তিগত সময়েরও খুব প্রয়োজন। একার মত একা কিছুটা সময় কাটানো তা হতে পারে, নিজের যত্ন নেওয়া, বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা, বাগান করা, রান্না করা বা বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দেওয়া। এভাবে সময় কাটালে আপনার আবেগের জায়গাটি দৃঢ় থাকবে যা সুস্থ সম্পর্কের জন্য দরকার।

কৌতুক ও হালকা আন্তরিকতা বজায় রাখা
একসঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে পারা একটি সম্পর্কের দৃঢ়তার পরিচায়ক। এর জন্য একে অন্যের সঙ্গে কৌতুকে মেতে ওঠা ও হালকা ধরণের কথা বলার মত স্পেস থাকা উচিৎ। সম্পর্কে জড়ানোর আগেই বিবেচনা করুন আপনি সঙ্গির সামনে মনে খুলে নিজের হালকা দিক দেখাতে পারেন কিনা। জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ ও দুঃসময়ে সঙ্গির সামনে সহজ হতে না পারা মানসিক কষ্টের কারণ হতে পারে। তাই একে অন্যের সঙ্গে কৌতুকমুখর সময় কাটানোর মত ঘনিষ্ঠতা থাকা উচিৎ।

শারীরিক ঘনিষ্ঠতা
অনেকেই শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বলতে শুধুই যৌনতা বুঝে থাকেন। কিন্তু সবাই যৌনতা পছন্দ করেন তা না। এটি ছাড়াও একটি সম্পর্ক ভালো থাকতে পারে যদি দুজন সঙ্গিই এই বিষয়ে একমত হন। যৌনতা ছাড়াও চুমু খাওয়া, জড়িয়ে ধরা, ও একসঙ্গে ঘুমানো হতে পারে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার উদাহরণ। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা যে পর্যায়েই হোক না কেন, এটি সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করতে সাহায্য করে।

এবার আসা যাক যৌনতা বিষয়ে। আপনি ও আপনার সঙ্গি দুজনেই যদি যৌনতা উপভোগ করেন তবে নিজেদের মধ্যে কিছু বিষয় পরিষ্কার থাকা উচিৎ।

  • আপনারা দুজনেই একে অন্যের সঙ্গে সহজ অনুভব করেন ও নিজেদের মধ্যে খোলামেলা কথা বলতে পারেন
  • সঙ্গির অসম্মতি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারা
  • ঘনিষ্ঠতার ইচ্ছা অবলীলায় জানাতে পারা
  • যৌনতা বিষয়ে নিজের আগ্রহ থাকা না থাকা খোলামেলাভাবে বলতে পারা

আবার একইসঙ্গে সুস্থ সম্পর্কে যৌনতার মধ্যেও কিছুটা সীমানা থাকা উচিৎ। আসুন জেনে নেই সেগুলো কি-

  • সঙ্গিকে যৌন সম্পর্ক বা কোনধরনের বিশেষ চাহিদা পুরণে চাপ না দেওয়া
  • পরিচিত অন্যান্যদের যৌনতা নিয়ে আলোচনা না করা
  • যৌন ঝুঁকি বিষয নিয়ে আলোচনা করা

টিম হিসেবে কাজ করা
দুজন ব্যক্তি একটি রোমান্টিক সম্পর্কে থাকার মানে তারা একটি টিম হিসেবে কাজ করবেন। একে অন্যের সঙ্গে কাজ করা, সমর্থন করা, একে অন্যের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারাই দল হিসেবে কাজ করার লক্ষণ। এতে সম্পর্ক দৃঢ় হয়।

বিরোধ মিটিয়ে ফেলা
একটি সম্পর্ক যতই সুস্থ হোক না কেন, তার মধ্যে তিক্ততা ও মতবিরোধ দেখা দিতেই পারে। অনেকসময়ই হতাশা ও রাগের মত স্বাভাবিক অনুভূতি গোপন করতে পারবেন না সঙ্গির কাছ থেকে। এটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

মনে রাখবেন, সম্পর্কে মতবিরোধ মানেই সেটি অসুস্থ সম্পর্ক নয়। এমন হলে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলে মতবিরোধের জায়গাটি খুঁজে বের করে তা নিরোধে কাজ করা উচিৎ। যতটা সম্ভব শ্রদ্ধা, নম্রতা আর পারস্পারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই ঝগড়া মেটানো উচিৎ। একে অন্যকে নিচু দেখানো ও ভুল ধরার প্রবণতা সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে।

সূত্র- হেলথলাইন ডট কম

বিজ্ঞাপন

নরসিংদীতে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:০৭

আরো

সম্পর্কিত খবর