রোগমুক্ত থাকতে পান করুন গোল্ডেন মিল্ক
৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:২৬
যুগ যুগ ধরেই ভারতীয় উপমহাদেশের হলুদযুক্ত দুধ খাওয়া হয় এর স্বাস্থ্যগুণের জন্য। আজকাল পশ্চিমা বিশ্বেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই পানীয়। আর একে বলা হচ্ছে গোল্ডেন মিল্ক। গরু বা প্ল্যান্ট বেজড (বাদাম বা সয়াবিন) দুধে হলুদ ও আদা মিশিয়ে জাল দিয়ে বানানো হয় গোল্ডেন মিল্ক। আমরা জানি হলুদের সংক্রমণ প্রতিরধসহ নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আসুন দেখে নেই গোল্ডেন মিল্কের বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু উপকারিতা-
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর
গোল্ডেন মিল্কের মূল উপাদান হলো হলুদ। আর হলুদে রয়েছে কারকিউমিন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে এ উপাদান আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করেন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষয়ে যাওয়া কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। শরীরকে অক্সিডেটিভ চাপ থেকে মুক্ত রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বলে বহু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই গোল্ডেন মিল্ক হতে পারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দারুণ উৎস।
এছাড়াও বেশিরভাগ গোল্ডেন মিল্কে থাকে দারচিনি ও আদা। এ দুটি মশলাও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের আধার।
প্রদাহ ও অস্থিসংযোগের ব্যথা কমায়
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ জটিল রোগের প্রধান কারণের একটি। ক্যানসার, বিপাকীয় সমস্যা, অ্যালঝেইমার্স ও হৃদযন্ত্রের অসুখসহ নানাবিধ মারাত্মক রোগের কারণ দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ। তাই ডায়েটে প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে এমন খাবার থাকা ভালো। গোল্ডেন মিল্কে এই উপাদান আছে ফলে তা ডায়েটে রাখলে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিন অনেক ওষুধ থেকেও প্রদাহের বিরুদ্ধে বেশি উপকারী- কারণ এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
গোল্ডেন মিল্ক মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে বলে দেখা গেছে অনেক গবেষণায়। কারকিউমিন মস্তিষ্কের নিউরোট্রফিক প্রভাবকের স্তর বাড়িয়ে তোলে। ফলে মস্তিষ্কের কোষ গঠনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
এছাড়া আদা প্রতিক্রিয়া ও স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা আরও বাড়াতে পারে। কিছু প্রাণীর ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে হলুদ- মস্তিষ্কের বয়সজনিত ক্ষয়রোধে সাহায্য করে।
মেজাজ ঠিক রাখতে
হলুদের উপাদান কারকিউমিন মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে। দুধ, হলুদ ও আদার মিশ্রণে অর্থাৎ গোল্ডেন মিল্ক পান করলে এতে থাকা উপাদান অবসাদজনিত সমস্যা লাঘবে কাজ করে।
৬০ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর করা ৬ সপ্তাহের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের মতই বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি কাজ করে কারকিউমিন।
হৃদপিণ্ডের অসুখ রোধে
গোল্ডেন মিল্কে থাকা দারুচিনি, আদা, হলুদ এই তিন মশলা জাতীয় উপাদানই হৃদযন্ত্রের জন্য দারুণ উপকারী।
কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে দৈনিক ১২০ গ্রাম দারুচিনি কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে দারুণ কার্যকর। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৪১ স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে করা আরেক গবেষণায় দেখা গেছে দৈনিক দুই গ্রাম আদার গুড়ো সেবনে ১২ সপ্তাহ পর তাদের হৃদপিণ্ডের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৩-২৮ শতাংশ কমে গেছে।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়
দারুচিনি ও আদা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ১ থেকে ৬ গ্রাম দারুচিনি গুড়ো অন্তত ২৯ শতাংশ শর্করা কমায় বলে দেখা গেছে। এছাড়া আদা হিমোগ্লোবিন এওয়ানসি লেভেল প্রায় ১০ শতাংশ কমায়। গোল্ডেনে মিল্কে এর সবকটি উপাদানই মিলবে।
রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান
গোল্ডেন মিল্কে থাকা মশলায় রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। ফলে শীতকালে গোল্ডেন মিল্ক ভারতে খুবই জনপ্রিয়। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে এ দুধ পানে শরীরে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে পারে।