মেয়েরা যেভাবে বুঝবেন ইস্ট্রোজেন বেশি কিনা
২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৪৪
ইস্ট্রোজেনকে বলা হয় ‘নারী হরমোন’। নারী ও পুরুষ উভয়ের শরীরেই এই হরমোন থাকলেও নারীদের প্রজনন বয়সে এটি উচ্চমাত্রায় থাকে। নারী শরীরের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট বিকাশে সাহায্য করে ইস্ট্রোজেন হরমোন । নারীর বাহুমূলের পশম, স্তনের আঁকার, এবং ঋতুস্রাবের মত শারীরিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি এটি প্রজননতন্ত্র গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণের ফলে নারী শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি হতে পারে ক্যানসারও। তাই যদি ইস্ট্রোজেন হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণের কোন চিহ্ন দেখেন, একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে ভুলবেন না।
অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন নিঃসরণের কারণ
বয়ঃসন্ধিকাল ও গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ বেড়ে যায়। কিন্তু এছাড়াও পরিবেশের প্রভাবে বা খাদ্যাভ্যাসের কারণেও বেড়ে যেতে পারে এর নিঃসরণ। আজকাল খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক ও গ্রোথ হরমোন ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এভাবে হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বাড়ার ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও আরও যেসব কারণে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে সেগুলো মূলত আমাদের জীবনযাপনের উপর নির্ভর করে। যেমন,
১. অতিরিক্ত মাদক গ্রহণ এবং ওষুধ খাওয়া
২. হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন ও উচ্চ রক্তচাপ এবং
৩. স্ট্রেস
আসুন দেখে নেই কোন লক্ষণগুলো দেখলে ইস্ট্রোজেন নিঃসরণের মাত্রা বেশি কিনা তা বোঝা যাবে-
১. স্তনে ফোলা ও ব্যাথাভাব
মেয়েদের স্তন হরমোনের প্রতি সংবেদনশীল। এমনিতেই দেখা যায় ঋতুকালীন ও গর্ভাবস্থায় মেয়েদের স্তনে ব্যাথা হয়। তবে যদি অন্যসময়েও স্তনে অস্বাভাবিক কোন পরিবর্তন দেখতে পান যেমন ব্যাথা বা স্বাভাবিকের তুলনায় ফুলে যাওয়া তবে তা হতে পারে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেনের লক্ষণ।
২. মুড ওঠানামা
ইস্ট্রোজেন আমাদের মানসিক ও আবেগীয় অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। অনেকটা প্রি মিনস্ট্রুয়াল সিম্পটমের মত লক্ষণ দেখা দেয়। কখনও বিষণ্ণতা, কখনও দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে আবার হুট করেই মন ভালো হয়ে যেতে পারে।
৩. স্তনে ফিব্রোসিস্টিক লাম্প
স্তনে ছোট আকারের একাধিক লাম্প থাকতে পারে। এমন হলে তা অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন নিঃসরণের কারণে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে স্তনে ব্যাথা ও সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে। স্তন ক্যানসারের জন্য স্তন পরীক্ষার সময়ে এমন লাম্পের অবস্থান বোঝা যায়। তাই নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করুন ও যদি লাম্পের অবস্থান টের পান তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান।
৪. চুল ঝরা
স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত চুল ঝরতে শুরু করলে তা হতে পারে ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে। তবে জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসসহ নানা কারণে চুল ঝরতে পারে।
৫. ওজন বাড়তে থাকা
অতিরিক্ত খাচ্ছেন না, চব্বিশ ঘন্টা শুয়ে-বসেও কাটাচ্ছেন না, তবুও ওজন বাড়ছে। বিশেষ করে নিতম্বের আকার যদি বেড়ে যায় তাহলে তা হতে পারে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন নিঃসরণের লক্ষণ। এমন হলে পেট ফাঁপা ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের পরও ওজন না কমার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
৬. অনিয়মিত পিরিয়ড
হরমোনের মাত্রার উপর নির্ভর করে মেয়েদের পিরিয়ড। নিয়ম করে প্রতি মাসে পিরিয়ড হয় যার তার যদি হুট করে পিরিয়ডের তারিখ এলোমেলো হয়ে যায়, তবে তা হতে পারে ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে। এই হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে হতে পারে পিরিয়ড। এভাবে কয়েক মাস টানা অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা দিলে তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না।
৭. সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগা
রাতে ঠিকমত ঘুম না হলে সারাদিন ক্লান্ত লাগা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘুম, খাওয়া সব ঠিক থাকার পরেও যদি আপনার অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগে তাহলে তা হতে পারে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন হরমোনের ফলাফল।
৮. ঘুমের সমস্যা
অতিরিক্ত মাত্রায় ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ হলে অনেকসময় ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে না ঘুমিয়ে বেশি কথা বলার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে অথবা সারাক্ষণ ঘুম পাওয়ার পরেও ঘুমাতে না পারার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কোন দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যা ছাড়াই হুট করে ঘুমের অভ্যাস বদলে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
এছাড়াও ইস্ট্রজেন হরমোন বেড়ে গেলে পেটফাঁপা, যৌনেচ্ছা কমে যাওয়া, পিএমএস বা পিরিয়ড পূর্ববর্তী উপসর্গ বেড়ে যাওয়া, মাথাব্যাথা, উদ্বিগ্নতা ও প্যানিক অ্যাটাক, হাত বা পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, অবসন্নতা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইস্ট্রোজেন ইস্ট্রোজেন হরমোন নারীদেহে ইস্ট্রোজেন ফিব্রোসিস্টিক লাম্প