বেশি বেশি ক্যালরি পোড়ানোর ১০ উপায়
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৫৪
আমাদের ওজন বাড়া-কমার হার নির্ভর করে বিপাকক্রিয়ার গতির উপর। আমাদের শরীর যত দ্রুত ক্যালরি পোড়ায়, তত দ্রুত ওজন কমে। কিন্তু এই ক্যালরি পোড়ানো বা বিপাকক্রিয়ার গতি নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর। অনেকের বংশগতভাবেই বিপাকের গতি বেশি থাকে। সাধারণত নারীর তুলনায় পুরুষের বিপাকের হার বেশি। তবে বয়স চল্লিশ পার হলে সবারই বিপাকীয় গতি হ্রাস পায়। যেহেতু লিঙ্গ, বংশগতি বা বয়স নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আমাদের হাতে নাই, তাই জেনে নিতে হবে কীভাবে বিপাকের গতি বাড়ানো যায়।
পেশি বাড়ানো
কোন কাজ করি আর না করি, আমাদের শরীর সারাক্ষণই ক্যালরি পোড়াতে থাকে। সাধারণত যাদের পেশির গঠন দৃঢ় থাকে তাদের এভাবে বিনা পরিশ্রমেই ক্যালরি পোড়ে বেশি। প্রতি পাউন্ড পেশি দিনে ৬ ক্যালরি ব্যয় করে। অন্যদিকে প্রতি পাউন্ড চর্বিতে ক্যালরি ব্যয় মাত্র ২। তাই পেশির গঠন দৃঢ় করতে স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করা প্রয়োজন। এতে আমাদের বিপাকক্রিয়াও গতি পাবে।
বাড়াতে হবে ব্যায়াম
শুধু পেশি বাড়ালেই হবে না, সার্বিক মেটাবলিক রেট বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন আরও বেশি ব্যায়াম করা। অ্যারোবিক করলে পেশি বৃদ্ধি না পেলেও ব্যায়ামের কয়েক ঘন্টা পরেও চলতে থাকে আমাদের স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়া। তবে কিছুটা কঠিন ধরনের ব্যায়ামেই এই সুবিধা পাবেন। হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যায়ামে বিশ্রামের সময়ও মেটাবোলিজম বা বিপাক চলবে না। এই সুবিধা পেতে জিমে যোগ দিতে পারেন অথবা হাঁটার মাঝে অল্প সময় করে দৌড়ে নিতে পারেন।
পানি পান করতে হবে
ক্যালরি পোড়ানোর জন্য আমাদের শরীরের পানি প্রয়োজন। তাই অল্প পানিশূন্যতা দেখা দিলেও মেটাবোলিজমের হার কমে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব প্রাপ্তবয়স্করা দিনে অন্তত আট গ্লাস পানি পান করে তাদের ক্যালরি পোড়ানোর হার যারা চার গ্লাস পানি পান করে তাদের থেকে বেশি। প্রতিবার খাওয়ার আগে অন্তত এক গ্লাস পানি পান করুন। চিপস বা ভাজাপোড়া খাবার চেয়ে ফলমূল ও সালাদ খেলেও পানিশূন্যতা দেখা দেবে না।
শক্তি বৃদ্ধিকারী পানীয়
এনার্জি ড্রিংক বা শক্তি বৃদ্ধিকারী পানীয়তে থাকা কিছু উপাদানে বিপাকক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে। এতে থাকা ক্যাফেইন আমাদের শরীরের শক্তি খরচের পরিমাণ বাড়ায়। এতে অনেকসময় টরিন নামে একধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে যা বিপাকের গতি বাড়ায় ও চর্বি পোড়ায়। তবে অনেকের জন্যই এধরনের পানীয়তে উচ্চ রক্তচাপ, উদ্বিগ্নতা ও ঘুমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
বারবার খান
ঘন ঘন খেলে দ্রুত ওজন কমে। দিনে তিনবেলা প্রধান খাবারের মধ্যে কিছু না খেলে আমাদের বিপাকের গতি হ্রাস পায়। তাই একবারে অনেকটা না খেয়ে খাবারগুলো ছোট ছোট কয়েকভাগে ভাগ করে ফেললে তিন থেকে চার ঘন্টা পরপরই কিছু না কিছু খাওয়া হয়। এতে সারাদিন ধরেই বিপাক ক্রিয়া চলতে থাকে ও বেশি বেশি ক্যালরি ব্যয় হয়। আবার অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে দিনে কয়েকবার খেলে দিনের প্রধান খাবারের সময় তুলনামূলক কম খাবার গ্রহণ করি আমরা।
ঝাল খাবার খান
আমাদের দেসি রান্না এমনিতেই ঝাল হয়। এই ঝাল খাবারেরও রয়েছে সুফল। মরিচে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান থাকে যা বিপাকের গতি বাড়িয়ে দেয়। তাই খাবারে কাঁচা, পাকা বা শুকনো মরিচ ব্যবহারে বেড়ে যাবে ক্যালরি পোড়ার হার।
প্রোটিনজাতীয় খাবার খান
চর্বি বা কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে প্রোটিন পোড়াতে আমাদের শরীরের বেশি শক্তি প্রয়োজন হয়। তাই প্রতি বেলার খাবারে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে প্রোটিন খাওয়া বাড়ান। চর্বি ছাড়া গরুর মাংস, মুরগি, টার্কি, টোফু, বাদাম ও বীজ, শিম, ডিম ও কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারে মিলবে পর্যাপ্ত প্রোটিন।
কালো কফি আর সবুজ চা
দুধ, চিনি বা ক্রিম ছাড়া কালো কফি পানের রয়েছে নানা গুণ। এটি আপনাকে শুধু চনমনেই করবে না, বাড়াবে আপনার মনযোগ। ক্লান্তি কমিয়ে ব্যায়ামের সময় বাড়াতে তাই ব্লায়ক কফির তুলনা নাই। সেইসঙ্গে, ব্ল্যাক কফি পান করলে বাড়বে বিপাকের গতি।
এদিকে সবুজ চা পানেও বাড়বে বিপাকের গতি। এতে ক্যাফেইনের পাশাপাশি মিলবে ক্যাটেকিন নামের উপাদান যা বিপাকের হার বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে দিনে দুই থেকে চার কাপ পর্যন্ত কফি পানে মাঝারি ধরনের ব্যায়ামের সময় আমাদের শরীর প্রায় ১৭ শতাংশ ক্যালরি বেশি পোড়ায়।
ক্র্যাশ ডায়েট করা যাবে না
নারীদের ক্ষেত্রে দিনে ১২০০ ক্যালরি আর পুরুষদের ক্ষেত্রে দিনে ১৮০০ ক্যালরির কম খাবার খেলে তাকে বলা হয় ক্র্যাশ ডায়েট। এতে দ্রুত ওজন কমলেও থেকে যায় পুষ্টির ঘাটতি। কম খাবার গ্রহণে পেশি কমে যাওয়ার ফলে বিপাকের গতি হ্রাস পায়। এভাবে শরীর ক্যালরি পোড়ানো কমিয়ে দেয় যার ফলে উল্টো ওজন বেড়ে যায়।