Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আকাশে হেলান দিয়ে শুয়ে- তাহাদের সবুজ সংসার


১২ মার্চ ২০১৮ ১১:৫৫

রাজনীন ফারজানা।।

মাহবুব আলম লাবু ও সোমা মাহবুব দম্পতি গাছপালা ফুল খুব ভালবাসেন। কিন্তু ব্যস্ত নগরের নিজেদের একটা একান্ত ব্যক্তিগত ফুলবাগান অনেকের জন্যই বিলাসিতা। এই নগরে এক ইঞ্চি জায়গাও যে ভীষণ দামী!

সোমা-মাহবুব দম্পতি মূলত বাস করতেন মাহবুবের পুরনো পৈত্রিক বাড়িতে। ফকিরাপুলের জমিদার বাড়ি নামে খ্যাত সেই বাড়িতে ছিল প্রচুর গাছ। বাড়ির চারপাশে ছিল দেশীয় নানান ফল আর ফুলের গাছ। সোমা মাহবুব জানালেন, তার শাশুড়ি খুব ফুল পছন্দ করতেন, বিশেষত বেলী ফুল। তাই তাদের পুরনো বাড়িতে সবমিলিয়ে ঊনসত্তরটি বেলীফুল গাছ ছিল। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেই গাছগুলো থেকে ফুল সংগ্রহ করে তিনি নিজের হাতে মালা গেঁথে নিজের খোঁপায় পরতেন, ছেলের বউদেরও দিতেন।

 

 

এ রকম গাছগাছালিময় পরিবেশে থেকে অভ্যস্ত এই পরিবার যখন সেই পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন তখন সবচাইতে বেশি অনুভব করেছেন বাড়ির সামনে থাকা বাগানটির অভাব। তাদের আগের বাড়ির মত ঘর থেকে পা বাড়ালেই যেন বাগান দেখা যায় সেই চিন্তা থেকেই তারা তাদের বহুতল ভবনের ছাদে ফুলবাগান গড়েছেন। নানারকম গাছের সাথে সেই বাগানে শোভা পাচ্ছে কয়েকটি বেলী ফুলের গাছও।

 

 

ছাদে ফুলের বাগান! এ আর এমন কি! সে তো অনেক বাসার ছাদেই টুকটাক ফুলের বাগান থাকে। এটা ঠিক যে অনেকেই নিজদের বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দায় বা ঘরে ফুল গাছ লাগান। কিন্তু সোমা মাহবুব দম্পতি তাদের তেরো তলার ফ্লোরটির একপাশে নিজেদের জন্য ফ্লাট বানিয়েছেন আর বাকিটা পুরোটাই বরাদ্দ গাছের জন্য।

 

কংক্রিটের রাজ্য গড়ে ওঠার আগে বসার ঘরের ঠিক বাইরে থাকত ফুলের বাগান। মাহবুব দম্পতি সেই স্মৃতিকেই জাগ্রত রাখতে চেয়েছেন। তাই তাদের বসার ঘর আর ফুলবাগানের মাঝে শুধুমাত্র একটা কাঁচের দেওয়ালের দূরত্ব। আর এভাবেই তারা তাদের পুরনো বাড়ির স্মৃতি জাগ্রত রাখতে চেয়েছেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সোমা মাহবুব নিজেই পরিকল্পনা করে করেছেন সবকিছু।

বিজ্ঞাপন

 

 

ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যখন এই বাগানে আসেন এই বাড়ির লোকেরা, রঙ বেরঙের ফুল তাদের নতুন একটা দিন শুরু করার উদ্যম এনে দেয়। আবার কাজ থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরে যখন এখানে আসেন তখন বাতাস আর ফুলের ঘ্রাণে যেন নিমেষেই দূর হয় সব ক্লান্তি। কারণ এই বাগানে ওনারা শুধু শীতকালীন ফুলই চাষ করেন না, সারাবছর যেন ফুল থাকে সেটা মাথায় রেখে ঋতু অনুযায়ী ফুলচাষ করান।

 

 

তাদের বাগানের বর্তমান মালী এখানে বংশ পরম্পরায় কাজ করে আসছেন। অভিজ্ঞ এই মালী মাটি তৈরি থেকে শুরু করে চারা সংগ্রহ, গাছ লাগানো, নিয়মিত  পরিচর্যা সবই করেন। বাড়ির লোকেরাও নিজেদের চাহিদামত গাছ লাগান এই বাগানে।

 

 

দেশি বিদেশি নানা ফুলের সমারোহ এই ছাদ বাগানে। ছাদে ফুলচাষের জন্য রয়েছে দুটো স্তর। নিচের দিকে ছাদের কিনারা বরাবর মাটির বেড আর উপরে আরেক লেয়ার। এছাড়াও আছে ছোট বড় নানা আকারের প্রচুর ফুলের টব। ছাদের একপাশে পরিকল্পিতভাবে বানানো কিছু হ্যাঙ্গার বানিয়ে তাতে ঝোলানো হয়েছে নানারকম অর্কিড। এই অর্কিডবাগানে দেখা যায় সবসময়ই কোন না কোন গাছে ফুল থাকে। অর্কিডের ঠিক পাশেই কংক্রিটের বেডে লাগানো হাস্নাহেনাকে সঙ্গ দিচ্ছে ছোটবড় নানা আকারের আর রঙের গোলাপ। বৈচিত্র্যময় গোলাপের সংগ্রহে কোন গোলাপ হয়ত ফোঁটা থেকে ঝরে যাওয়া পর্যন্ত তিনবার রঙ বদলায়। কোনটা হয়ত তার আকৃতির বিশালতায় আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই গোলাপঝাড়গুলোর ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিয়ে মুগ্ধ করে ছোট ছোট রঙিন এসটার।

 

 

বাগানের সৌন্দর্য বাড়াতে একপাশে একটা কৃত্রিম ঝরণা বানানো হয়েছে। এতে রাখা আছে রঙিন বাতির সুবিধা। ঝরনার ঠিক মাঝখানে একটি মাটির ব্যাঙের মুখ থেকে পানি বের হয়। রাতের অন্ধকারে এই ঝরণায় দেখা যায় আলোর খেলা। শোভা বাড়াতে বাতিগুলোর ঠিক উপরে কাঁচের প্লাটফর্মেও রাখা হয়েছে রঙিন গাছ। ঝরণার একপাশে মাটির বড় আকারের টাবে লাগানো হয়েছে শাপলা আর কচুরিপানা।

বিজ্ঞাপন

 

 

ফুলে ফুলে রঙিন এই ছাদে রয়েছে গোলাপ, গাঁদা, লিলি, ক্রিসেনথিমাম, চন্দ্রমল্লিকা, হাসনাহেনা, ক্যালেন্ডোলা, পিটুনিয়া, ডিয়াস্থাস, এসটার, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, জিনিয়া, লিলি, কয়েক রঙের ফুল, হাস্নাহেনা, সালভিয়া, ফ্লক্স, অর্কিড, বার্মেনিয়া, ডালিয়া, পেনজিসহ নানারকম ফুল।

 

 

এই ছাদবাগানের একপাশে ফুলবাগান করলে অন্যপাশে পারিবারিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য খোলা রাখা হয়েছে মাঝের অংশটা। তবে এদিকেও আছে কংক্রিটের বানানো মাটির বেড। এদিকটা মূলত কিচেন গার্ডেন যেখানে লাগানো হয়েছে টমেটো, লালশাক, লেটুস, পুদিনা, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা ইত্যাদি। ছাদের এপাশে আমসহ অন্য ফলের গাছও রয়েছে।

বাগান নিয়ে কথা হল মালীর সাথে। ফুল ঝরে যাওয়া প্রায় মরা গাছগুলো তুলে ফেলতে ফেলতে মালী জানালেন এই বাগানে তিনি মূলত জৈব সার ব্যবহার করেন। অন্যান্য সারও প্রয়োজনমত ব্যবহার করলেও এই বাগান পুরোপুরি ইউরিয়ামুক্ত বলে জানালেন তিনি।

ছবি- আশীষ সেনগুপ্ত

 

সারাবাংলা/আরএফ/এসএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর