Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হার্ট এর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ন্যাচারোপ্যাথি- ০৫


৩ অক্টোবর ২০২০ ১৪:১২

মিসেস আয়েশা অফিস করেন ৪ তলায়। প্রায় দু’মাস হলো সিড়ি বেয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে যান, ক্লান্ত লাগে, বুক ধড়ফড় করে। চার পাঁচটা সিড়ি ওঠার পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দম নিয়ে আবার উঠতে হয়। অফিসে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর স্বাভাবিক হয় শ্বাস-প্রশ্বাস। ইদানিং কোন খারাপ খবর শুনলে বা হঠাৎ কোন সুসংবাদ শুনলেও বুক ধড়ফড় করতে থাকে, ঘাম হয়। দুশ্চিন্তা করলে বুকে চাপ দিয়ে থাকে, ভার ভার লাগে। একটা দম বন্ধ করা অনুভূতি হয়। কখনো কখনো বুকের মাঝখানে আবার কখনও বুকের কিছুটা বাম পাশে চিনচিন ব্যথা হয়। শরীরের বাম পাশটা ভার হয়ে থাকে। রাতে মাঝেমধ্যে ঘুম ভেঙে যায়। ব্লাড প্রেশারটাও হাই থাকে, কখনো ১৪০/১০০ আবার কখনো ১৭০/৯০। এখন আর আগের মতো ধৈর্যও থাকে না। বাসার লোকজন বলছে, মিসেস আয়েশা খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেছেন, অল্পতেই রেগে যান। ডাক্তার প্রেশার কন্ট্রোল করার ঔষধ দিয়েছেন, খাচ্ছেনও নিয়মিত। কিন্তু আগের মতো স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছেন না।

আমার সাথে মিসেস আয়েশার পরিচয় হয় তার একজন অফিস কলিগের মাধ্যমে, যিনি ন্যাচারোপ্যাথি চিকিৎসার একজন সুফলভোগী।

আমি মিসেস আয়েশার খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি, বিরিয়ানি, গরুর গোশত, পরোটা, শুটকি ভর্তা তার প্রিয় খাবার। এছাড়া তার পরিবারের সদস্যরাও এসব খাবারই পছন্দ করেন। ফলমূল খুব একটা খাওয়া হয় না। খেতে ভালো লাগে না। আবার ফলে রাসায়নিক দেয় এই ভয়ও কাজ করে তাই ফলমূল বাসায় আনা হয় কম। ঝোল তরকারির চাইতে ভুনা তরকারি ওনাদের পছন্দ। সকালে দুধ চা, পরোটা আর গোশত বা ডিম থাকে নাস্তায়। দুপুরে ভাত, মাছ ভুনা বা গোশত, ডাল, কখনো কখনো শাক থাকে। বিকেলে চা, বিস্কুট বা কনফেকশনারি থেকে কেনা কোন কেক বা নুডলস। রাতে দুপুরের তরকারি দিয়েই খাওয়া হয়। মোটামুটি এই হলো তার এবং তার পরিবারের খাদ্যাভ্যাস। তার উপর রয়েছে নিয়মিত পেট সাফ না হওয়ার জ্বালা। তার Blood Lipid Profile রিপোর্টে রক্তে কোলেস্টেরল এবং LDL স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রয়েছে। মিসেস আয়েশার শারীরিক সমস্যার বর্ণনা, ব্লাড টেস্ট রিপোর্ট, খাদ্যাভ্যাস এবং তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি তার হাই উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি হার্টের স্বাস্থ্য বেশ খারাপ।

আরও পড়ুন,  অনিদ্রায় ভুগছেন? সমাধান ন্যাচারোপ্যাথি

তাকে একটি খাদ্য তালিকা করে দেই। যা এরকম-
– সকালে ঘুম থেকে উঠে খালিপেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান।
– ১০ মিনিট পর সারারাত ভিজানো ৫ টি কাঠবাদাম আর ৫ টি কিসমিস, ১ মুঠো পরিমাণ অঙ্কুরিত ছোলা বা গম।
– নাস্তায় ২ টি গমের আটার রুটি, এক বাটি পেঁপে, গাজর, লাউ, ইত্যাদি মিলানো সবজি, এক কাপ টমেটোর স্যুপ, ১ টি কলা।
– বেলা ১১ টায় একটি আপেল এবং একটি ডাবের পানি। তরমুজের সময় একবাটি তরমুজ।
– দুপুরে লাল চালের ভাত, শাক বা নিরামিষ, তিন কোয়া ছোট রসুন, ছোট বা মাঝারি সাইজের মাছের বা দেশি মুরগির তরকারি, মুগ ডাল, সালাদ। খাবার শেষে এক গ্লাস পুদিনা পাতার ঘোল।
– বিকেলে আদা, লেবু বা দারচিনির চায়ের সঙ্গে মুড়ি বা ঘরে তৈরি কোন পিঠা বা টোস্ট।
– রাতে এক কাপ ভাত, সবজি, ডাল এবং টমেটো, বিট, গাজর এর সালাদ।
– ঘুমানোর আগে এক কাপ হালকা গরম পানিতে এক চিমটি কাঁচা হলুদ গুড়া আর এক চিমটি দারচিনি গুড়া দিয়ে পান।

★ খাদ্য তালিকায় যোগ করে দেই –
– প্রতিবেলা খাবার পর এক টুকরো কাঁচা পেঁপে চিবিয়ে খাওয়া
– খাওয়ার মাঝখানে পানি না খাওয়া এবং খাওয়ার আধাঘন্টা পর পানি পান করা
– খাওয়ার সময় মাঝে মাঝে কাঁচা মরিচ খাওয়া
– প্রতি লোকমা খাবার কমপক্ষে ১৫-২০ বার চিবিয়ে খাওয়া

★ নিষেধ করে দেই-
– খাওয়ার সময় কাঁচা লবন খাওয়া
– চিনি
– দুধ চা, কফি
– গরুর গোশত
– ভাজাপোড়া তৈলাক্ত খাবার
– মেশিনে কাটা চাল এবং আটা (রিফাইন্ড রাইস এন্ড ফ্লাওয়ার)
– আচার
– সয়াবিন তেল

★ হারবাল হিসেবে দেই –
– আধা চা চামচ ধনে এবং আধা চা চামচ জিরার গুড়া এক কাপ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে এবং বিকেলে নাস্তার পর একটানা ৪০ দিন খাওয়ার জন্য।

★ ইয়োগা পদ্ধতি হিসেবে দেই- 
হার্ট এর স্বাস্থ্য শক্তিশালী করতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খুবই কার্যকরী ইয়োগা পদ্ধতি শিখিয়ে দেই যা উনি নিয়মিত করবেন।
– সেতুবন্ধাসন, ভূজঙ্গাসন, বলাসন এবং শবাসন (ভোরে লেবু পানি এবং বাদাম কিসমিস খাওয়ার পর)।
– ১০ রাউন্ড ভ্রামরী প্রাণায়াম (সূর্য ডোবার আগে)।
– রাতে বিছানায় শুয়ে ৫ মিনিট আপান বায়ু মুদ্রা অনুশীলন করা।

★ রং চিকিৎসা (ক্রোমোথেরাপি) হিসেবে –
– রাতে শোবার ঘরে সবুজ বা নীল আলোর বাতি জ্বালিয়ে ঘুমানো।
– সবুজ এবং নীল রঙের পোশাক পরা।
– বারান্দায় ফুল এবং পাতাবাহার গাছের বাগান করা।

★ সপ্তাহের ছুটির দিনের বিকেলে বা সন্ধ্যায় ১০ মিনিট হট ফুট বাথ নেওয়ার পরামর্শ দেই।

মিসেস আয়েশা ২১ দিন পর দেখা করেন। উনি আগের চাইতে ভালো আছেন। হাঁপিয়ে ওঠা অনেকটা কমেছে। রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে। উনাকে একটানা ৪০ দিন গাইডলাইনগুলো মেনে চলে দেখা করতে বলি।

২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত হলো বিশ্বব্যাপি। আধুনিক সমাজের জীবনব্যবস্থা আমাদের সুবিধা যেমন দিয়েছে পাশাপাশি মানসিক চাপও বেড়েছে অনেক আর দ্রুতগতির জীবনব্যবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হয়ে উঠেছে অপ্রতুল। ফলে হৃদযন্ত্র পড়েছে ঝুঁকির মুখে। একটু সচেতনতা আর স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের চেষ্টায় আমাদের হার্ট এবং রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকবে সুস্থ, স্বাভাবিক। বাড়িয়ে তুলবে জীবনের গড় আয়ু।

আরও পড়ুন,

 বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা ও ন্যাচারোপ্যাথি ব্যবস্থাপনা

 কোভিড-১৯ পরবর্তী ফ্যাটিগ সারাতে ন্যাচারোপ্যাথি

ন্যাচারোপ্যাথি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা

উচ্চ রক্তচাপ কোলেস্টেরল টপ নিউজ ন্যাচারোপ্যাথি বিশ্ব হার্ট দিবস হার্ট হার্ট এর স্বাস্থ্য


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর