Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পর্ব- ১৪ পৃথুলা লিলি: চাষীর ভালোবাসায় বেঁচে থাকো কন্যা


১৪ মার্চ ২০১৮ ১৩:২৯

বারো মাসের মাঝে দুই থেকে তিন মাস ছাড়া পুরো বছর জুড়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকা পেঁয়াজের মতন দেখতে বালবগুলো যখন বসন্ত বাতাসে এক এক করে তাদের মুখ দেখাতে শুরু করে, তখন বাদবাকী মাসগুলোতে তাদের গুম হওয়া অতৃপ্ত দীর্ঘ সময়, এক লহমায় উধাও হয়ে যায়।

আমি লিলিদের কথা বলছি। ছাদবাগানে সারা বছরের প্রায় দশমাস চুপচাপ দম বন্ধ করে বসে থাকা লিলিদের কথা বলছি। গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজনের কাছ থেকে ছোট ছোট পেঁয়াজের মতন দেখতে এই সব লিলির বালবগুলো সংগ্রহ করে দত্তক এনেছিলাম।

প্রথম দিকে ছোট ছোট টবে তাদের বাসস্থান করে দিয়েছিলাম। বছর দুয়েকের মাঝে তাদের স্বাস্থ এবং বংশ উভয়ই বৃদ্ধি পাওয়ায় কারওয়ান বাজারে একশ টাকা করে পাওয়া যায় যেসব প্লাস্টিকের গামলা, সেগুলোতে নতুন করে বসতি তৈরি করতে হয়েছে। মাঘের শেষে প্রতিটা লিলির গামলার মাটি বের করে অল্প জৈবসার মিশিয়ে আবারও বালবগুলো নতুন করে বুনে দেই।

তবে সব লিলিই সারা বছর চুপ করে বসে থাকে না। নতুন সবুজ পাতায় ভরিয়ে রাখে বৃষ্টির ছোঁয়া পেলেই। তার মধ্যে রেইন লিলি সবচেয়ে চেনা, এদেশের মানুষের কাছে। যদিও তাদের ঘাসফুল বলেই জেনেছি সারাজীবন। চিতা লিলিও তাই। বাসস্থান জুড়ে সবুজ পাতায় ঢেকে থাকতে ভালোবাসে সারা বছর। টাইগার লিলি তার বড় কিছু সবুজ পাতা মেলে রেখে জানান দেয়, সে আছে। স্পাইডার লিলির স্বভাব আবার কিছুটা ভিন্ন ধরণের। বিশাল আকারের লম্বা সবুজ পাতা দিয়ে তার বাসস্থান ঢেকে রাখতে পছন্দ করে সারা বছর।

লিলিদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে পিস লিলি যার নাম দিয়েছি আমি ‘শান্তি বার্তা’। চ্যাপ্টা গাঢ় সবুজ পাতায় ভরে থাকে প্রতিটা বালব। ফুলের ডাঁটি যখন বের হয়, তখন কুঁড়িগুলো থাকে উর্দ্ধমুখী। পরিপূর্ণ প্রষ্ফুটিত হবার সাথে সাথে অবনত হয় মাটির দিকে। যেনো বলে যায়, ‘নত হও। শান্ত হও। নিজের পরিচয়কে সম্মান করো। ভুল হলে ক্ষমা চাও। বিনয়ে বিনীত হও। ভালোবাসো। শান্তি আসবেই, অবধারিত।’

বিজ্ঞাপন

টাইগার লিলিদের মাঝে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে তাদের রঙের পরিবর্তন হয়। গোলাপী সাদা বা লালচে সাদা, কখনও আবার হালকা লাল রঙ প্রকট হয়ে আসে। এবার আমার হালকা লালচে টাইগার লিলি রক্তরাঙা লাল হয়ে ফুঁটেছে। এতো কড়া লাল রঙের লিলি আমি আগে কখনও দেখিনি।

তিনদিন আগে ইউএস বাংলা উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছিল। কেন জানি সব হতাহতদের মাঝ থেকে কো-পাইলট পৃথুলার জন্য স্বার্থপরের মতন মন খারাপ হয়েছিল বেশি। ছাদবাগানে কোন কাজ করিনি, শুধু জল দেয়া ছাড়া। বসে থেকেছি চুপ করে। মৃত্যু অবধারিত, জানি। তারপরও বিশ্বাস করি মৃত্যু এক জীবন থেকে অন্য রূপে আরেক জীবন উপভোগ করার উপায় মাত্র। ভালোবাসার মানুষেরা তাদের ভালোবাসার মানুষদের কাছে ফিরে আসে; প্রকৃতির মাঝে, ভিন্ন রূপে। কখনও ফিরে আসে ফুল হয়ে, বৃষ্টির জল হয়ে অথবা বৃক্ষ হয়ে। যে রূপেই আসুক না কেন, তাকে ঠিক চিনে নিতে পারে তার ভালোবাসার মানুষরা। মৃতরা এভাবেই বেঁচে থাকে, তার ভালোবাসার মানুষের কাছে। সবসময়।

গতকাল তাই লাল টুকটুকে টাইগার লিলিদের দেখে সাথে সাথে মনে হয়েছে, পৃথুলা ফিরে এসেছে চাষী পরিবারে। বৈমানিক পৃথুলার জন্য গত তিনদিনের শোকের পাহাড় ডিঙিয়ে পৃথুলা লিলিকে কাছে পেয়ে আমি যারপর নাই আনন্দিত। ছবি তুলতে গিয়ে তাই তাদের কানে কানে বলে এসেছি, এবার চাষীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফুল হয়ে জীবন উপভোগ করো গো কন্যা। সারা বছর বুকে তুলে রাখবো। তোমরা শুধু মার্চের এ সময়ে পৃথুলা হয়ে বাগানে ফুঁটে দেখা দিয়ে যেও। আজ থেকে তোমাদের নাম দিলাম, পৃথুলা লিলি।

চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।

ছবি: লেখক

সারাবাংলা/আরএফ

পৃথুলা লিলি ভালবাসার লিলি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর