নারীর আদর্শ শরীর আর একজন রেনে ক্যাম্পবেল
৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:৩০
লম্বা, রোগা আর কমনীয়- নারীর আকর্ষণীয় চেহারা বলতে এমনটাই চোখে ভাসে সবার। এমনটা হতে চাইতেন রেনে ক্যাম্পবেলও। ম্যাগাজিনের কাভার গার্লদের মতো চেহারা বানাতে নিজেকে পর্যাপ্ত খাবার থেকে বঞ্চিত করতেন তিনি। যেকোন মূল্যে রোগা যে থাকতেই হবে। ফলে ভুগতে শুরু করেছিলেন ইটিং ডিসঅর্ডারে। চুয়াল্লিশ বছরের রেনেই এখন আকর্ষণীয় নারী চেহারার চিরাচরিত বৈশিষ্ট্যের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা ভাঙতে চান। যুক্তরাজ্যের কর্নওয়েলের রেনে নিজেকে গড়ে তুলেছেন বডি বিল্ডার হিসেবে।
পেশিবহুল শরীরজুড়ে নজরকাড়া ট্যাটুর বাহার, চেহারায় শক্তিমত্তার আভাস- দুই সন্তানের মা রেনের আকৃতিজুড়ে অন্যরকম সৌন্দর্যের বিচ্ছুরণ।
একদা ভঙ্গুর দেহের রেনে ক্যাম্পবেল তার জীবনের বেশিরভাগ সময় উত্সর্গ করেছেন শরীর গঠনের কাজে। সিএনএন স্পোর্টসের কাছে রেনে বলেন, ‘সমাজ যেভাবে নারীদের চেহারা দেখতে চায় আমি হতে চেয়েছিলাম তার সম্পূর্ণ বিপরীত’।
আগে নিজের শরীর নিয়ে তার বিন্দুমাত্র আত্মবিশ্বাস ছিল না তার। এমনকি নিজের ব্যক্তিত্বের উপরও ছিল না ভরসা। মিডিয়া দ্বারা প্রচারিত আদর্শ চেহারা বানানোর যে প্রচারণা তার দ্বারা তিনি এতটাই প্রভাবিত ছিলেন যে সবসময় মানসিক চাপে ভুগতেন। সেই থেকেই পেশিবহুল শরীর গঠনে মন দেন রেনে।
স্বপ্নের এই শরীর তৈরি করার পথ অবশ্য খুব একটা মসৃণ ছিল না তার জন্য। যুক্তরাজ্যের নারীদের পোশাকের আঁকার ৮ থেকে ১৪ তে আনার জন্য তাকে ৮৫ পাউন্ড ওজন বাড়াতে হয়। এই বাড়ানোর প্রক্রিয়াটা খুব একটা সহজ ছিল না। শারীরিক আর মানসিক উভয়দিকেই ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জের।
পেশিগঠনের যাত্রা
আগেই বলা হয়েছে ম্যাগাজিনের কভারগার্লের মতো চেহারা বানাতে চাইতেন রেনে। তারপর তিনি নারীদের বডিবিল্ডিং অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে অংশগ্রহণ করা নারীদের আত্মবিশ্বাসী চেহারা দেখে মুগ্ধ হন রেনে।নিজেকেও সেভাবে গড়তে চাইলেন তিনি। সেভাবে গড়েছেনও।
নিজের পেশিবহুল শরীর নিয়ে গর্ব থাকলেও আক্ষেপও কম নাই রেনের। অনেকসময়ই নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হতে হয় তাকে। বেরিয়ে যেতে বলা হয় নারীদের টয়লেট থেকেও। মানুষ চিরাচরিত ধারণা থেকেই এমন আচরণ করে বলে মনে করেন রেনে।
রেনে বলেন, ‘নারীরা কেন পেশিবহুল হবে- এমন ধারণার বিপরীতে হাঁটতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে আমাকে যা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে বৈ আর কিছু নয়। বাড়িয়েছে আমার মানসিক শক্তিও’।
সেসব ঘটনা আমাকে শক্ত বানিয়েছে যখন নারীদের টয়লেট ব্যবহারের জন্য আমার নিজের নারীত্বের প্রমাণ দিতে হয়েছে। এর চেয়ে অপমানের কিছু হয়না। আমি তাদেরকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি যে আমার চেহারা এমন দেখালেও দিনের শেষে আমি একজন নারীই। এসব টয়লেট ব্যবহারের পূর্ণ অধিকার আমার আছে’।
শরীর গঠনের শুরুর দিকে এসব ঝামেলার পাশাপাশি দেখা দেয় অন্য ঝামেলা। রেনেকে খেতে হত প্রচুর যা তার অনভ্যস্ত শরীর নিতে পারেনি শুরুতেই। মানসিকভাবেই এই প্রক্রিয়া মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে তারা। বেড়ে যায় স্বাভাবিক তাপমাত্রা যা কিছুটা ভয় পাইয়ে দেয় তাকে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই শরীর নতুন বিপাকক্রিয়ায় অভ্যস্ত হয়ে যায় আর ঠিক যন্ত্রের মতই আবারও আগের মত কাজ করতে শুরু করে। সেসময় আবারও আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে রেনের। রেনে বলেন, ‘প্যাশন, ডেডিকেশন আর অবসেশনের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটাই গাঢ়। যেসব ক্রিড়াবিদদের শরীর দেখে আপনারা মুগ্ধ হন, তার পেছনে আছে দারুণ অধ্যাবসায়ের গল্প’।
আরও একটা দিক না বললেই নয় তা হল এমন চমৎকার শরীর গড়তে কোনধরনের স্টেরয়েডের সাহায্য নেননি রেনে। অনেক অ্যাথলেটই দেখা যায় বৈশ্বিক চ্যাম্পিয়নশিপের আগে হওয়া শরীরী পরীক্ষায় স্টেরয়েড গ্রহণের প্রমাণ পাওয়ায় বাদ পড়ে যান। কিন্তু এসব টেস্টেও সবসময় নেতিবাচক এসেছে রেনের ফলাফল। আসলে এমন পেশিবহুল শরীর বানাতে কৃতিমতা নয়, প্রচন্ড ধৈর্য আর মানসিক শক্তি পরিচয় দিয়েছেন তিনি।