‘ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে’
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:১৯
ঢাকা: দেশে ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের (লক্ষণ প্রকাশের আগেই বিশেষ কিছু পরীক্ষা) লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যানসার এপিডেমিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়িত হলে গত পঞ্চাশ বছরে যে কাজ হয়নি তা আগামী পাঁচ বছরে করা সম্ভব হবে।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট ও সিরাক-বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আলোচকরা জানান, প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন ও টিকাদানে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন। লক্ষণ দেখা দিলেই যাতে সবাই হাসপাতাল বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, তার জন্য ক্যানসারের সতর্ক সংকেতগুলি জনসাধারণকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর একযোগে কাজ করা জরুরি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. রাসকীন বলেন, দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। ক্যানসার ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে। ৫০ শয্যা থেকে ৩০০ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। ৫০০ বেডে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু রেডিওথেরাপি বিভাগ দিয়ে শুরু হলেও আধুনিক বিশ্বের মতো সার্জারি, কেমোথেরাপি, গাইনি, শিশু ক্যানসার বিভাগসহ অনেক বিভাগ সংযোজিত হয়েছে। প্রতিরোধ ও গবেষণার জন্য ক্যানসার এপিডেমিওলোজি বা রোগতত্ত্ব বিভাগ হয়েছে। ক্যানসার নির্ণয়ের জন্যও হয়েছে আলাদা বিভাগ।
ডা. রাসকীন আরও বলেন, সরকারি ছাড়াও বেসরকারি বেশ কিছু হাসপাতাল উন্নতমানের ক্যানসার চিকিৎসা সুবিধা চালু করেছে। তবে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় বিপুল সংখ্যক ক্যানসার রোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। আবার বেসরকারি হাসপাতালের সেবা উচ্চমূল্যের হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। একমাত্র সরকারি সমন্বিত বিশেষায়িত ক্যানসার ইনস্টিটিউটে দীর্ঘ অপেক্ষমান তালিকা দূর-দূরান্তের মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আরেকটা অন্তরায়। তাই চিকিৎসা সুবিধা মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার জন্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
আমাদের দেশের তরুণরা ক্যানসার বিষয়ে সচেতন নয় উল্লেখ করে সিরাক বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার নুসরাত শারমিন রেশমা বলেন, তরুণরা ভাবে শুধু বয়স্করাই ক্যানসার আক্রান্ত হতে পারে। অথচ শিশু থেকে তরুণ যেকোনো বয়সেই মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।
দেশের ক্যানসার হাসপাতালগুলোতে অসুস্থ আবহাওয়া আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিদ্যামান উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিকিৎসকরাও আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দেন না। তবে বর্তমানে এসব নেতিবাচক পরিস্থিতির বেশকিছু উন্নতি হয়েছে।
একইসঙ্গে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মিডিয়াকে ক্যানসার চিকিৎসার সফলতার গল্পগুলো তুলে ধরার অনুরোধ করেন।যাতে সবাই এটি অগ্রাহ্য না করে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হয়।
ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনগুলো উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন শুধু চিকিৎসা দিয়ে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজন- প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার নির্ণয়, চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও প্রশমন সেবা বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার।
সিরাক-বাংলাদেশের প্রধান এস এম সৈকতের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র অফিসার রোকানুল রাব্বির সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিরাক বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার নুসরাত শারমিন রেশমা এবং সুস্থতা বিষয়ক সংগঠন ‘হিল’ এর প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত পরিচালক মসিউদ্দীন সাকের।
সারাবাংলা/আরএফ/এমআই