Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লো কার্ব ডায়েট- শুরু করুন খুব ভেবেচিন্তে


২০ মার্চ ২০১৮ ১২:৩৭

রাজনীন ফারজানা।।

সোশাল মিডিয়ায় ফিটনেসভিত্তিক গ্রুপগুলোতে আজকাল একটা বিষয় খুব দেখা যায়, তা হল লো কার্ব ডায়েট বা কার্ব ফ্রি ডায়েট। এ ধরনের গ্রুপগুলোর সদস্যরা সারাদিন কতটুকু শর্করা বা কার্বস খাচ্ছে না খাচ্ছে তার আপডেট দিতে থাকে। অনেকেই এভাবে অল্পসময়ে ওজন কমাতে সফল হচ্ছে যা আরো অনেককেই আকর্ষন করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা অ্যাট চ্যাপেল হিলের মেজার এভলুয়েশনের সহযোগী গবেষক সুস্মিতা খান বলেন, লো কার্ব ডায়েট ওজন কমাতে কার্যকরী হলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। হুট করে একদিন খাবার থেকে সব কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে সেটা শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তাই আসুন লো কার্ব খাদ্যাভ্যাস গড়ার আগে এ সম্পর্কে জেনে নিই।

কার্ব শব্দটি এসেছে কার্বোহাইড্রেট থেকে। সুষম খাদ্যের ছয়টি বিভাগের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা একটি। কার্বন, হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের মিশ্রন হল এই কার্বস। স্বাদের উপর ভিত্তি করে শর্করা দুই প্রকার –

সুগার বা মিষ্টিজাতীয়ঃ গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ

সুগারফ্রি বা মিষ্টিবিহীনঃ স্টার্চ, সেলুলোজ ও গ্লাইকোজেন

খাদ্যে থাকা কার্বস হজম হয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয়ে আমাদের শরীরে আসে। মূলত, আমাদের শরীরের কোষগুলোতে শক্তি সঞ্চার করে এই গ্লুকোজ। এই গ্লুকোজ আবার আমাদের শরীরে গ্লাইকোজেন আর চর্বি জমা করে রাখে যা মানুষের মোটা হওয়ার জন্য দায়ী। এই চিন্তা থেকেই অতিরিক্ত ওজনসমৃদ্ধ মানুষ খাবার থেকে শর্করা বাদ দিয়ে শরীরে জমে থাকা চর্বি ঝরানোর চেষ্টা করে। আজকের দিনে জনপ্রিয় হওয়া লো কার্ব ডায়েটের উৎপত্তি এভাবেই।

বিজ্ঞাপন

 

আমাদের শরীরের মূল চালিকাশক্তি হল ক্যালরি। এক গ্রাম শর্করা থেকে আসে চার কিলোক্যালরি পরিমাণ শক্তি। কমপ্লেক্স কার্বস যা পাওয়া যায় ওটমিল, পাস্তা, হোলগ্রেইন ব্রেড বা রুটি, আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, ডাল, মটরশুঁটি, শিম ইত্যাদি থেকে। এগুলো আমাদের শরীরে দীর্ঘসময়ের জন্য শক্তির জোগান দেয়। আমাদের তিনবেলার প্রধান খাবারগুলোতে কমপ্লেক্স কার্বস রাখতে হয় কারণ এটা আমাদের সারাদিন কর্মক্ষম রাখে। আর শর্করা জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খেলে তা শরীরে চর্বি হিসাবে জমা হয়ে ওবেসিটি বা মুটিয়ে যাওয়ার কারণ হয়।

তাৎক্ষনিক শক্তি পাওয়ার জন্য সিমপ্লেক্স বা ডাবল কমপ্লেক্স শর্করা কার্যকরী। এসবের উৎস হল মিষ্টি জাতীয় খাবার, চিনি, মিষ্টি ফল ইত্যাদি। আবার অন্যদিকে শর্করাজাতীয় খাবার দীর্ঘসময় না খেলে আমাদের শরীর স্টারভেশন মোড অর্থাৎ অনাহারে থাকার পর্যায়ে চলে যায়, তখন সিমপ্লেক্স বা ডাবল ধরণের শর্করা খেতে হয়।

অতিরিক্ত ওজন থাকলে শর্করাজাতীয় খাদ্য বুঝে শুনে খেতে হবে। এতে করে ওজন কমাতে সুবিধা হয়। তবে একেবারে কম খেলে শরীর খারাপ করতে পারে। শরীর দুর্বল হয়ে মাথা ঘুরায়, রক্তচাপ কমে যায় ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে দাঁতে ক্ষত দেখা দিতে পারে।

সুস্মিতা খান জানান, হঠাৎ করে একদিন লো কার্ব বা কার্ব ফ্রি ডায়েট রুটিন মানার আগে অবশ্যই একজন এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা ডায়েটিশিয়ানের মাধ্যমে হরমোন প্রোফাইল পরীক্ষা করে দেখতে হয়। তিনি মনে করেন, এধরনের খাদ্যাভাসে একদিনেই না গিয়ে ধীরে ধীরে আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতিতে যোগ করার মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে। তার পরামর্শ, শুরুতেই খাবার থেকে চিনি বাদ দিতে হবে পুরোপুরি। আবার চায়ে চিনি খেলন না কিন্তু রসগোল্লার রস চেপে মিষ্টিটা খেয়ে ফেললেন, এভাবে হবেনা। যদি একবারে মিষ্টি বাদ দিতে নাই পারেন তবে ধীরে ধীরে বাদ দিতে হবে। রাতের ভাত কিংবা চায়ের চিনি দুই চামচ থেকে এক চামচে নামিয়ে আনুন। এভাবে ধীরে ধীরে মিষ্টি জাতীয় ফল, আলু ইত্যাদিও কমিয়ে আনুন।

বিজ্ঞাপন

 

 

ওজন বেড়ে যাওয়া আটকানোর জন্য কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবারে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা হল এখনকার সময়ে অতি আলোচিত লো কার্ব ডায়েট। এই খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে কার্বোহাইড্রেট খেতে হবে খুব কম পরিমাণে এবং শরীরের শক্তির চাহিদা পূরণের জন্য খেতে হবে মাছ, মাংস, ডিম, নির্দিষ্ট পরিমাণ চর্বিজাতীয় খাবার, লো কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় সবজি এবং সালাদ। তবে যেহেতু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে তাই রোজকার খাবার থেকে পুরোপুরি শর্করা বাদ দিয়ে দেওয়াও ভালো নয়। শুধু প্রয়োজন শরীরের ধরণ, বয়স, উচ্চতা অনুযায়ী বুঝেশুঝে শর্করা খাওয়া।

সুস্মিতা খান আরো সতর্ক করেন যে কেউ যেন হঠাৎ শুরু করে হঠাৎ ছেড়ে না দেয়। অনেকেই হয়তো খাবার থেকে কার্বস বাদ দিয়ে দুই থেকে তিনমাসে তিরিশ বা পঁয়ত্রিশ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেন। উৎফুল্ল হয়ে আবার কার্বস খেতে শুরু করেন। এভাবে শরীরে  বিপরীত প্রতিক্রিয়া পড়ে অনেকসময়। তাই একবার লো কার্বস ডায়েট শুরু করলে একনাগাড়ে অনেকদিন চালানো উচিৎ। ওজন নিয়ন্ত্রণে আসার পরে কার্ব গ্রহণ শুরুও করতে হবে ধীরে ধীরে যাতে হুট করে আবার ওজন না বেড়ে যায়।

সোশাল মিডিয়ায় নানা কিছুর চল অর্থাৎ হাইপ তৈরি হয় আর আমরা বুঝে না বুঝেই সেসব অনুসরণ করতে শুরু করি। লো কার্ব ডায়েট তেমনই এক চলন। আপনি যদি মনে করেন আপনার ওজন কমানো দরকার আর লো কার্ব ডায়েট অনুসরণ করবেন তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ীই শুরু করুন। বিশেষত বাড়ন্ত বয়সের কিশোর কিশোরীদের এ ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

 

 

ছবি- ইন্টারনেট

সারাবাংলা/আরএফ/এসএস

লো কার্ব ডায়েট