Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুগ্ধ করা ‘পাহাড়ি’ রেল স্টেশনের গল্প

সজল জাহিদ
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১২:০১

ট্রেন আর রেল স্টেশন-অন্যরকম মোহ আর ভালোবাসার টানে ভ্রমণে বার বার এই পথই বেছে নিয়েছি আমি। যতবারই ট্রেনে চড়েছি, নিজের অজান্তেই মনের ভিতরে দোলা দিয়েছে এক অন্যরকম রোমাঞ্চ। যাত্রায় এই পথেই যেনো প্রশান্তি খুঁজে পাই। আর তাই জীবনে বহুবার ট্রেনের ভ্রমণ এসেছে, ঘুরে দেখেছি অনেক রেল স্টেশন। তবে একটি রেল স্টেশনে আমি বার বার থমকে দাঁড়িয়েছি, মুগ্ধ হয়েছি তার চারপাশের প্রকৃতি দেখে।

বলছি পাহাড়ের চূড়ায় নির্জন, ছিমছাম, বিলাসী পাবনার পাকশী রেল স্টেশনের কথা। এক অদ্ভুত মায়ায় ঘেরা পাহাড়ি এই রেলস্টেশনে নামতেই মনে হবে আকাশটা যেন খুব কাছে চলে এসেছে। এই বুঝি ছুটে আসছে মেঘেদের দল। যেন হাত বাড়ালেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আকাশ আর মেঘেদের কাছাকাছি মনে হবে নিজেকে। আর নিচের সবুজের প্রান্তর এনে দিবে মায়াবি হাতছানি। গাছপালা, ধানক্ষেত, অরণ্যের মাঝ দিয়ে সড়ক, যেখানে পিপীলিকার মতো ছুটে চলেছে যানবাহন।

বিজ্ঞাপন

আশপাশের প্রকৃতির মোহনীয় রূপ যখন মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাবে তখন হয়তো আপনার নজরে পড়বে কাছে পিঠের অনন্তকাল ছায়া বিলিয়ে যাওয়া বট গাছ, দুই চারটি কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, লাল ইটের, সাদা পাথর আর লোহা ও কংক্রিটের বসবার জায়গা ও প্লাটফর্ম।

সিঁড়ি বেয়ে আরেকটু নিচে সমতলে নামতেই চোখে পড়বে রেলস্টেশনের বাকি সবকিছু। টিকেট ঘর, স্টেশন মাস্টারের রুম, সিগন্যাল রুম অফিস ঘর। ব্রিটিশদের সময়ে তৈরি করা লাল ইটের ছোট্ট একটি ঘর। তার সঙ্গে রয়েছে যাত্রীদের জন্য টিনের আরেকটি ঘর।

এটি-ই কি একমাত্র স্টেশন যেখানে একই সাথে প্রমত্ত বয়ে চলা নদী আছে (ঘন বর্ষায়), আছে শতাব্দী পুরনো বাংলাদেশের একমাত্র আর বিখ্যাত রেল সেতু যা শত বছর পেরিয়ে, শত বাঁধা আর ঝঞ্ঝা সয়েও টিকে আছে আপন মহিমায়? হয়তো তাই। আমার অন্তত তাই মনে হয় যতটুকু জানি। এই এক স্টেশনে বসে বা হেঁটেই আপনি উপভোগ করতে পারেন বয়ে চলা প্রমত্তা নদীর উচ্ছল যৌবনা রূপ, তবে তা অবশ্যই ঘোর বর্ষায়।

বিজ্ঞাপন

এখানে গরম যতই পড়ুক, একটা ভিন্ন রকম উচ্চতায় আর সমতল থেকে বেশ উঁচু আর পাশে বিশাল এক বয়ে যাওয়া নদী আছে বলে সবসময়ই একটা ঝিরঝিরে হাওয়া আপনাকে শীতল পরশ বুলিয়ে যাবে। মাতাল করে দিতে চাইবে মিহি বাতাসের রেশ। বটের ছায়ায় বসে নদীর কুহুতান শোনা আর ঝিরঝিরে বাতাস গায়ে মেখে চারপাশের সবুজ প্রকৃতিতে ডুবে যাওয়া শুধু এখানেই সম্ভব।

পাকশী রেল স্টেশনের এমন নির্জন, নিস্তব্ধ আর মিহি বাতাসের সাথে পদ্মা নদীর মোহময়তা উপভোগ করতে হলে শেষ বিকেলকে বেছে নেয়াই শ্রেয়। তাতে করে শেষ বিকেলের বা সন্ধ্যা শুরুর টকটকে সূর্যের নদী ও সবুজের মাঝে ডুবে যাওয়া অপার্থিব প্রকৃতিও পেয়ে যাবেন। অথবা যেতে পারেন কোনো বর্ষায় যখন ঘন কালো মেঘে ঢেকে যাবে পুরো আকাশ, সবুজ গাছেরা ঝড় তুলবে একূল-ওকূল, তুমুল বৃষ্টি নামবে পুরো চরাচর জুড়ে।

একটি বেদীতে ছাতা মাথায় চুপ করে বসে থেকে উপভোগ করতে পারেন অপার্থিব আর অতুলনীয় কিছু সময়। স্মৃতির এ্যালবামে জমা করতে পারেন সুখ তারার মতো দুর্লভ কোনো কিছু। একবার গিয়েই দেখুন না কেমন লাগে? এমন একটি স্টেশনে, পাহাড়ি স্টেশন, যার চারপাশে সবুজ, পাশেই প্রমত্তা পদ্মা আর বাংলাদেশের একান্ত ঐতিহ্য হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেল সেতু।

বাংলাদেশের সব জায়গা থেকেই ট্রেনে বা বাসে করে পাকশী যাওয়া যায়। এটিই আমার মতে সবচেয়ে ভালো, সাশ্রয়ী আর আরামদায়ক মাধ্যম। পাকশিতে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। একবেলা ঘুরে পরের বেলা বা সন্ধ্যার আগেই পাবনা বা ঈশ্বরদী চলে আসতে পারেন। চাইলে চলে যেতে পারেন নিজের গন্ত্যব্যেও। আবার দেশের যে কোনো জায়গা থেকে বাসেও আসতে পারেন পাকশী। উপভোগ করতে পারেন এক অনন্য রেল স্টেশন।

এখন প্রশ্ন হলো, পাকশী কীভাবে পাহাড়ি স্টেশন হলো? প্রশ্ন আসবেই স্বাভাবিক, কিন্তু একটু ভালো করে ভেবে দেখলেই উত্তর পেয়ে যাবেন। ভেবে দেখতে হবে যে সমতল থেকে কতটা উঁচুতে ঠিক কোনো এক পাহাড়ের চূড়ায় যেন এই স্টেশনের অবস্থান!

আসলে ব্যাপারটা হলো, যখন পদ্মা নদীর উপরে এই ব্রিজ করা হয়, তখন পদ্মা ছিল প্রমত্তা, স্রোত, জোয়ার-ভাটা, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এই সবকিছু থেকে ব্রিজকে নিরাপদ রাখতে সমতলের অনেক অনেক উঁচুতে এই স্টেশন ও নদীর এপার-ওপারের সংযোগ পথ তৈরি করা হয়েছিল, যেটা দুই পাড়ের স্বাভাবিক অবস্থান, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, মাঠ এসবের থেকে অনেক উঁচুতে। যেন অনেকটা পাহাড়ের মতো করে নিরাপদ এই রেল লাইন ও পাকশী স্টেশনের অবস্থান।

তাই আমি এটিকে পাহাড়ি স্টেশন নাম দিয়েছি। আমার কাছে তেমনই লাগে সব সময় আর লাগবেও। এই স্টেশন দিয়ে যাওয়া-আসার সময় আমি পাহাড়ি স্টেশনের স্বাদ পাই। তাই এটি আমার কাছে পাহাড়ি স্টেশন।

ছবি: সংগৃহীত

সারাবাংলা/এসএসএস

পাকশী রেল স্টেশন পাবনা পাহাড়ি রেল স্টেশন বেড়ানো সারাবাংলা বেড়ানো

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর