পর্ব-১৫ আমি কেবলই স্বপন করেছি বপন
২১ মার্চ ২০১৮ ১৬:০৩
আজ আর চাষাবাদ নয়, নগর চাষীর ভিনদেশী চাষীর সাথে বন্ধুত্ব নিয়ে গল্প বলবো। জিনিয়ার সাথে পরিচয় অমিত গোস্বামীর হাত ধরে। দুজনাই কলকাতা নিবাসী লেখক। গত বছর কবিতা উৎসবে এসেছিলেন তাঁরা। অমিত আমাদের পারিবারিক বন্ধু হওয়ায়, তাঁর সাথে জিনিয়ার পরিবার এবং আরো দুজন লেখককে এক রাতে বাসায় আপ্যায়ন করেছিলাম। সেই একদিনই সবাইকে সামনে থেকে দেখা। তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার সাথে বন্ধুত্ব। এর মাঝে সারাবাংলা ডট নেটে, সপ্তাহে একদিন আমি লেখা শুরু করলাম – নগর চাষীর কলাম।
আমার ভাবনার উপর দিয়ে ডানা মেলে একদিন জিনিয়া তাঁর লাউ গাছের ছবি সবার সাথে শেয়ার করল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে লেখা দেখলাম, বাংলাদেশের নগর চাষীর কলাম পড়ে, সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে লাউ গাছটিকে বড় করছেন। অবাক হয়ে আমি তাঁর লেখা পড়ছিলাম, শিহরিত হচ্ছিলাম, আনন্দে মন ভরে উঠছিল। অতি ক্ষুদ্র আমি, আমার জগতও তাই। ছোট্ট একটা ছাদবাগানে ভালোবাসার চাষাবাদ করি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ‘নগর চাষী’ কলামটা লিখি। আর সেই কলাম পড়ে, একজন কলকাতায় বসে নগর চাষী বনে যাচ্ছে! শিহরণ তো জাগবারই কথা, তাই নয় কি!
জিনিয়া অনেক আগে থেকেই সৌখিন চাষাবাদ করে এসেছে। বারান্দায় রাখা ওর ফুলে ভরা টবগুলোর ছবি তাই বলে দেয়। হরেক রকমের ফুটন্ত ফুল, তাঁর মাটির প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ যেন। নগর চাষী কলাম পড়বার পর থেকে সে ধীরে ধীরে ছাদে তাঁর ভালোবাসার চাষাবাদ পরিবারের স্থানটুকু বাড়িয়েছে। লাউয়ের সাথে টুকটুক করে টমেটো, মরিচ, লেটুস, কুমড়ো, ধনিয়াপাতা বেশ ভালো ভাবেই চাষ করছে সে। প্রায়ই আমাকে মেসেজ করে তাদের ছবি পাঠায় জিনিয়া। আমি সেগুলো দেখি আর মুগ্ধ হতে থাকি। বারবার।
এবার কলকাতায় আবারও দেখা হয়েছে জিনিয়ার পরিবারের সাথে, দ্বিতীয়বারের মতন। জিনিয়ার জীবন সঙ্গী বিক্রম এবং ভাই বিপ্লব আমাদের যেভাবে আপ্যায়ন করেছেন, তা বলবার মতন ভাষা আমার ভান্ডারে নাই। প্রায় চার ঘন্টা জিনিয়া আমার পাশেই বসে ছিল। এই সময়ের মাঝে মেয়েটা আমার পাশ একবারের জন্যও উঠে যায়নি। মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবার সাথে আড্ডা দিতে দিতে আমার কানের কাছে এসে ধীর লয়ে শতবার বলেছে, ‘আমি তোমার সব লেখা পড়ি। শাওনদি তুমি কি জানো, আমার যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে আমি কি করি প্রথমেই!’ উত্তর খুঁজতে থাকি জিনিয়ার ঝলমলে কেশের ভাঁজে। সে আবারও বলে ওঠে, ‘আমি প্রথমেই নিজেকে বলি, এই পরিস্থিতিতে শাওনদি কি করতো! কেমন করে এমন সময় স্থির থাকতো!’ আবারও কথা বলার আগেই আবারও জিনিয়া ঝকঝকে হাসির মাঝে বলে উঠলো, ‘তোমার নগর চাষী কলাম আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আমি ধীর হতে শিখেছি। এমন কি স্থির হতেও। মন খারাপের সময়গুলোতে গাছের সাথে সময় কাটাতে শিখেছি। নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি।’
‘শাওনদি তুমি জানো না, তুমি কিচ্ছু জানো না। কতটা ভালোবাসি তোমাকে।’ ভালোবাসলে ভালোবাসা আসে। জিনিয়া আমাকে সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে, আরও একবার। আমার মেসেজ বক্সে জিনিয়ার ভালোবাসার চাষাবাদের শত শত ছবি, মুগ্ধ হয়ে দেখি। অবাক হই, অনেক অনেক অবাক হই। কতটা ভালোবাসাময় সাধনায় সে বড় করে তুলছে তাঁর চাষাবাদের পরিধি। কর্মস্থল, গৃহস্থালী আর লেখালিখির ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিদিন সে ঠিক নিজের জন্য সময় বের করে নেয়। মাটির সাথে, গাছের সাথে, ফুলের সাথে সময় পার করে। মনে শান্তি আনে ভালোবেসে, চাষাবাদের মাঝে।
কয়দিন আগে কলকাতা থেকে ফেরত আসা একজনার কাছে জিনিয়া আমার জন্য উপহার পাঠিয়েছে। বাক্স খুলে দেখি অদ্ভুত সুন্দর একটি গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। আমি জানি না জিনিয়া কেমন করে জানলো যে, গৌতম আমার অনেক প্রিয় একজন সাধকের নাম! প্রকৃতির কাছে নত হবার মূল নায়কের নাম! স্থিরতায় বিশ্বাস আনবার প্রধাণ ব্যক্তির নাম! হয়তো একদিন জেনে নিবো ওঁর মুখেই। তবে জিনিয়ার দেয়া গৌতমের মূর্তিটা যতবার চোখের সামনে আসছে, ততবার তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সেই উক্তিটা মনে আসছে – Time desides who you meet in life, your heart desides who you want in your life and your behavior desides who stays in your life.
বাংলাদেশের নগর চাষীদের পক্ষ থেকে কলকাতার নগর চাষীদের জন্য ভালোবাসা। চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।
ছবিঃ লেখক
সারাবাংলা/আরএফ
অনুপ্রেরণায় নগর চাষীর কলাম চাষাবাদ ভালবেসে চাষী নগর চাষীর কলাম