Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বারান্দা বাগান

আহসান রনি
২ এপ্রিল ২০২১ ১০:০০

কল্পনা করুন, ঘুম থেকে উঠে দু’চোখ মেলে দেখলেন জানালার ফাঁকে বারান্দা থেকে উঁকি দিচ্ছে ভোরের বাতাসে দোল খেতে থাকা লাল হলুদিয়া কলাবতি।  আবার কর্মব্যস্ত দিন শেষে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফিরে হাসনাহেনা, জুঁই কামিনীর মোহনীয় গন্ধে আপনি নিমিষেই সব অবসাদ ভুলে গেলেন। হাতের ব্যাগ ফেলে দৌঁড়ে গেলেন বারান্দায় ফুলের কাছে, পাতার কাছে। মনের অজান্তেই বারান্দার গ্রিল ধরে গুণগুণ করে গান ধরলেন। অথবা মুঠোফোনে প্রিয় মানুষটির সাথে আহ্লাদি আলাপন। তবে যাদের বারান্দায় বাগান করার অভ্যাস, তাদের জন্য এমন কল্পনা প্রায় নিত্যদিন আল্পনার মিশেলে বাস্তব হয়ে ধরা দেয়। তাই যারা কর্মব্যস্ততার মাঝেও ঘরের কোনের ছোট্ট বারান্দাটিকেই এক চিলতে সবুজ দিয়ে সাজাতে চান, তাদের জন্য এবার লিখছি বারান্দা বাগানের আদ্যোপান্ত নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

বারান্দা বা বেলকনিকে চাইলে পছন্দের সামান্য কয়েকটি গাছ দিয়েই নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলা যায়। কিন্তু অনেক সময় আমরা ছোট্ট বারান্দায় অনেক বেশি গাছ দিয়ে সবুজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেই। আবার মাঝেমধ্যে নার্সারি থেকে নিজের পছন্দমতো এমন সব গাছ কিনে আনি যা বারান্দার জন্য একদমই উপযোগী নয়। বারান্দা এমন সব গাছ দিয়ে সাজানো উচিত যে সব গাছ ডোয়ার্ফ বা খাটো জাতের। বারান্দার জন্য বেশি লম্বা বা দ্রুত বর্ধনশীল গাছ নির্বাচন না করাই ভালো।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে বহুতল ভবনের বারান্দায় যে রোদ বা সূর্যের আলো পড়ে তাকে বলা হয় পার্শিয়াল সানলাইট। সেক্ষেত্রে কড়া রোদ বা  ছায়ায় ভালো থাকে এমন ড্রাউট লাভিং প্লান্ট কিংবা ইনডোর প্লান্টও বারান্দার জন্য পুরোপুরি উপযোগী নয়। তাই মাঝারি আলোতে ভালো থাকে এমন খাটো প্রজাতির গাছই বারান্দা বাগানের জন্য উত্তম।

শীতকালীন অধিকাংশ ফুলই বারান্দায় রাখা যায়। পিটুনিয়া, গাঁদা, ডায়ানিথাস, ভার্বেনা, সিলভিয়া, এস্টার, জিনিয়া ইত্যাদি ফুল দিয়ে সাজানো যায়। সবজির মধ্যে মরিচ, ক্যাপসিকাম, লেটুস, বেগুন, টমেটো, ব্রকলি তুলনামূলক ভালো ফলন দেয়। যেসব বারান্দায় তুলনামূলক বেশি রোদ পড়ে সেখানে গোলাপ, কাঠগোলাপ, হাসনাহেনা, কামিনী, বেলি, গন্ধরাজ, জুঁই ইত্যাদি ফুল দিয়েও সাজানো যায়। পাশাপাশি বেশি রোদ পেলে সবজিও তুলনামূলক ভালো ফলন দেয়। অন্যদিকে যে সকল বারান্দায় গ্রিল থাকে সে বারান্দাগুলোতে ক্রিপার, লতানো সবজি বা ফুল গাছ ভালো হয়। পাশাপাশি  অর্কিড, ক্যাকটাস, পাতাবাহার, অর্নামেন্টাল গাছসহ ওষধি গুনাগুন সম্পন্ন গাছ যেমন এলোভেরা, পুদিনা, তুলশী গাছও রাখা যায়। তবে বারান্দায় যতই রোদ আসুক না কেন ফল ও অধিকাংশ ফুল গাছের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩/৪ ঘন্টা স্করচিং সানলাইট দরকার হয়।  ফলে পছন্দসই গাছ কিনে বারান্দায় রাখার পর কয়েকমাস ভালো থাকলেও আস্তে আস্তে সেগুলো দুর্বল হতে থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও নানা রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। তাছাড়া যেহেতু অনেক সময় বারান্দায় কম জায়গায় বেশি গাছ রাখা হয় তাই রোগও দ্রুত ছড়ায়।

তাই সম্ভব হলে গাছগুলো সপ্তাহে ১/২ দিন ছাদে কড়া রোদ দেয়ার চেষ্টা করুন। ডালপালা ছোট রাখতে হবে যাতে ভেতরে ও গাছের গোড়ায় আলো পৌঁছাতে পারে। কোন গাছে ছত্রাক বা মিলিবাগ জাতীয় রোগের আক্রমণ দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থাতেই আক্রান্ত পাতা বা ডাল ছেঁটে দূরে কোথাও ফেলে দিতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। পোকার আক্রমন দেখা দিলে যেসব পোকা খালি চোখে দেখা যায় ও হাত দিয়ে বাছাই করা যায় তা দ্রুত সরিয়ে বা ধ্বংস করে ফেলতে হবে।  সম্ভব হলে ছাদে বা পর্যাপ্ত আলো বাতাসযুক্ত স্থানে রাখতে হবে ও প্রয়োজনীয় যত্ন ও চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

বারান্দায় যেহেতু বাইরে থেকে প্রচুর ধুলাবালি আসে তাই দ্রুত গাছের পাতা ও ডালপালায় ধুলার প্রলেপ পড়ে। ফলে পাতা পুরোপুরি সুর্যের আলো গ্রহণ করতে এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করতে পারে না। এতে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে পাতা ও ডালপালায় জমে থাকা দূষিত ধূলাবালি থেকে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়ায় এবং গাছ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।  ফলে বারান্দার গাছপালাকে ধুলাবালিমুক্ত রাখতে সম্ভব হলে প্রতিদিন বা দুয়েকদিন পর পর হ্যান্ড স্প্রেয়ার দিয়ে সাদাপানি স্প্রে করতে হবে। কাপড় ব্যবহার করেও ভালোভাবে মুছে দেয়া যায়। তবে সব গাছে একই কাপড় ব্যবহার করলে এক গাছ থেকে অন্য গাছে রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। তাই সতর্কতার সাথে কাপড় ব্যবহার করা কিংবা বারবার পরিস্কার কাপড় ব্যবহার করতে হবে।

যেহেতু বারান্দার টবে সরাসরি রোদ পড়েনা তাই গাছের গোঁড়ায় বেশি পানি দিলে টবের ওপর পানি জমে যায় এবং স্যাঁতস্যাতে হয়ে যায়। ফলে মাটিতে দ্রুত ছত্রাক ও পোকার আক্রমণ হয়। তাই চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন বা একদিন পর পর পরিমিত পরিমানে পানি গাছের গোড়ায় দিতে হবে। বর্ষাকালে ও বৃষ্টির সময় বারান্দায় রাখা টবগুলোকে মাটি কিংবা কোকোডাস্ট দিয়ে কানায় কানায় ভরে দিলে টবে পানি জমতে পারে না।  যেহেতু বারান্দায় ছোট ছোট বা মাঝারি সাইজের টবে গাছ লাগানো থাকে তাই জমে যাওয়া বৃষ্টির পানি দ্রুত টবের তলানিতে গাছের শিকরে চলে যায়। টবের তলানিতে পানি জমতে থাকলে শিকড় দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শিকড় মাটি থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না এবং গাছ দুর্বল হয়ে যায়।

অনেক সময় বাইরে থেকে গাছে কোন ধরনের রোগের আক্রমণ চোখে না পড়লেও গাছ আস্তে আস্তে দুর্বল হতে দেখে অনেকে চিন্তায় পড়ে যান। এভাবে দীর্ঘদিন থেকে টবের তলানিতে জমে থাকা পানিতে শিকড় মারাত্বকভাবে আক্রান্ত হয়। দ্রুত প্রতিকার গ্রহণ না করলে একপর্যায়ে গাছ মারাও যেতে পারে।

পরিশেষে আশার কথা হলো বারান্দায় অন্তত দুটো গাছ দিয়ে হলেও আপনার সবুজের যাত্রা শুরু হোক। দেখবেন প্রতিদিন গাছের কাছে যেতে যেতে আপনি একটু একটু করে গাছের ভালো মন্দ, রোগ, চাহিদাগুলো বুঝতে শুরু করবেন। নিজে নিজেই শিখে যাবেন যত্নে গড়া গাছগুলো ভালো রাখার নিত্যনতুন সব কারিগরি। ঐ দুটো গাছের প্রতি আপনার যে আবেগ জন্মাবে সেই আবেগের টানেই আপনি দেখবেন ধীরে ধীরে পুরো বারান্দা বাহারি সব গাছ দিয়ে ভরে ওঠেছে।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিন সেভার্স

সারাবাংলা/এসএসএস

আহসান রনি গ্রিন সেভার্স বারান্দা বারান্দা বাগান লাইফস্টাইল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর