Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভয়ংকর সুন্দর পর্যটন স্পট-ডেথ ভ্যালি, পাথর যেখানে ঘুরে বেড়ায়

শাহীনূর সরকার
২৭ মার্চ ২০২১ ২১:০৬

ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে একটি দল আছে যারা বেশ বিপদজনক, ভয়ঙ্কর, শিহরণ জাগায় এমন কিছু অভিজ্ঞতার খোঁজে থাকেন সবসময়। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে যান রোমাঞ্চের খোঁজে। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু জায়গা আছে যা রোমাঞ্চের সঙ্গে বিপদও ডেকে আনতে পারে। ভয়ঙ্কর সুন্দর সেসব জায়গা নিয়ে সারাবাংলার আয়োজনে আজ থাকছে আমেরিকার ডেথ ভ্যালির কথা।

উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে নিচু এলাকা ডেথ ভ্যালি। পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে শুকনো এই নিম্নভূমিতে বছরে গড় বৃষ্টিপাত মাত্র পাঁচ সেন্টিমিটার। ভয়ঙ্কর সুন্দর এই মরুভূমিতে জলাশয়ের সংখ্যা খুব সামান্য। তবে তাও অনেক বেশি লবণাক্ত। একসময় এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০ ফুট নিচে থাকলে এখন এই মৃত্যু উপত্যকার বালির স্তুপ তিনতলা সমান উঁচু দালানকেও হার মানায়।

পৃথিবী যদি আমাদের বাড়ি হয়ে থাকে, তাহলে ডেথ ভ্যালিকে বলা যায় জ্বলন্ত চুলা। ক্যালিফোর্নিয়ার এই জায়গাটি মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির চেয়েও অনেক বেশি উষ্ণ। ২০২০ সালের আগস্টে এখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩০ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এটি ১৯১৩ সালের পর রেকর্ড করা পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ডেথ ভ্যালির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৫৬.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১৩৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে গিনেস বুকে রেকর্ড করা হয়েছে।

তিন মিলিয়ন একরের বেশি এই মরুভূমিতে রয়েছে বিচিত্র ভুখন্ড, ঐতিহাসিক স্থান, বিপন্ন প্রজাতির গাছপালা ও পশুপাখি। এটি এমনি একটি জায়গা যেখানে মানুষের পদচিহ্নও পর্যটকদের রোমাঞ্চ জাগায়।

উত্তপ্ত এই পরিবেশে খুব বেশি গাছপালা বাঁচতে পারে না। বেশিরভাগ গাছপালাই জন্মে পাহাড়ের নিচের অংশে ও গভীর খাদে।

বিজ্ঞাপন

প্রচন্ড উষ্ণ পরিবেশে দিনের বেলা এখানে তেমন কোন প্রাণী দেখা যায় না। শুধুমাত্র লিজার্ড নামক একধরনের গিরগিটি চোখে পড়ে যারা খুব অবলীলায় উত্তপ্ত এই মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ায়।

তবে সন্ধ্যার পর নেকড়ে, শিয়াল, ইঁদুর, খরগোশ, বাদুরসহ নানা প্রাণীর অবাধ বিচরন দেখা যায়।

বসন্তে ডেথ ভ্যালি হয়ে ওঠে রঙ্গিন। যা বিবর্ণ এই মরুভূমির নামের সম্পূর্ণ বিপরীত। এসময় পাহাড় ও উপত্যকাগুলো সোনালী, বেগুনী, গোলাপী, সাদাসহ নানা রংয়ের ফুলে ভরে ওঠে। সেইসঙ্গে প্রজাপতি, হামিংবার্ড ও মৌমাছিদেরও উড়ে বেড়াতে দেখা যায়।

মরুভূমিতে মাছ! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ডেথ ভ্যালিতে ছয় প্রজাতির মাছ পাওয়া গেছে যা কঠিন এই মরুভূমির লবণাক্ত পানিতে বেঁচে থাকতে পারে। তাদের মধ্যে একটি হলো বিপন্ন ডেভিলস হোল পাপফিশ। ডেভিলস হোলের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ও খুব কম অক্সিজেনের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে এটি। যেকোন ধরনের মাছের জন্য এটি খুবই প্রাণঘাতী পরিবেশ।

এই মৃত্যুপুরীর আরেক বিস্ময় স্লাইডিং স্টোন, বাংলায় যাকে বলা যায় চলমান পাথর। পাথরের অবস্থানের পেছনে রেখে যাওয়া ছাপ দেখে তাদের স্থান পরিবর্তন হওয়াটা নিশ্চিত হওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কয়েকশ পাউন্ড ওজনের পাথরও রয়েছে। কীভাবে তারা একস্থান থেকে আরেকস্থানে যায় তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো রহস্যই রয়ে গেছে।

ডেথ ভ্যালির তাপমাত্রা খুবই বিপদজনক পর্যায়ের। তার মানে এই নয় যে আপনি সেখানে ভ্রমণ করতে পারবেন না। রহস্যে ঘেরা ডেথভ্যালির ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর সেখানে ভীড় করেন প্রায় চার লাখ পর্যটক। তবে উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য সেখানে খুব বেশি সময় তারা থাকতে পারে না। ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাপে দগ্ধ হয়ে সেখানে মারা গেছেন ১৮ জন। তাই এই মৃত্যুপুরীতে যতক্ষণই অবস্থান করবেন না কেনো পর্যটকদের অবশ্যই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

ডেথ ভ্যালিতে স্বস্তিতে ঘুরে বেড়াতে চাইলে প্রথমেই নিজেকে সুস্থ্য রাখতে হবে। প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে। খেতে হবে পর্যাপ্ত খাবার। অবশ্যই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরে খুব বেশি সময় চলাফেরা করা যাবে না।

বিপজ্জনক এই মরুভূমিতে শীতল থাকার জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু জিনিস মেনে চলতে হবে। সরাসরি সূর‌্যের আলো থেকে বিরত থাকুন। হালকা ও ঢিলেঢালা কাপড় পরুন। মাথায় অথবা কাঁধে ভেজা পট্টি রাখতে পারেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্যে থাকুন অথবা ফ্যান ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করুন। কফি, অ্যালকোহল বা চিনিজাতীয় পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন। তাপের কারণে খুব বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই জরুরি সেবায় যোগাযোগ করতে হবে।

ছবি: ইন্টারনেট

সারাবাংলা/এসএসএস

উত্তর আমেরিকা চলমান পাথর ডেথ ভ্যালি পর্যটন পর্যটন স্থান বেড়ানো ভয়ঙ্কর সুন্দর পর্যটন স্পট লাইফস্টাইল স্লাইডিং স্টোন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর