Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফাস্টিং বা উপবাস কী, কত প্রকার এবং সুস্বাস্থে ফাস্টিংয়ের ভূমিকা

ডা. ঐন্দ্রিলা আক্তার
৪ এপ্রিল ২০২১ ১৮:১২

আধুনিক বিশ্বে ‘ফাস্টিং’ একটি ব্যাপক প্রচলিত শব্দ। ফাস্টিং (Fasting) ইংরেজি শব্দ। এর বাংলা হল উপবাস অর্থাৎ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সব ধরনের শক্ত এবং তরল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ফাস্টিং বা উপবাস। আবার শুধু তরল খাবার খেয়েও ফাস্টিং করা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ শাখা ন্যাচারোপ্যাথি মেডিসিনে চিকিৎসার অংশ হিসেবে থেরাপিউটিক ফাস্টিংয়ের ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। ফাস্টিং থেরাপির উদ্দেশ্য হল শরীর থেকে দূষিত বর্জ্য বের করে দেওয়া এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলা। প্রতিটি মানুষ আলাদা। তাই ব্যক্তিভেদে ফাস্টিং করার নিয়ম, বিধিও ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা, রোগের ধরণ, রোগে ভোগার সময়কাল বিভিন্ন বিষয়ের উপর ফাস্টিংয়ের ধরণ এবং সময়কাল নির্ধারিত হয়। তবে থেরাপিউটিক ফাস্টিং সাধারণত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত।

আসুন জেনে নেই ফাস্টিং কত প্রকার ও কী কী

১. ধর্মীয় ফাস্টিং
সব ধর্মেই ফাস্টিং করার প্রথা রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ স্রষ্টার নৈকট্য পাবার জন্য বা নিজ নিজ ধর্মের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে যার যার ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী ফাস্টিং করে আসছে যুগ যুগ ধরে। ইসলাম ধর্মে আরবি মাসের চাঁদের হিসাব অনুযায়ী ঊনত্রিশ দিন বা ত্রিশ দিন রোজা রাখা ধর্মীয় ফাস্টিংয়েরই অংশ। হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মে চান্দ্রমাসের হিসাব অনুযায়ী মাসের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে উপবাস পালন করা হয়। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যিশু ‍খ্রিস্টের প্রতি আনুগত্য এবং সম্মান প্রদর্শন করে বছরে একবার চল্লিশ দিন ফাস্টিং করে থাকে। ধর্মীয় ফাস্টিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হল নিজেকে সকল প্রকার ভোগবিলাস থেকে সংযত করে স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত করা। এই ধরনের ফাস্টিং অনুশীলন করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক উন্নতি ঘটে।

২. রাজনৈতিক ফাস্টিং
বিশ্বের সকল দেশেই বিভিন্ন দাবি পূরণে রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অনশন করে থাকেন। অনশন চলাকালীন সময়ে তারা সব ধরনের সলিড খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। এ ধরনের অনশনকে তারা আমরণ অনশন বলে থাকেন মানে তাদের উত্থাপিত দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা না খেয়ে থাকবেন। এই অনশন যারা করে থাকেন খেয়াল করে দেখবেন তাদের শরীর খারাপ হওয়ার পরিবর্তে আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কারণ তারা দাবি আদায়ের জন্য না খেয়ে থাকলেও ফাস্টিং করার ফলে শরীর পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে।

৩. থেরাপিউটিক ফাস্টিং
থেরাপিউটিক ফাস্টিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হল রোগগ্রস্ত শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা।

৪. জুস ফাস্টিং
জুস ফাস্টিংয়ে শুধুমাত্র ফলের রস বা শাকসবজির রস খেয়ে ফাস্টিং পালন করা হয়। এতে অবস্থা বুঝে এক থেকে তিনদিন ক্ষেত্রবিশেষে সাতদিন পর্যন্ত ফাস্টিং করানো হয়ে থাকে। রোগ এবং শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারিত ফলের রস বা সবজির রস, হারবাল পানীয়, বিভিন্ন খাদ্য থেকে নিঃসৃত দুধ যেমন বাদাম দুধ ইত্যাদি তরল পান করে ফাস্টিং পালন করতে হয়। এই ফাস্টিংয়ে ব্যবহৃত পানীয় বা জুস টাটকা সতেজ ফল, সবজি বা নাটস্ থেকে নিঃসৃত হতে হবে। কৌটা বা প্যাকেটজাত কোন জুস বা তরল ফাস্টিংয়ের পানীয় হিসেবে খাওয়া যাবে না। কেননা কৌটা বা প্যাকেটজাত খাবার সংরক্ষনের জন্য যে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় সেগুলো শরীরের জন্য উপকারি নয়।

জুস ফাস্টিংয়ের একটি নমুনা তালিকা

জুস বাছাই হবে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা, বয়স এবং রোগ অনুযায়ী।

মিল (Meal­­)
সময় (Time)
জুস (Juice)

  1. ব্রেকফাস্ট সকাল ৮-৯ টা
  2. স্ন্যাক টাইম I সকাল ১০-১১ টা
  3. লাঞ্চ বেলা ১২-১ টা
  4. স্ন্যাক টাইম II দুপুর ২:৩০-৩:৩০ টা
  5. স্ন্যাক টাইম III বিকাল ৪:৩০-৫:৩০ টা
  6. ডিনার সন্ধ্যা ৬:৩০টা-৭:৩০টা
  7. স্ন্যাক টাইম IV রাত ৮-৯ টা

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (বিরতি দিয়ে খাওয়া)
বর্তমান সময়ে ফাস্টিং নিয়ে যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে তা মূলত ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয় নিয়ে। এই নিয়মে ফাস্টিংয়ে দিনের ষোল ঘন্টা শরীরকে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত রেখে আট ঘন্টার সাইকেলে খাবার গ্রহণ করা হয়। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়ে যে আলোচনা এবং প্রয়োগ দেখা যায় তার সঠিক প্রয়োগ জরুরি। কেননা, সঠিক নিয়ম অনুযায়ী অনুশীলন না করলে উপকারের চেয়ে অপকার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

এই ফাস্টিংয়ের আদি ইতিহাস প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, আমাদের শরীর বায়ু, পিত্ত, কফ-এই ত্রি ধাতুর সমন্বয়ে তৈরি। ফাস্টিং করার শুরুতে ব্যক্তির শরীরে ধাতুর ভারসাম্য ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে ফাস্টিংয়ের ধরণ এবং সময়কাল নির্ধারণ করতে হয়। যেমন ধরুন, যার শরীর কফ প্রকৃতি সম্পন্ন বা কফের আধিক্য রয়েছে সেই ব্যক্তি ষোল ঘন্টা বা তার বেশি সময় ফাস্টিং করতে পারেন। কারন এদের হজম প্রক্রিয়া ধীরগতি সম্পন্ন হয় মানে খাবার ধীরে হজম হয়। আবার যার শরীর বায়ু ধাতু সম্পন্ন তাদের জন্য চৌদ্দ ঘন্টা বা তার কম সময় ফাস্টিং করা ভালো। কারণ তাদের শরীরে বায়ুর প্রভাব বেশি হওয়ায় অধিক সময় পেট খালি থাকলে গ্যাস তৈরি হয়ে কষ্টকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যাদের শরীর পিত্ত প্রকৃতির তাদের জন্য ষোল ঘন্টার ফাস্টিং যর্থাথ। কারণ এদের খাবার হজম হয় দ্রুত। সুতরাং অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে ফাস্টিং শুরু করতে হবে।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের একটি নমুনা তালিকা

মিল (Meal­­)
সময় (Time)
খাবার ধরণ
ক্যালোরি গ্রহণ

  1. ঘুম থেকে উঠে সকাল ৭:০০ টায় হালকা গরম লেবু পানি বা ভিনেগার পানি পান করা
  2. নাস্তার সময় সকাল ৮:০০ টায় হারবাল চা বা ব্ল্যাক কফি
  3. দুপুরের খাবার ১২:০০ টায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সাথে সবজি বা সালাদ (৭৫০ ক্যালোরি)
  4. স্ন্যাকস্ ৩:০০ টায় এক মুঠো বাদাম বা ড্রাই ফুটস্, ইয়োগার্ট (৫০০ ক্যালোরি)
  5. রাতের খাবার ৭:০০ টায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সাথে সবজি বা  সালাদ (৭৫০ ক্যালোরি)
  6. ঘুমানোর সময় ১০:০০ টায় হারবাল পানীয় বা নরমাল পানি

ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা, রোগের ধরণ এবং সময়কাল বিবেচনা করে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং সাতদিন, দশদিন, চৌদ্দদিন বা একুশ দিনের করা যেতে পারে।

ড্রাই ফাস্টিং
ড্রাই ফাস্টিং হল সূর্য উদয়ের পূর্ব থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া সময়কাল পর্যন্ত সব ধরনের শক্ত এবং তরল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা। এই নিয়মে ফাস্টিংয়ে মধ্যরাতে খাবার খেয়ে ফাস্টিং শুরু করতে হয় এবং পরের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় খাবার খেয়ে ফাস্টিং ভাঙতে হয়। এই ফাস্টিং সপ্তাহে একদিন, দুইদিন, সাতদিন, পনেরদিন বা একমাস এমনকি চল্লিশ দিন পর্যন্ত করা যেতে পারে।

ইসলাম ধর্মের ত্রিশ দিন রোজা পালন ড্রাই ফাস্টিংয়ের নিয়মের মধ্যে পড়ে। স্বাস্থ্য সুফল পেতে থেরাপিউটিক নিয়মে এই ফাস্টিং করতে হলে খাবার গ্রহণে নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। রোজার সময় সেহরিতে ভাত, মাছ, মাংসসহ নানা ভারী খাবার খেয়ে রোজা রেখে দিন শেষে ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার, বাইরের কেনা প্যাকেটজাত খাবারে ইফতার করলে উপকারের চেয়ে অপকারই হয় বেশি।

ড্রাই ফাস্টিং করার সময় সর্তকতার সাথে খাবার নির্বাচন করতে হবে। শর্করা জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। প্রোটিন, উপকারী ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস্ এবং আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে। এ সময় শরীর পানিশূন্য হওয়ার ঝুঁকি থাকায় সচেতনতার সাথে নিয়ম অনুযায়ী তরল বা পানীয় খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

ফাস্টিংয়ের শারীরিক উপকারিতা

১. ডিটক্সিফায়িং বা শরীর পরিচ্ছন্ন করা
ফাস্টিং করলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি, চর্বি এবং দূষিত পদার্থ প্রস্রাব, পায়খানা এবং ঘামের সাথে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। ফলে শরীর নতুনভাবে গড়ে ওঠার সুযোগ পায়। রক্ত পরিষ্কার হয়, হজম প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কোষগুলো পরিষ্কার হওয়ার ফলে নবজীবন লাভ করে। যার ফলে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

২. মেটাবলিজম প্রক্রিয়াকে ভারসাম্যপূর্ণ করে
ফাস্টিং চলাকালিন সময়ে আমরা নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত খাবার খেয়ে থাকি। এ সময় হজম প্রক্রিয়া বিশ্রাম গ্রহণের সুযোগ পায়। এবং হজম ব্যবস্থায় জমে থাকা পুরাতন বর্জ, গ্যাস, এসিড পরিষ্কার করে নতুনভাবে গড়ে ওঠার সুযোগ পায়। ফলে পাকস্থলী সংক্রান্ত অসুখ বিসুখ ভালো হয়।

৩. মেদ বা স্থুলতা কমায়
ফাস্টিং শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল এবং চর্বি ঝরিয়ে শরীরকে ঝরঝরে স্লিম হতে সাহায্য করে। এমনকি ফাস্টিং আমাদের ক্ষুধা উদ্রেককারি হরমোন নিঃসরণে প্রভাব ফেলে অতি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যা আমাদেরকে বার বার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। ফলে সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফাস্টিং চলাকালিন সময়ে শরীর জমিয়ে রাখা চর্বি পুড়িয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে ফলে পুরনো জমে থাকা ফ্যাট ঝরে শরীরের ওজন কমে যায়। ফাস্টিং করার মধ্য দিয়ে আমরা মেদবিহীন সঠিক ওজনের, সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হতে পারি।

৪. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় শ্বেত রক্তকণিকার মাধ্যমে। ফাস্টিং চলাকালিন সময়ে শরীরের রক্তকনিকাগুলো পরিষ্কার এবং পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ পায় ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফাস্টিংয়ের সময় শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকনিকা এবং প্লেটেলেটস্ কনিকাগুলো তাদের মধ্যে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ ধ্বংস করে পরিষ্কার এবং নতুনভাবে গড়ে ওঠে যা নতুন স্টেম সেল গঠনে সাহায্য করে।

৫. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে
ফাস্টিং চলাকালীন সময়ে আমরা সঠিক পরিমাণে লবণ গ্রহন করি। এবং শরীর প্রস্রাব এবং ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীর থেকে বের করে দেয় ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।

৬. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
ফাস্টিং করলে মাংসপেশী এবং রক্তে জমে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল এবং চর্বি ঝরে যায় ফলে রক্তনালীগুলো পরিষ্কার হয়ে ভালোভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে। এবং এতে করে হার্টের পেশি ভালোভাবে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ফাস্টিং চলাকালীন সময়ে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এবং ফাস্টিং অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ থেকে আমাদের বিরত থাকতে সাহায্য করে যা টাইপ ২ ডায়বেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৮. তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে
ফাস্টিং করার ফলে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যায়। রক্ত পরিষ্কার হয়। শরীরের কোষগুলো নবজীবন লাভ করে। অক্সিডেটিভ ড্যামেজ নিয়ন্ত্রিত হয়। নতুন কোলাজেন উৎপাদন হতে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বক দীপ্তিময় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং বার্ধক্য রোধ করে।

৯. বুদ্ধি প্রখর করে
ফাস্টিংয়ের সময় রক্তে এনডোরফিন এনজাইম নিঃসরণ বাড়ে। যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে ব্যক্তির বুদ্ধি, জ্ঞান এবং চিন্তা শক্তিকে প্রখর হতে সাহায্য করে।

১০. আধ্যাত্মিক এবং আত্মিক উন্নতি লাভ
ন্যাচারোপ্যাথি বিশেষজ্ঞের অধীনে থেকে ফাস্টিংয়ের নিয়মনীতি যথাযথভাবে মেনে ফাস্টিং করলে ব্যক্তির আত্মিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হয়। কারণ এ সময় মানুষ শুধু শারীরিক উপবাসই নয় সাথে সাথে মৌন ব্রত পালন করে। ফলে নিজের ভিতরে অনুসন্ধান করার সুযোগ লাভ করে। পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে বোঝার এবং উপলব্ধি করার সুযোগ পায়। ক্ষুধার উপলব্ধিকে যুক্তি এবং প্রয়োজনের আলোকে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা লাভ করে। ফলে অসহায় দুর্বলের কষ্ট, ক্ষুধার যন্ত্রনা, অভাব বোঝার মতো মানবিক বোধ তৈরি হয়। ফাস্টিং মানুষকে বিনয়ী এবং কৃতজ্ঞ হতে সাহায্য করে। আধ্যাত্মিক ফাস্টিং অনুশীলন মানুষকে স্রষ্টার নৈকট্য লাভে সাহায্য করে।

জাপানের সেল বায়োলজিস্ট অশিনুরি ওশুমি ‘অটোফেজি’–র উপর থিসিস প্রকাশ করে ২০১৬ সালে মেডিসিন বিভাগ থেকে নোবেল পুরষ্কার পান। অশিনুরি ওশুমি অটোফেজি প্রসেসে দেখিয়েছেন, ফাস্টিংয়ের সময় কি করে শরীরের কোষগুলো তাদের মধ্যকার জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলোকে রিসাইকেল করে এবং নতুনভাবে গড়ে ওঠে। যা রোগমুক্ত সুস্থ জীবন উপভোগ করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে। এই গবেষণায়, ফাস্টিংয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতাকে বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণের আলোকে প্রমাণ করে উপস্থাপন করা হয়েছে। আসুন পবিত্র রমজান মাসে সঠিক নিয়মে ফাস্টিং করার মধ্য দিয়ে শারীরিক, মানসিক, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি, পরিতৃপ্তি লাভ করি এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার সংকল্প করি।

সারাবাংলা/আরএফ

অটোফেজি ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং উপবাস ডা. ঐন্দ্রিলা আক্তার ফাস্টিং


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর