মহামারির সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে হতাশা ও উদ্বেগ বেড়েছে
১২ এপ্রিল ২০২১ ১৯:০৫
করোনা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলো তীব্র হয়ে ওঠছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারীর সময়ে কিশোর-কিশোরীদের হতাশা ৫০ শতাংশ বেড়েছে, উদ্বেগজনিত রোগ বেড়েছে ৬৭.৫ শতাংশ এবং নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা বেড়েছে অনেক বেশি। হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসা নিতে আসা তরুণ-তরুণীদের ওপর গবেষণায় এমন তথ্য ওঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা ২৫ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে।
১৩ থেকে ২২ বছর বয়সীদের ওপর করা আরেকটি গবেষণায় জানা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে তাদের মধ্যে বড় ধরনের হতাশা, উদ্বেগ, অসামঞ্জস্যতা, নিজেকে আঘাত করাসহ অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা বেশি দেখা গেছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে কয়েকটি দেশে স্কুল খুলে দিয়েছে। স্কুলে যাওযা শুরু করার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ভয় দেখা গেছে। সারাদিন মাস্ক পরে থাকা ও প্রত্যেকের ডেস্ক আলাদা পার্টিশন দেওয়ায় ভয় বেড়েছে বলে তারা জানিয়েছে। স্কুলে যাওয়া নিয়েও তাদের মধ্যে অস্বস্তি ও উদ্বেগ দেখা গেছে।
প্যানিক অ্যাটাকের শিকার এক কিশোর জানান, বেশিরভাগ ডেস্কই পার্টিশন দিয়ে আলাদা থাকার কারণে ক্লাসে সবকিছু নিয়েই তার অস্বস্তি বোধ হয়। যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে লেখা, ঘুরে দেখা ইত্যাদি। নোটবুক ও ল্যাপটপ নিয়েও অস্বস্তি কাজ করছে বলে জানায় ঐ কিশোর।
শিক্ষার্থীরা এও জানান, পার্টিশনের কারণে তারা বোর্ডের লেখা ঠিকমতো দেখতে পায় না এবং শিক্ষকদের কথা ভালোভাবে শুনতে পায় না। যার ফলে তারা ক্লাসে ভালোভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।
মহামারির কারণে উদ্বেগ আর একাকীত্ব জীবনযাপনের জন্য কিশোররা ধূমপান করছে, অনেকের ওজন কমে যাচ্ছে, অনেকের আবার ওজন বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেকেই নিজেকে আঘাত করার মতো কাজ করছে। মহামারি দীর্ঘদিন স্থায়ী হওয়ায় তাদের মেজাজেও এর প্রভাব পড়ছে।
কর্মব্যস্ততা মানুষকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে উৎসাহ দেয়। এটি ভালো কাজ করতে ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে অনুপ্রেরণা দেয়। এর বিপরীতে মানসিক চাপ মানুষকে হতাশ করে তোলে। শিশুরা শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে তাদের আবেগই বেশি কাজ করে। গবেষণা অনুযায়ী, শিশুরা কোনকিছু শেখা, মনে রাখা, মনোযোগ দেওয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, সৃজনশীলতা, সম্পর্ক ইত্যাদিতে অনেক বেশি অবদান রাখে। তাই দীর্ঘমেয়াদী সুফলের কারণে স্কুল ও বাড়িতে সামাজিকতা শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি। এ নিয়ে অনেক গবেষণাও আছে।
অনেক বাবা-মা সন্তানদের সঙ্গে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন। এসব ক্ষেত্রে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলা বেশ কঠিন। আবার সন্তানদের এ বিষয়গুলো নিয়ে বাবা-মাকেই সামাজিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।
সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মা’র আলোচনা, ভাবের আদান-প্রদান খুবই জরুরি। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সন্তানরা তাদের কঠিন সময়গুলোতে বাবা-মাকে সমস্যার কথা জানাতে পারলে সমস্যাগুলোর সমাধানও অনেক সহজ হয়ে যায়।
সূত্র: সাইকোলজিটুডে ডটকম
সারাবাংলা/এসএসএস