বাগানবিলাস
২৩ এপ্রিল ২০২১ ১০:০০
ছাদে একটি পরিকল্পিত বাগান রয়েছে অথচ সেখানকার রেলিং ঘেষে বাহারি ফুলের একটি দুটি বাগানবিলাস নেই, নগরে এমন বাগান খুঁজে পাওয়া দুস্কর। প্রায় প্রতিটি বাগানেই রক্তলাল, গোলাপী কিংবা মিশ্রবর্ণের বাহারি ফুলের বাগানবিলাস থাকবেই। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের এই বাগানবিলাস আমাদের দেশে একসময় বাড়ির গেটেই বেশি দেখা যেতো। যার জন্য এটি বেশি পরিচিতি পেয়েছে গেট ফুল হিসেবে। আবার দেখতে রঙিন কাগজের মতো বলে কাগজ ফুল বা কাগজি ফুল নামেও ডাকা হয়।
কখনো ফুল কখনো পাতার অপূর্ব মিশেল এই বাগানবিলাস। এটি দ্রুত বর্ধনশীল জাত, ফলে অনেকটা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঝোপালো হয়। এই গাছের শাখা-প্রশাখাগুলোও শক্ত এবং কণ্টকময়। ছাদবাগানের জন্য গুল্মসদৃশ এ গাছের গড় উচ্চতা রাখা হয় ৩ থেকে ৫ ফুটের মধ্যে। বাগানবিলাসের শাখা-প্রশাখা অবনত থাকে। তাই ছাঁটাই না করা হলে নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে। তবে নিয়মিত বিরতিতে প্রয়োজন অনুযায়ী ছাঁটাই বা ট্রিমিং করার মাধ্যমে এ গাছকে ছোট-বড়, ডোয়ার্স কিংবা বনসাই করে রাখা সম্ভব। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বাগানবিলাস বাড়তে পারে। তবে অবশ্যই রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া লাগবে। ডাল কাটিং করে এর বংশ বিস্তার ঘটানো সম্ভব। কাটিং চারা রোপণের প্রায় এক বছরের মাঝে গাছে ফুল ধরে।
বাগানবিলাসের রয়েছে অসংখ্য বাহারি রং ও রূপের ফুল। এরমধ্যে আমাদের দেশে সাদা, লাল, গোলাপি ও হলুদ সহ প্রায় ষোল রংয়ের ফুল ফুটানো সম্ভব হয়েছে। গাছের সব শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ঘনভাবে ধরে। একটি ফুল থেকে অন্যটির দূরত্ব খুব কম।
জাতভেদে প্রায় সারা বছরজুড়েই বাগানবিলাস গাছে কমবেশি ফুল পাওয়া যায় । তবে দিনের আলো যখন কম ও রাতের অন্ধকার যখন বেশি তখনই এদের ফুল আসে। সাধারনত শীত থেকে বসন্ত পর্যন্ত বেশি পরিমানে ফুল ফোটে। বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টিপাতের কারনে বাগানবিলাস গাছে ফুলের থেকে পাতা বেশি থাকে। এ গাছের ধর্ম হলো, এটি যদি বেশি পানি পায় তাহলে সে ভাবে সে ভালো আছে। তখন গাছটি অধিক পরিমানে পাতা ও ডালপালা ছড়াতে থাকে। ফলে বর্ষায় এ গাছের ডালপালা বেশি বাড়ে। অন্যদিকে যদি বাগানবিলাস গাছের গোড়ায় পানি কম দেওয়া হয়, তাহরে তারা ভাবে তাদের মৃত্যুর সময় চলে এসেছে। তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ কলি ও ফুল দিতে থাকে। তাই একদম ভেজা ভেজা মাটি বাগানবিলাসের পছন্দ নয়। তাছাড়া গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমলে গাছের শিকড়ে ছত্রাক আক্রমন করে। ফলে গাছ মারাও যেতে পারে। মাটিতে পানি স্প্রে করে দিলে ভালো হয়। টব বা ড্রামে লাগানো হলে এর তলায় ভাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকাও জরুরি। সপ্তাহে ২/৩ দিন পানি দিলেই বাগানবিলাস গাছ ভাল থাকে। প্রতিদিন পানি দিলে আবার হিতে বিপরীত হতে পারে।
বাগানবিলাস গ্রীষ্ম প্রধান দেশের উদ্ভিদ হওয়ায় উষ্ণ অঞ্চলে থাকতে পছন্দ করে এবং দিনে অন্তত ৪-৫ ঘন্টা খাড়া রোদ বা স্করচিং সানলাইট পেলে গাছের ফুল উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায়। তবে শেষ বিকেলে যেহেতু কলিগুলো পাপড়ি মেলতে শুরু করে তাই এ সময়ের কড়া আলো তাদের পছন্দ নয়। আবার একদম হিম ঠান্ডাও তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। ফলে বাগানবিলাসের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাগান বিলাসে ২ ধরনের পোকার আক্রমন হয়, সুয় পোকা এবং সবুজ মাছি পোকা। সাবান পানি ২/৩ দিন পরপর পাতার উপরে ও নিচে জোরে জোরে স্প্রে করতে হবে যতদিন পোকা না চলে যায় । তবে পোকা দেখলেই হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা বা মেরে ফেলা উত্তম ।
সহজেই রুট হরমোন দিয়ে বাগানবিলাসের চারা করা যায়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে হাতের আঙ্গুল এর থেকে মোটা সাইজের ডাল কেটে ( ৪/৬ ইঞ্চি) রুট হরমোন দিয়ে মাটিতে লাগিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। এটি শিকড় ছাড়লে ১.৫ থেকে ২ মাস পর টবে লাগিয়ে দিতে হবে। কাটিং সব সময় গাছের গোঁড়ার দিকের ডাল থেকে নির্বাচন করতে হবে।
দেড় থেকে দুই বছর পর পর গাছ রি পটিং বা মাটি বদলে দিলে এ গাছ ভাল থাকবে এবং সে সময় গাছের ৭৫% শিকড় রেখে বাকি ২৫% ছেটে দিতে হবে। অবশ্যই ছোট শিকড় কাটা যাবে না, পেন্সিল এর মত মোটা এবং লম্বা ধরনের শিকড়গুলো কেটে দিতে হবে। দুইমাস পর পর গাছের ডাল ছেটে দিতে পারেন সুন্দর শেইপ দেবার জন্য। স্টেইনলেস ওয়্যার দিয়ে এ গাছের একটা সুন্দর আকৃতি সহজেই দেয়া যায়। ফুটন্ত বাগান বিলাস ফুলের সৌন্দর্য খুবই মনোরম যা সবার নজর কাড়ে। বাগান বিলাস ফুল রূপ সৌন্দর্যে জনপ্রিয় বলে নিসর্গবিদগণ একে অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট বা শোভাবর্ধনকারি গাছ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিন সেভার্স
সারাবাংলা/এসএসএস