Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদ হোক সুস্বাস্থ্যের ও আনন্দের

ডা. ঐন্দ্রিলা আক্তার
১৩ মে ২০২১ ১৬:০০

রোজার সময় টানা এক মাস ধরে দিনের বেলায় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থেকে সন্ধ্যা আর রাতে খাবার খাওয়ার ফলে শরীরের হজম প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। রোজার মাসে আমাদের ঘুমের সময় এবং দৈনিক রুটিনেও পরিবর্তন হয়। কিন্তু রোজা শেষে ঈদের দিন থেকে আমরা দিনের বেলায় খাবার খাওয়াসহ আবার পুরনো রুটিনে ফিরে যাই। এর ফলে একমাস পর শরীরকে আবার নতুন নিয়মের সাথে খাপ খাওয়াতে হয়। এসময় শরীরকে পরিবর্তিত নিয়মের সাথে খাপ খাওয়াতে আমাদেরকে সচেতনভাবে সাহায্য করতে হয়। সঠিক খাবার নির্বাচন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা শরীরকে পরিবর্তিত নিয়মের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞাপন

একমাস রোজার সময় সারাদিন না খেয়ে থেকে হঠাৎ করে ঈদের দিন একসাথে অনেক গুরুপাক এবং ভারি খাবার খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। বদহজম, অ্যাসিডিটি, গ্যাস, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাতলা পায়খানা এরকম নানা ধরনের পেটের অসুখ ঈদের আনন্দটাই নষ্ট করে দিতে পারে। কিন্তু এটাও সত্য যে, একমাস রোজা রেখে ঈদের দিন আমরা সবাই পছন্দের খাবারগুলো খেয়ে তৃপ্তি পেতে চাই। তাই ঈদের সময় খাবার মেন্যুগুলো যেন হয় মুখরোচক স্বাদের এবং পুষ্টিকর যা ঈদের সময় খাওয়ার তৃপ্তি মেটাবে আবার শরীর সুস্থ রাখতেও সাহায্য করবে। আসুন জেনে নেই ঈদের স্বাস্থ্যকর মেন্যুগুলো-

বিজ্ঞাপন

সকালের মিষ্টান্ন
ঈদের দিনের আনন্দটা শুরু হয় সকালে মিষ্টি খাবার খেয়ে। মিষ্টি খাবার খেতে হবে তবে সুস্বাস্থ্যের কথাও ভাবতে হবে। নানা রকম সেমাই, ফিরনি খেয়ে ঈদের সকাল শুরু করি আমরা। সকালটা শুরু হতে পারে স্বাস্থ্যকর মজাদার মেন্যু দিয়ে।

· রোজ শরবত
· দুধ আর নারকেল দিয়ে আটার তৈরি ভারমিচিলি সেমাই
· চাল আলমন্ড রোজ খির
· গাজরের হালুয়া
· খেজুর তিলের কেক বা রোল
· খেজুর আর নারকেল দুধের পুডিং
· বাদাম তিলের লাড্ডূ
· মিষ্টান্নের সাথে ঈদের সকালে এক বাটি দেশি ফল খেয়ে নিলে সারাদিনের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
· চায়ের তৃষ্ণা পেলে এক কাপ গ্রীন টি সকালটা সতেজ করবে।

খেঁজুরে থাকা ফ্রুকটোজ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই সকালের খাবারের শুরুতে একটি খেজুর বা খেজুর দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে নিলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া এড়ানো যায়। অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা এড়াতে উপরের খাবারের তালিকা থেকে যে কোন দুটি খাওয়া যেতে পারে।

দুপুরের মেন্যু
মিষ্টি খাবারের মূল উপাদানই হল কার্বোহাইড্রেট। সকালে যেহেতু মূল খাবারটাই থাকে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ তাই দুপুরে প্রোটিনের উপর জোর দেওয়া যায় অনায়াসে। দুপুরে পছন্দের ভারী খাবারগুলো পরিমাণমত বুঝে খেলে শরীরের উপর চাপও পড়ে না, আবার রসনার তৃপ্তিও হয়। সারা বছর আমরা নানা ধরনের মাছ খাই তাই ঈদে মাংসের বিভিন্ন মেন্যু তৈরি করা যায়। নিচে কয়েকটি মেন্যুর তালিকা দেওয়া হল। এদের মধ্যে থেকে যেকোন একটি বেছে নিতে পারেন।

· পোলাও , দেশি মুরগীর রোস্ট, মুরগির সাদা কোরমা, সালাদ
· চিকেন বিরিয়ানি, মাটন কাবাব, সালাদ
· কাচ্চি বিরিয়ানী, সালাদ
· খাওয়া শেষে এক কাপ টক দই বা লেবু-পুদিনার শরবত খেলে খাবারগুলো ভালভাবে হজম হবে।

সারা বছর খাবার তালিকায় সবজি থাকে তাই ঈদের দিন সবজি খেতে ইচ্ছে করে না। সবজির চাহিদা পূরণে সালাদ রাখলে শরীরে আঁশজাতীয় খাবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাবার হজম হয় ভালভাবে এবং কোষ্ঠবদ্ধতা হয় না। চল্লিশের কম বয়সীরা দুপুরে গরুর মাংস দিয়ে তৈরি কোন খাবার খেতে পারে। দুপুরের খাবার ভারী হওয়ায় যেকোন এক ধরনের খাবার মেন্যু খেলে শরীর অতিরিক্ত ক্যালরির চাপমুক্ত এবং হালকা থাকবে।

রাতের খাবার
ঈদে সারাদিন নানা রকম ভারী খাবার খাওয়া হয় বলে রাতের খাবার হালকা হলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমতে পারে না। স্বাদও মিটবে আবার পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে এমন কিছু রাতে খেতে পারেন। যেমন,

· বাটার চিকেন আর নান রুটি
· হালিম, তন্দুরি
· চিকেন মোমো
· নিহারি, কাবাব এবং সালাদ

এগুলো থেকে যেকোন একটি খাবার মেন্যু রাতে খেলে হজম ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ পড়বে না। শরীরের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে আবার ঈদে মজাদার খাবার খাওয়ার তৃপ্তিও উপভোগ করা যাবে।

যেসব নিয়ম মেনে চললে ঈদ হবে সুস্বাস্থ্যের ও আনন্দের-

  1.  ঈদের দিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম লেবু পানি বা ভিনেগার পানি পান করে দিন শুরু করলে হজম ব্যবস্থা ভালো থাকবে।
  2. ঈদের আনন্দ আমরা তিন থেকে চারদিন উপভোগ করি। তাই প্রথমদিন বেশি না খেয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ বাড়ালে শরীরের জন্য খাপ খাওয়ানো সহজ হয়। ঈদের প্রথম দিন পরিমাণে কম খাওয়া ভালো।
  3. একসাথে অনেক খাবার না খেয়ে দুই থেকে তিন ঘন্টা বিরতি দিয়ে দিয়ে পছন্দের খাবারগুলো খেলে হজমব্যবস্থা খাবারগুলো হজম করার সুযোগ পায়।
  4. মিষ্টি খাবারের মেন্যুগুলো সাদা চিনির বদলে গুড় বা গুড়ের চিনি দিয়ে রান্না করলে মজাদার হয় আবার স্বাস্থ্যমানও বজায় থাকে।
  5. প্রতিবেলা খাওয়ার পর দশ মিনিট বজ্রাসন করলে অথবা হাঁটাহাটি করলে খাবার সহজে হতে পারে। এবং শরীরে বাড়তি মেদ জমে না।
  6. খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পর পর পানি খেয়ে নিলে হজম ভালো হবে এবং কোষ্ঠবদ্ধতা, পাইলসের সমস্যা হবে না।
  7. সফট ড্রিংকস না খেয়ে ঘোল পুদিনা বা লেবু পুদিনার শরবত খেলে হজমও ভালো হবে শরীরও বিষক্রিয়া মুক্ত থাকবে।
  8. মাংসের মেন্যুগুলোর চর্বির অংশ বাদ দিয়ে খাওয়া এবং ঝোল কম খাওয়া।
  9. মাংস দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়ার পর ডেজার্ট না খেয়ে ঘোল বা লেবু পানি খেলে শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ঈদের দিনের যোগব্যায়াম
খাবারের তৃপ্তি মেটাতে ঈদে সারাদিন ভারি ক্যালোরির খাবার খাওয়া হয়। তাই ক্যালরি বার্ন করাটাও জরুরি হয়ে পড়ে। কয়েকটি সহজ ইয়োগা আসন করলে খাবার যেমন সহজে হজম হয় তেমনি ক্যালোরি পোড়ানোও সহজ হয়। ফলে রক্তচাপ, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। সব বয়সী মানুষের জন্য সহজ কিন্তু খুবই উপকারি আসনগুলো হলো-

· বজ্রাসন
· শশাঙ্গাসন
· ক্যাট এন্ড কাউ পোজ
· পবনমুক্তাসন
· সেতুবন্ধাসন
· সুপাইন টুইস্ট

দুপুরে খাওয়ার তিন থেকে চার ঘন্টা পর ঈদের দিন বিকেলে এককভাবে বা পরিবারের সবাই মিলে এই আসনগুলো প্র্যাকটিস করলে শরীর ঝরঝরে সুস্থ সচল থাকবে।

ঈদ উদযাপনে উপরের নিয়মগুলো মেনে চললে ঈদের আনন্দকে উপভোগ করা যাবে মন ভরে। যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ রয়েছে তারা উপরের খাবার মেন্যুগুলো থেকে পছন্দের খাবার বেছে খাবেন তবে অবশ্যই পরিমিত মাত্রায়। তাহলে অসুস্থ হবার ঝুঁকি থাকবে না। আসুন পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত পরিমিত খাবার খাই, সুস্থ থেকে ঈদ আনন্দ উপভোগ করি। ঈদ মোবারক।

সারাবাংলা/আরএফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর