Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হুট বলতেই সীতাকুন্ড- পাহাড়ে সমুদ্রে একদিন (২য় পর্ব)


২৭ মার্চ ২০১৮ ১৩:৪৫

আব্দুল্লাহ আল মামুন এরিন ।।

পাহাড় চূড়ার সৌন্দর্য অবলোকন তো শেষ। এবার পালা নিচে নামার। হাতে বেশি সময় নাই ব্যপারটা বারবার খোঁচাচ্ছিল। মন তো কিছুতেই নামতে চায়না! মনে হচ্ছিল এই পাহাড়ের চূড়ায় আকাশের কাছাকাছি একটা ছোট্ট ঘর বানিয়ে থেকে যাই আজীবনের জন্য। তা তো আর সম্ভব না! তাই এক পর্যায়ে নামতে শুরু করলাম। এবার পালা বিরুপাক্ষ মন্দির যাওয়ার। উঠতে যেমন কষ্ট হচ্ছিল নামার সময় কষ্টটা চলে আসল অর্ধেকে। পঁচিশ মিনিটের মত হেঁটে চন্দ্রনাথ মন্দির থেকে নেমে আসলেই বিরুপাক্ষ মন্দির। কিছুটা সময় কাটিয়েছিলাম মন্দিরে । পাশাপাশি ২ টা মন্দির । ছোট্ট মন্দির দুইটা পাহাড়ের চূড়ায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

বিজ্ঞাপন

তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে ভেবে মন এতটাই খারাপ হচ্ছিল যে রীতিমত বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বিরুপাক্ষ মন্দির ত্যাগ করে নেমে আসলাম নীচে। নীচে নেমে আবার ফিরে দেখলাম সেই দূর থেকে ছোট্ট দেখানো চন্দ্রনাথ মন্দিরের দিকে। মনে হচ্ছিল পাহাড়চূড়া যেন ফিরে যেতে ডাকছে। কিন্তু ফেরার তো উপায় নাই। মন এখানে পড়ে থাকলেও ফিরে যেতে হবে নাগরিক ব্যস্ততায়। পাহাড়ে উঠতে নামতে সব মিলিয়ে সময় লাগলো প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা। নেমে একই পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আবার ফিরে এলাম সীতাকুন্ড রেল স্টেশনে।

এবার পাহাড়ের মায়া ত্যাগ করে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে হবে, এমনই ছিল পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী যেতে হবে গুলিয়াখালী সী বীচ। সীতাকুন্ড বাজারের মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে গেলাম নামাপাড়া। সেখান থেকে সি এন জি তে গুলিয়াখালি সী বিচ। তিরিশ টাকা করে দুজনের ভাড়া পড়ল ষাট টাকা।

গুলিয়াখালি সী বিচ নেমে দেখলাম ‘সায়েদ বিরিয়ানী হাউস’ নামেক একটাই খাবার হোটেল। বড় এক ডেক এ মাটির চুলায় রান্না হচ্ছে বিরিয়ানী যার গন্ধে ম ম করছিল চারপাশ। খাবারের গন্ধে ক্ষুধা যেন দ্বিগুন হয়ে গেল। দেরী না করে হাত ধুয়ে খেতে বসে গেলাম দুজন। সত্তুর টাকা করে দুই প্লেট সায়েদ ভাইয়ের বিরিয়ানীর অতুলনীয় স্বাদ। সেই সাথে পশ্চিম দিক থেকে আসা সুমুদ্র ছোঁয়া ঠান্ডা বাতাস আর তাদের আত্মীয়তা ছিল মনে রাখার মত।

বিজ্ঞাপন

খেয়েদেয়ে আর যেন তর সইছে না। কখন সমুদ্রে ঝাপ দিব? দৌড়ে গেলাম বিচে। যেয়েই হতাশ হয়ে গেলাম সাগরে জোয়ার নেই দেখে। নেমে গেছে পানি। স্থানীয় এক ছেলের কাছে জিজ্ঞেস করে জানলাম জোয়ার আসবে বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে। একদিকে সারারাত ঘুমহীন চোখ তার পর মাত্র পেটে গেছে খাবার দুইয়ে মিলে শরীর চাইছে আরামের একটা ঘুম। তখন বাজে সাড়ে ১২ টা। সুমুদ্রের বাতাসে সী বিচে ছড়ানো ছিটানো বিভিন্ন ধরনের গাছের ছায়া শুয়ে ঘুমিয়ে গেলাম দুজন। আহা সে কি ঘুম!

ঘুম ভেঙ্গে গেলো ঠিক ২ টায়। ঘুম থেকে উঠেই ঘড়িতে না তাকিয়ে আগে তাকালাম সমুদ্রে জোয়ার এসেছে কিনা তা দেখতে। তখনও জোয়ার আসেনি। তবে দলে দলে পর্যটকরা ভীড় জমাচ্ছে সমুদ্রস্নানের জন্য। সময় যেন কাটছে না কিছুতেই। ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। চারপাশে ছড়ানো ছিটানো গাছ তার মধ্যে জোয়ারের পানি এসে কিছুটা জায়গা দখল করে নিয়েছে।

জোয়ার চলে গেলে জায়গাগুলোর খালি গর্ত থেকে যায়। ঘাসে মোড়ানো গাছে ঘেরা সাগর তীর যেন আর এক অপরুপ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। হাঁটার সময় খালি পায়ে সুরসুরি দিচ্ছে সবুজ ঘাস। পাশের খালের সাথে সমুদ্রের সংযোগ তাই সেখানকার পানিও নিয়ে গেছে সমুদ্র। পানিশূন্য খালে কয়েকটা স্পিডবোট ধরণের নৌকা কাঁদার উপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, কখন আসবে জোয়ার আর ভাসবে তারা সেই অপেক্ষায়। মাঝে মাঝে কয়েকটা সাদা বক উড়ে যাচ্ছে শূন্য খালের এপার থেকে ওপারে। চারপাশে কাক আর বকের রাজত্ব। এভাবে চারদিকের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেই কেটে গেল অনেকটা সময়।

তখন বাজে সাড়ে চারটা। সূর্যটা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। জোয়ারের পানি কিছুটা এগিয়ে এসেছে তবুও নাগালের বাইরে। আমার আর তর সইছে না জুতা খুলে নেমে গেলাম কাঁদায়। সূর্যের তাপে কাঁদার উপরের অংশ গরম থাকলেও পা যখন কাঁদার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল, একধরনের ঠান্ডা প্রশান্তি লাগছিল। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামছে আর জোয়ারের পানি কাছে আসতে শুরু করেছে। পাশের খালটা যেন জীবন ফিরে পেল বলে মনে হল। সূর্য তার সব আলো গুটিয়ে নিচ্ছিলো ক্রমেই।

পানিতে পড়া আলোকরশ্মি ফিরে গেলো সূর্যের দেশে। নামল সন্ধ্যা। সাগর তীরের সেই সন্ধ্যা। আকাশে নীল হলুদ লাল কয়েক স্তরের রঙ। আমি ঠিক সন্ধায় নেমে গেলাম সমুদ্রে, ভেজালাম শরীর এক শীতলতায়। ফিরে আসতে ইচ্ছে কি হয় এমন সন্ধায়? তবুও ফিরে আসতে হয়। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিল আজকের রাতটা এই সাগর পাড়ে কাটিয়ে দিতে পারলে বেশ হত।

জিনিসপত্র গুছিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। গুলিয়াখালি বিচ থেকে আবারো সিএনজি করে সীতাকুন্ড বাজার যেতে দুজনের খরচ পড়ল তিরিশ টাকা করে ষাট টাকা। সীতাকুন্ড বাজার থেকে বাসে করে অলঙ্কার পর্যন্ত ষাট টাকা, অলঙ্কার মোড়ে নেমে মার্কেট দুজন বিশ টাকা। এরপর স্টেশনের গেট থেকে দুজন পঁচাত্তর টাকার মধ্যে রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করলাম। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা দুজনের দুটো টিকেট কিনলাম দুইশো বিশ টাকায়। এরপর অপেক্ষার পালা ট্রেনের জন্য। ট্রেন আসবে সাড়ে দশটায়। কিছুক্ষন স্টেশনে হাঁটাহাঁটি করতে করতেই ট্রেন চলে এল। আবার ও দৌড়ঝাঁপ করে ট্রেনে উঠলাম। সারারাত আর সারাদিনের ঘুরাঘুরি আর মনের প্রশান্তি টাই বিরাজ করছিলো মন ও শরীর জুড়ে। সকাল সাতটায় আবার ঢাকা পৌঁছে গেলাম। আবার শুরু হল রোজকার ব্যস্ততা। বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীর আর ফ্রেশ মন নিয়ে আবারও অফিসে চলে গেলাম। এই ছিল আমার এক দিনে পাহাড় ও সমুদ্রে ঘোরার গল্প ।

খরচ টা মিলিয়ে নেই আবার 

হুট বলতেই সীতাকুণ্ড- পাহাড়ে সমুদ্রে একদিন (পর্ব-১)

লেখক- সংবাদকর্মী, সারাবাংলা ডট নেট

ছবি- লেখক

সারাবাংলা/আরএফ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর