বর্ষাই গাছের ভরসা
২৫ জুন ২০২১ ১১:৩৮
প্রকৃতিতে বর্ষা আসে গাছগুলোকে ধুয়ে মুছে নবরূপে সাজাতে। এক পশলা বৃষ্টির পর গাছের দিকে তাকিয়ে লতাপাতাগুলোর স্নিগ্ধ সবুজ সতেজতা দেখে যেন দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে এসময় ঘন ঘন বৃষ্টিতে অনেকেরই ছাদ বাগানের অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়ে। বিশেষ করে একটানা বৃষ্টিতে গাছের টব, ড্রাম কিংবা বেডগুলোর তলায় পানি জমতে শুরু করে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে টবের তলায় পানি নিষ্কাশনের ছিদ্র রাখা হলেও এ সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কাদা জমে ছিদ্রগুলো সরু কিংবা বন্ধ হতে শুরু করে। ফলে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি ভালোভাবে নিষ্কাশিত হতে পারে না। অনেকেই হয়তো দেখেছেন বৃষ্টিতে আপনার বাগানের তেমন কোন বাহ্যিক ক্ষতি হয়নি কিন্তু গাছের পাতা ও কাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে।
এর মূল কারণ বৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত পানিতে গাছ অথবা মাটি ভিজে গেছে। আবার অতিরিক্ত তাপের কারণে পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে গাছের সাময়িক ডিহাইড্রেশনেরও কারণ হয়ে গেছে। পাশাপাশি মাটি বেশি ভেজার কারণে মাটিতে এয়ার পকেট বা বায়ুকুঠুরিগুলা জ্যাম হয়ে বাতাস চলাচল ব্যহত হয় এবং বাতাসের অভাবে গাছের শিকড় শক্তিহীন হয়ে গাছকে দুর্বল করে দেয়। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য একটু সময় নিয়ে গাছের গোড়ার মাটি নিড়িয়ে অথবা আলগা করে দিন। এর ফলে গাছের গোড়ায় বাতাস চলচলের রাস্তা হবে এবং সুপ্ত আগাছাগুলো জন্মানো বা বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে না। আর এ সময় মাটি কমে গেলে গাছের গোড়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি উঁচু করে ঢিবি করে দিন। এতে গাছের গোড়া পোক্ত থাকবে এবং পানি জমারও সুযোগ পাবে না। তবে বর্ষাকালে গাছের গোড়ার মাটি যেহেতু নরম থাকে তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে এ সময়ে ছাদের গাছ নাড়াচাড়া না করাই ভালো।
এসময় হঠাৎ ঝড়ো বাতাস হলে ছাদ বাগানের বড় ছোট মিলিয়ে প্রায় সব ধরণের গাছেরই ক্ষতি হতে পারে। ড্রামে বা বড় আকারের পাত্রে লাগানো বড় গাছগুলো পাত্রসহ উল্টে ডালপালা ভেঙ্গে যেতে পারে। আবার ছাদের রেলিং নিচু হলে রেলিং ঘেসে রাখা গাছগুলো প্রচণ্ড বাতাসে নিচে পড়ে বড় রকমের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই যাদের ছাদের রেলিং নিচু তারা এই ঝড়ো মৌসুমে গাছগুলোকে রেলিং থেকে নিরাপদ দুরত্বে সাজিয়ে রাখতে পারেন।
আবার অনেকেই ছোট ছোট টব, বাটি ও ঝুলনা টবগুলো রেলিংয়ের উপর সাজিয়ে রাখেন। যেগুলো সামান্য বাতাসেই পড়ে গিয়ে বিপদ বাড়াতে পারে। কাজেই এই মৌসুমে রেলিংয়ের উপরের টবগুলো ছাদে নামিয়ে রাখা যেতে পারে অথবা বিকল্প উপায়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা যেতে পারে।
নতুন চারাগাছ লাগানোর উত্তম সময়টিও এই বর্ষাকাল। ফলে এ সময় নানান জাতের ফল গাছ দিয়ে আপনার ছাদবাগানটি পরিপূর্ণ রূপে সাজিয়ে তুলতে পারেন। ডোয়ার্ফ জাতের আম, পেয়ারা, কুল, লেবু, আমড়া, করমচা, ডালিম, কমলা, মাল্টা, আনারস, কদবেল, ড্রাগন ফল, প্যাশন ফল, তেঁতুল, জলপাই, কলা, জামরুল ইত্যাদি গাছের চারা রোপণ করে সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার সখের ছাদবাগান । তবে এসব ফলগাছের মধ্যেও ভাল মন্দ মিলিয়ে রয়েছে নানান জাত।
ছfদবাগানের জন্য উপযোগী গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে বারি আম, বাউ আম, বারি পেয়ারা, ইপসা পেয়ারা, থাই পেয়ারা, বাউ কুল, আপেল কুল, বারি লেবু, বাউ কাগজি লেবু, বারি আমড়া, বাউ আমড়া, থাই আমড়া, থাই করমচা, দেশি উন্নত ডালিম, বারি কমলা, বারি মাল্টা, লাল ও সাদা ড্রাগন ফল, বারি প্যাশন ফল, থাই মিষ্টি তেঁতুল, হাইব্রিড জলপাই, টিস্যু কালচারের সাগর কলা, বাউ জামরুল, নাশপাতি জামরুল, আপেল জামরুল, ইত্যাদি।
পাশাপাশি মসলা জাতীয় গাছের চাষও হতে পারে এই সময়ে। বর্ষাকালে ছাদ বাগানে রোপনের জন্য উপযোগী মসলা জাতীয় গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে- মরিচ, আদা, গুয়া মরিচ, পুদিনা পাতা, ধনিয়া পাতা, রসুন, পার্সলে, লেমন ঘাস ইত্যাদি। দু-চারটি ওষধি গাছ দিয়েও ছাদবাগানের শোভা বাড়াতে পারেন। ছাদবাগানের জন্য উপযোগী ওষধি গাছগুলির মধ্যে রয়েছে অমৃত বা রংবিলাস জাতের আখ, স্টিভিয়া, ঘৃতকুমারি, তুলসি, কালমেঘ, পাথরকুচি, গাইনুরা, সজিনা ইত্যাদি। এ সময় ছাদবাগানে নতুন চারা রোপণ করলে তা দ্রুত পাত্রের সাথে মানিয়ে নেয় এবং আশানুরূপভাবে বাড়তে থাকে। তাছাড়া এ সময়ে নার্সারিগুলোতে চারার আধিক্যও থাকে বেশ। ফলে ছাদে একটি পরিকল্পিত বাগান সৃজন করতে চাইলে বর্ষাকাল হতে পারে নতুন চারা রোপনের উপযুক্ত সময়।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিন সেভার্স
সারাবাংলা/এসএসএস