বর্ষা শেষে গাছের যত্নে
২৭ আগস্ট ২০২১ ১০:০০
বর্ষার ঝুম বৃষ্টি থামিয়ে ফিরেছে শরৎ। ফলে গাছের গোড়ার নরম রসালো মাটিগুলো এ সময় থেকে আবারো গাছকে আঁকড়ে ধরে আস্তে আস্তে শক্ত হতে শুরু করবে। পাশাপাশি শরতের পর হেমন্তের শুরুতেই গাছেরা পেতে শুরু করবে শীতের আগমনী বার্তা। ফলে বর্ষা ও শীতের মাঝামাঝি এ কয়েকমাস গাছপালার যথাযথ যত্ন নিতে পারলে একদিকে বর্ষার বৃদ্ধি ও সতেজতা যেমন ধরে রাখা যায় পাশাপাশি শীতের জড়তা কাটিয়ে উঠতেও তা বেশ সহায়ক হয়। ফলে বর্ষা চলে গেলেই মাটি কিছুটা নরম থাকা অবস্থাতেই গাছের জন্য দরকার হয় বাড়তি যত্ন আর বাড়তি খাবার। তবে সবার আগে দরকার বর্ষার অতি বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া টবের উপরিভাগের মাটি ভরাট করে দেওয়া। আর বর্ষায় মাটির উপরিভাগ ধুয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সময় উপরিসস্তরের সার ও খাদ্য উপাদানও কমে যায় বহুলাংশে। আর এজন্যই মাটির সঙ্গে দরকার বাড়তি খাবারের। কারণ বর্ষায় বাড়ন্ত সজিব সতেজ গাছ এ সময় চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি খাবার, পুষ্টি ও যত্ন না পেলে, দ্রুত খারাপ হয়ে যাবে আর রোগ বালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণে সহনশীলতা হারাতে থাকবে।
তাই এখন টবে মাটি ভরাটের পরপরই ফুল অথবা ফল গাছের জন্য দরকার উপযোগী ব্যালান্স ডায়েট। পাশাপাশি সবজি গাছের জন্যও সরবরাহ করতে হবে বিশেষ খাবার। সচরাচর পাওয়া যায় এমন প্রাকৃতিক ও জৈব উপকরণ যেমন, গোবর, কম্পোস্ট, খোল, হাড়ের গুড়ার যথাযথ মিশ্রণেই তৈরি করা যেতে পারে এ সময় গাছের জন্য কার্যকরী এমন বিশেষ খাবার।
গোবর সার ১ কেজি, ভার্মি কম্পোস্ট ১ কেজি, সরষের খোল ৩০০ গ্রাম, নিম খোল ৩০০ গ্রাম, এবং বাদাম খোল ৩০০ গ্রাম, সঙ্গে হারের গুঁড়া ২৫০ গ্রাম এবং শিংকুচি ২৫০ গ্রাম। এসব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে সুষম জৈব খাবার। মিশিয়ে নেওয়ার পর খাবার এবার টবে যথাযথ প্রক্রিয়ার ও সঠিক পরিমাণে প্রয়োগ করার পালা। সাধারণত এক্ষেত্রে গাছের টবের আকারের উপর ভিত্তি করে খাবার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করা যেতে পারে। টব যদি ৮ ইঞ্চি হয় তাহলে মিশ্রণ লাগবে ৫০ গ্রাম, টব যদি হয় ১০-১২ ইঞ্চি তাহলে মিশ্রণ লাগবে ১০০ গ্রাম, আবার টব যদি হয় ১২-১৪ ইঞ্চি বা তার থেকে বড় টব হলে মিশ্রণ লাগবে ১৫০-২০০ গ্রাম। এই সার যদি আপনি বেশি করেও বানিয়ে থাকেন, তবুও সমস্যা নেই, এই সার অনেক দিন ঘরে সংগ্রহ করেও রাখতে পারবেন। আবার যদি আপনার সংগ্রহে গোবর সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট এর যেকোনো একটি না থাকে তাতে খুব একটা সমস্যা নেই, যেকোনো একটা সার নিয়েও করতে পারবেন, তবে যেটা নিবেন সেটা আগের থেকে দ্বিগুণ নিতে হবে। এছাড়া যদি আপনার সংগ্রহে সরিষার খোল অথবা বাদামের খোল এর যেকোনো একটি না থাকে তাহলে যেটা আছে সেটা একইভাবে আগের থেকে দ্বিগুণ পরিমাণে মিশিয়ে নিতে হবে। ফুল গাছের জন্যও এই একই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে হারের গুঁড়োটা থাকতেই হবে।
ফুল, ফল, সবজি ছাড়াও আরো কিছু গাছ থাকে যেগুলোতে না হয় ফুল না হয় ফল.। এই গাছগুলোকে বলা হয় অরণামেন্টাল প্লান্ট যার সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে ডালপালা আর পাতায়। বর্ষার পর এইসব গাছের জন্য মিশ্রণ তৈরি করতে নিতে হবে ভার্মি কম্পোস্ট ১.৫ কেজি, নিম খৈল ২৫০ গ্রাম এবং হাড়ের গুঁড়া ২৫০ গ্রাম। সবগুলোকে ভালো করে মিশিয়ে টবের সাইজ এবং গাছের আকার অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে। তবে সার প্রয়োগ করার আগে কোন সার এ কি কি উপাদান আছে এবং কোন উপাদান কি কাজে লাগে তা জেনে নিতে পারলে আরো ভালো হয়।
গোবর সার বা পাতা পচা সার এ আছে নাইট্রোজেন যা পাতার বৃদ্ধির জন্য দরকার। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে প্রচুর নাইট্রোজেন থাকে যা পাতার বৃদ্ধি ও সজিবতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু বর্ষার পর শরতে তেমন বৃষ্টিপাত হয়না। ফলে এ সময় পাতার বৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার খুব কার্যকরী। আর পাতার বৃদ্ধি হলে গাছের ও বৃদ্ধি হয়। পাশাপাশি গোবর বা পাতা পচা সার প্রায় সব উপাদান ই অল্প পরিমাণে যোগান দেয়। ভার্মি কম্পোস্ট এ গাছের অত্যাবশ্যকীয় ১৬টি উপাদানের ১০টিই আছে। উপাদান সমুহ হলো নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম প্রভৃতি। সরিষার বাদামের খৈল এ থাকে ৩৫-৪০% প্রোটিন। ৫ শতাংশ প্রাকৃতিক তেল এবং এন পি কে। এছাড়াও অন্যান্য অনু খাদ্যের মধ্যে আছে অর্গানিক ম্যাগনেসিয়াম, সালফার,ম্যাঙ্গানিজ এবং জিংক। নিম খৈল হলো অর্গানিক এন পি কে এবং কীটনাশক। নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও এয়ে আছে ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, আইরন, কপার সালফার, জিংক প্রভৃতি। গাছকে রোগ ও পোকামুক্ত রাখতে নিখৈল দারুণ কার্যকর। আর হাড়ের গুড়া ও শিংকুচি হলো ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উৎস।
তবে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার। গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগ করার দুই তিন আগে সার বানিয়ে রাখবেন তারপর তৈরি সার একটি পাত্রে ভরে ছায়া যুক্ত স্থানে রাখবেন। সার প্রয়োগ করবেন বিকালের দিকে। প্রয়োগের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না হয়। বরং কম হলে সমস্যা নেই। সার দেওয়ার সময় গাছের গোড়ার মাটি খুচিয়ে দিবেন। সার প্রয়োগের পর টব ভর্তি করে পানি দিবেন। চাইলে এই সার প্রতি মাসেই একই পরিমানে প্রয়োগ করতে পারেন। যেসব গাছ সবুজ পাতায় ভরে থাকে কিন্তু ফুল বা ফল ধরে না সেসব গাছে নাইট্রোজেন জাতীয় সার একেবারেই দেওয়া যাবেনা। দিতে হবে ফসফরাস ও পটাশ সার। এভাবে গাছের যত্ন নিলে দ্রুতই গাছের পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিন সেভার্স
সারাবাংলা/এসবিডিই
আহসান রনি গ্রিন সেভার্স ছাদে সবজি চাষ বর্ষা শেষে গাছের যত্নে সবজি চাষ