Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনলাইন ফোবিয়ার বেড়াজালে একাকীত্বতা

রিফাত হোসেন
৩ এপ্রিল ২০২২ ১৫:২৫

ফোবিয়া হলে এক ধরনের ভয় বা মানসিক অবস্থা। যা অতি সামান্য বিষয়েও যে কারো মধ্যে থাকতে পারে। আমাদের অনেকের তেলাপোকা দেখলে ভয় হয় এতে সাধারণত আমাদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটে। আবার অনেকের অন্ধকারে চলার সময় আচমকা মানুষ দেখলে ভয়ে কাতরাতে থাকে। এসব কিছুর ভয় বা মানসিক অবস্থা হলো এক ধরনের ফোবিয়া। ফোবিয়া অতি সামান্যই কারো সঙ্গে জন্মগতভাবে থাকে। বেশির ভাগই ফোবিয়া জন্মগত না। কোন বিষয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ার বা ভয় পাওয়ার পিছনে অতীতের কোনো ঘটনা নিশ্চিত ভাবে জড়িত থাকে। যে জিনিসটাকে মানুষ ভয় পায়, তার সঙ্গে অতীতের কোন ঘটনার সাথে মিলিয়ে সে এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে। আর সেই মানসিক যন্ত্রণা থেকে তৈরি হওয়া আতঙ্ককে ফোবিয়া বলে।

ফোবিয়া বিভিন্ন রকমের হতে পারে। মানুষের আচরণ ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে ফোবিয়ার ধরনের ভিন্নতা আসে। হাইড্রোফোবিয়া, ট্রাইফোবিয়া, হিমোফোবিয়া, জেনোফোবিয়া, অ্যাগ্রোফোবিয়া, মনোফোবিয়া, রক্তভীতি, তেলাপোকাভীতি, ইনজেকশনভীতি ও একাকীত্বভীতি হলো উল্লেখযোগ্য কিছু ফোবিয়া। এই ফোবিয়াগুলি কমবেশি সব মানুষের মাঝেই বিদ্যমান থাকে।

মনোফোবিয়ার আদলে বর্তমানে একাকীত্বভীতি একটি চরম পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। একাকিত্ব হলো একটি নীরব ঘাতকের ন্যায়। একাকীত্ব নামক এই ঘাতকের ছোঁয়া কমবেশি সবারই থাকে। কিন্তু যখন একাকীত্বের ছোঁয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়; তখন শুরু হয় বিষন্নতা, হতাশা, অস্বস্তি বোধ ও সংকোচ বোধের মতো মানসিক ও শারীরিক অবস্থার। যা মানুষকে দিনদিন একঘেয়েমির অধঃপতনে নিয়ে যায়। একসময় এই মানসিক অবস্থা গুলোর দীর্ঘস্থায়িত্বতা রূপ নেয় শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ অনুভব, হাত-পা ব্যাথা, মাথাঘোরা, বমিবমি ভাব ইত্যাদি শারীরিক অসুস্থতায়। বাহ্যিকভাবে অনেকসময় একাকীত্বে ভোগা মানুষ শারিরীকভাবে অসুস্থ হয় না। শারিরীকভাবে নিরাপদ বোধ করলেও, মানসিকভাবে ঠিকই তাঁরা ভয়ের মধ্যে থাকেন।

নীরব ঘাতক এই ফোবিয়া থেকে বাঁচতে মানুষ আজকাল বেঁচে নিচ্ছে অনলাইন-সোশাল মিডিয়াকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে ব্যবহার করে মানুষ একাকীত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রাকৃতিকতার অভাবে মনোফোবিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে একাকীত্বকে মোচন করা সব মানুষের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। একাকীত্বের প্রভাব এবং সাথে অনলাইন ফোবিয়ার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এই দুই এ মিলে মানুষ চরম বিষাদ এবং বিষণ্নতায় ভুগছে। এক সময় গিয়ে এই বিষণ্নতা রূপ নিচ্ছে আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর কাজে।

অনলাইন নির্ভরতা একাকীত্বকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। অটোফোবিয়া বা মনোফোবিয়ার প্রভাবে মানুষ যতই একাকীত্ব ঘোচানোর চেষ্টায় অনলাইন নির্ভরতা বাড়াচ্ছে ততই একাকীত্ব তার আরো খোলস পাল্টাচ্ছে। তাই একাকীত্বকে দূর করার জন্য সবার আগে আমাদের অনলাইন নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। জরীপে দেখা গেছে, মানুষ করোনাকালীন ঘরে থাকার কারণে অনলাইন নির্ভরতা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই করোনাকালীন মানুষের আত্মহত্যার পিছনে কারণ দেখলে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে বিষণ্নতা এবং একাকীত্বের কারণে। অনলাইন বা সোশাল মিডিয়া নির্ভরতা থেকে মানুষ এখনো পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি। যার দরুন একাকীত্বের পিছুটান মানুষকে ছাড়ছে না।

অনলাইন নির্ভরতা কমিয়ে আনা ছাড়াও একাকীত্ব দূর করার জন্য আরো কিছু উপায় রয়েছে। সেগুলো হলো-
১. নিজেকে জানা: ভীতিকে কাছে না এনে আগে নিজেকে নিয়ে একটু ভাবুন। আপন সত্বা নিয়ে ভাবলে যেকোনো সমস্যাই সমাধান করা যায়।
২. খেলাধুলা করা: একাকীত্ব কমিয়ে আনার জন্য অনলাইন নির্ভরতা কমিয়ে খেলাধুলার প্রতি একটু মনোযোগী হওয়া। সাথে ব্যায়ামও করা যায় যা রাগ, দুঃখ, হতাশাকে কমিয়ে দিবে।
৩. বাড়তি চাপ না নেয়া: ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ ইত্যাদির বাড়তি চাপ না নেয়া।
৪. নিজের শখ লালন করা: বিষণ্নতা ও হতাশা থেকে বাঁচতে প্রয়োজন নিজের যা শখ রয়েছে তা লালন করা। বাগান করা, সাইক্লিং করা ইত্যাদি লালন করা যায়।
৫. প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো: সমুদ্র, পাহাড় বা ধারের কাছের কোনো পার্কে যেকোনো জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন। এটি আপনাকে একাকিত্ব দূর করতে কাজ করবে।
৬. পরিবার বা বন্ধুদের সাথে অনুভূতি শেয়ার করা: নিজের মনকে হালকা করতে প্রয়োজন পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের সাথে নিজের অনুভূতি শেয়ার করা। এতে একাকীত্বের বোঝা হালকা হয়।

উপরোল্লিখিত উপায়গুলো ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার ফোবিয়ায় আক্রান্ত বা একাকীত্বে থাকা ব্যক্তির জন্য উপায়গুলো অর্থহীনও বটে যদি না তার পরিবার, সমাজ বা বন্ধুবান্ধব ঐ ব্যক্তিকে সময় বা সাপোর্ট না দেয়। পরিবার-বন্ধুবান্ধব শুধু অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে খবরাখবর নেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। নিকটাত্মীয়দের উচিত তাদের পরিবারের সকলকে একান্তে সময় দেয়া। তাদের সাথে কথোপকথন ধারাবাহিক রাখা। প্রত্যেকের উদারপন্থী মনমানসিকতা এই কাজকে আরো অনেক সহজ করে দিবে।
আত্মহত্যার মতো ঘৃণ্য কাজ কখনো মানুষের সর্বময় সমাধান হতে পারে না। আবার আত্মহত্যার জন্য দায়ী মনোফোবিয়া বা একাকীত্বের মতো অবস্থাকে আমাদের পরিহার করাও দরকার। আর এই অবস্থাকে পরিহার করতে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা। তাই একে অন্যের পাশে সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারলে তখনই আমরা সঠিক মনুষ্যত্ব এবং সঠিক আত্মার পরিচায়ক হবো।

লেখক: শিক্ষার্থী

সারাবাংলা/এসবিডিই

অনলাইন ফোবিয়ার বেড়াজালে একাকীত্বতা রিফাত হোসেন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর