Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইতিহাসের স্বাক্ষী গান্ধী আশ্রম এক ঐতিহাসিক নিদর্শন

ফজলে এলাহী ফুয়াদ
৬ এপ্রিল ২০২২ ১৭:২৫

পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয় জন মানুষ নিজেদের কর্মগুণে এখনো স্মরণীয় তাদের একজন মহাত্মা গান্ধী। প্রতাপশালী এক সাম্রাজ্য পরাজিত হয়েছিল সাদাসিধে পোশাকের এক ব্যক্তির কাছে। তিনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

তার স্মরণে নোয়াখালীতে নির্মিত ও গঠিত গান্ধী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত গান্ধী আশ্রম এখন পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। দূর দুরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন ইতিহাস কে কাছ থেকে দেখতে ও জানতে।

পৃথিবীতে যুগে যুগে কিছু মানুষ আসেন যাদের নেতৃত্ব, দর্শন পাল্টে দেয় গোটা দুনিয়াকে। যারা অন্ধকারে হাজির হন আলোর মশাল হাতে। যারা নিজের জীবনের সবটুকু দিয়ে রচনা করে যান মানবকল্যাণের বাণী। ঠিক এমনই একজন মানুষ হলেন মহাত্মা গান্ধী। শান্তির স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করে গেছেন অন্যরকম এক দৃষ্টান্ত।

তিনি ছিলেন অহিংস মতবাদ ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি পুরো ভারতবর্ষকে করেছিলেন ঐক্যবদ্ধ, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের চেতনাকে করেছিলেন জাগ্রত। আর সেই সাথে মানুষকে নিয়ে গিয়েছিলেন সত্য ও ন্যায়ের দিকে, গণতন্ত্র ও মানবতার দিকে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক তিনি। তিনি ভারতের জাতির জনক। যিনি মহাত্মা গান্ধী হিসেবেই বেশি পরিচিত যার অর্থ হচ্ছে “মহান আত্মা”।

ব্রিটিশ শাসনামলের শেষের দিকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানের মতো নোয়াখালীতেও হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সেই দুঃসময়ে শান্তি মিশন নিয়ে নোয়াখালী ছুটে আসেন মহাত্মা গান্ধী।এই অঞ্চলে এসে প্রায় মাস তিনেক সময় কাটান। এ সময় বেশিরভাগ পায়ে হেঁটে তিনি পুরো অঞ্চলটি ঘুরে বেড়ান, হিন্দু-মুসলমান সমাজের নানা অংশের সাথে কথা বলেন, এবং বিভিন্ন জনসভায় গিয়ে ভাষণ দেন। তার উদ্দেশ্য ছিল একটাই- এই হানাহানি বন্ধ করে দুর্বলকে রক্ষা করা।

বিজ্ঞাপন

ভারতের বিভিন্ন স্থানে তার স্মৃতি সংরক্ষণ করা গেলেও বাংলাদেশে মাত্র একটি স্থানে মহান এ মানুষটির স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।আর সেটি অবস্থিত নোয়াখালীতে।যার নাম গান্ধী আশ্রম।ব্যতিক্রমধর্মীএ প্রতিষ্ঠানটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়।নোয়াখালীর একটি দর্শনীয় ঐতিহাসিক নিদর্শন। মাইজদী কোর্ট হতে প্রায় ২৫ কিমি উত্তরে সোনামুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশে এর অবস্থান। তৎকালীন জমিদার প্রয়াত ব্যারিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষের বাড়িতে উক্ত গান্ধী আশ্রম স্থাপিত হয়। বর্তমানে গান্ধী আশ্রম নোয়াখালীর একটি সেবামূলক সংগঠন যা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো দাড়িয়ে আছে পর্যটকদের আকর্ষণ করে দেশব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছে।

মুলত গান্ধীজির বিশেষত্বই তাকে মহান করে তুলেছে সকলের কাছে। ১৯৪৬ সালে জাতিগত সংঘাতের পর মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা ভ্রমণ এলে তৎকালীন জমিদার ব্যরিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষ তার সকল সম্পত্তি গান্ধীজির আদর্শ প্রচার এবং গান্ধীজির স্মৃতি সংরক্ষণের একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে দান করেন এবং গান্ধীজির নামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।সেটিই আজকে পৃথিবী জুড়ে গান্ধী আশ্রম নামে সমাদৃত।

একজন প্রজ্ঞার অধিকারী রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গান্ধী ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা এবং গরীব মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার অহিংস বিক্ষোভের উদাহরণ আজকের দিনে এখনো বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।

২০০০ সালে গান্ধী আশ্রমের মুল ভবনে গান্ধী স্মৃতি জাদুঘরের যাত্রা শুরু,গান্ধীর বিভিন্ন বই,ব্যবহার্য আসবাবপত্র এবং তার বৈচিত্র্যময় কর্মজীবনের চাপ এখনো স্পষ্ট যা সকলের মনোজগৎ নাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট।

বিজ্ঞাপন

অতি সাধারণ এক কাপড়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষটাই এক সময় হয়ে উঠেছিলেন ভারতীদের চোখের মনি। পথ দেখিয়েছেন মুক্তির। আর তাই তার অসাধারণ সংগ্রামী জীবনের নিদর্শন সংরক্ষণ করা হয়েছে নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রমে।

গান্ধী আশ্রম ভ্রমণে একজন মানুষ জানতে পারবে কতটা সাধারণ হয়েও অসাধারণ কাজ করা যায়। শুধু তাই নয় গান্ধী আশ্রম নোয়াখালীর অন্যতম কালচারাল হেরিটেজ, যেখানে প্রতিনিয়ত হাজারো দর্শনার্থী ভীড় করে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি পলক দেখতে। এইতো সেদিন আমার কয়জন বন্ধু নিয়ে ঘুরে এলাম কালের স্বাক্ষী মহাত্মা গান্ধী আশ্রম,কাছ থেকে তার স্মৃতি পলক, ব্যবহার্য জিনিসপত্র দেখে এতটুকু উপলব্ধি করা যায় কতটা সাদামাটা জীবন ছিলো মহান এ নেতার।

গান্ধী আশ্রমে আর্থসামাজিক উন্নয়নে নানা মুখী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি গান্ধীর স্মৃতিগুলো ধরে রাখার জন্য চলে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস। এখানে কর্মমুখী নারীদের দ্বারা হস্তচালিত চরকা ও তাঁতে বুননে নানা ধরনের জামা কাপড় তৈরি হয়। গান্ধীজী নিজেও চরকা দিয়ে তুলা থেকে সুতা ও কাপড় তৈরি করে জামা পরেছিলেন। তার সে স্মৃতি রক্ষার্থে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টেও এখনো চরকা দিয়ে সুতা ও তাঁতে কাপড় তৈরি করা হয়। স্থানীয় নারীরা এ কাজে অংশগ্রহণ করে নিজেদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আনছে। এখনকার খাদি কাপড়সহ অন্য দেশীয় কাপড়ের তৈরি পোশাক ও বিভিন্ন সামগ্রী জেলার বাইরে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির শো রুমে যাচ্ছে।

গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের পরিচালক রাহা নব কুমার জানান, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট শুরু থেকেই এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নানাবিধ কাজ করে আসছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের একটি অর্ডিন্যান্স ঘোষণার পর ‘৭৫ এর পরবর্তীতে আইনগত একটি ভিত্তি লাভ করার পর মূলত ৮০ দশকের পর থেকে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট এখানে গান্ধীজীর আদর্শের চর্চাগুলো শুরু হয়। শুধু আদর্শের চর্চা নয়। মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা, হত দরিদ্রের সহায়তা করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করাসহ নানাভাবে কাজ করে আসছে। এছাড়া ফেনী, নোয়াখালীতে টানা ১৫ বছর গান্ধী আশ্রম করার পর বিশাল জনগোষ্ঠীকে শতভাগ স্যানিটেশন কার্যক্রমের আওতায় আনতে পেরেছে। নিরাপদ পানি ব্যবহারে গান্ধী আশ্রম কাজ করেছে।

লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক

সারাবাংলা/এজেডএস

গান্ধী আশ্রম ফজলে এলাহী ফুয়াদ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর