ওষুধ ছাড়া ঘুম আনবে যে যোগাসন
২০ জুন ২০২২ ২২:০০
রাত পোহালেই বিশ্ব যোগ দিবস। এই বছরে দিনটির প্রতিপাদ্য ‘মানবতার জন্য যোগ’। এই যোগ, ইয়োগা বা যোগব্যায়াম আসলে নানা কারণে মানবদেহের জন্যে উপকারী। কারণ ঘুম না হলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। আবার এই মানসিক চাপের জন্য অনেকসময় ঘুম আসতে চায় না। হাফিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে আমেরিকাজুড়ে পরিণত বয়সের অনেকেরই ঘুম না হওয়ার অন্যতম কারণ ঘুম না হওয়া বা ঘুমের সমস্যা। আমাদের দেশেও অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন।
ঘুমের সমস্যায় যোগব্যায়াম দারুণ কার্যকরী। মানসিক চাপ কমায়, মন শান্ত করে এবং চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে ঘুমের ওষুধ ছাড়াই ঘুম আসতে সাহায্য করে যোগব্যায়ামের কিছু আসন। সন্ধ্যায় বা ঘুমের আগে আগে আরামদায়ক কিছু যোগাসন ঘুম এনে দেয়। আসুন দেখে নেই ঘুমে সাহায্য করে এমন ১০ টি যোগাসন কেমন হবে।
উত্থানাসন
এই যোগাসন অভ্যাসে মাথাব্যথা দূর করে ও মানসিক চাপ কমিয়ে ইনসমেনিয়ার প্রকোপ কমায়। এছাড়াও পা ও কোমরের পেশি শিথিল করে।
দুই পায়ের মধ্যে অন্তত ছয় ইঞ্চি ফাঁকা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। এবার কোমর থেকে সামনে ঝুঁকতে হবে যতক্ষণ না হাতের পাতা মেঝেতে পৌঁছচ্ছে। সামনে ঝুঁকতে কষ্ট হলে হাঁটু যতটা সম্ভব ভেঙে নিতে পারেন।
হলাসন
এই আসনে ঘাড় ও মাথায় রক্ত চলাচল বাড়িয়ে ঘুম আসতে সাহায্য করে। ঘুমের আগে এক থেকে পাঁচ মিনিট এই আসন অভ্যাস করলে দ্রুত ঘুম চলে আসে।
শরীরের দুইপাশে হাত রেখে টানটান হয়ে শুতে হবে। এরপর হাতে ভর দিয়ে কোমর থেকে দুই পা তুলতে হবে। মাথার উপর দিয়ে নিয়ে দুই পা মেঝে ছোবে। সরাসির না পারলে সাপোর্ট পাওয়ার জন্য পিঠের নীচে কম্বল ভাঁজ করে দিতে পারেন।
বিপরীত করণি আসন
সারাদিন কাজের শেষে সন্ধ্যার বা রাতে শরীরে আরামদায়ক অনুভূতি এনে দিতে এই আসন কার্যকরী।
দেয়ালের বিপরীতে চিত হয়ে শুয়ে পা উপরে তুলে দেয়ালে ঠেকাতে হবে। চাইলে কোমরের নিচে পাতলা কুশন বা পাতলা কাপড় ভাঁজ করে দিতে পারেন। পা উপর দিকে তুললে রক্ত সরাসরি হৃদপিণ্ডে পৌঁছে যায় যা আমাদের শরীরকে দ্রুত শিথিল করে।
শবাসন
সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এই আসনের জুড়ি মেলা ভার। শরীরকে একদম রিল্যাক্স বা শিথিল করে এই আসন।
শরীরের দু’পাশে হাত রেখে চিত হয়ে শুয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে মনযোগ দিতে হবে। মন থেকে সব চিন্তা দূর করে শরীর একদম ছেড়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে সুন্দর কোন জায়গার চিন্তা করতে পারেন যাতে মানসিক চাপ না থাকে।
সুপ্ত মৎসেন্দ্রাসন
ঘুমানোর আগে বিছানাতেই এই আসন অভ্যাস করা সম্ভব। এই আসনে শরীরের নানা অংশের, বিশেষত মেরুদণ্ডের পেশির অস্বস্তি দূর করে, হজমে সাহায্য করে এবং সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে ভূমিকা রাখে।
চিত হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে বুক পর্যন্ত আনুন। তারপর শরীর বাম দিকে বাঁকান। ডান হাত ছবির মতো করে ছাড়িয়ে রাখুন। কয়েকবার গভীর শ্বাস নিয়ে তারপর বাম পাশে একইভাবে আসন করুন। কেউ যদি দুই পা একসাথে না পারেন, একটি হাঁটু দিয়েও করতে পারেন।
অর্ধ মৎসেন্দ্রাসন
সুপ্ত মৎসেন্দ্রাসনের মত এই আসনেও আমাদের মেরুদণ্ড টানটান করে সারা শরীরে এক ধরনের আরামের অনুভূতি এনে দেয়।
দুই পা সামনে ছাড়িয়ে বসতে হবে। তারপর এক পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে শরীরের অন্য পাশে নিতে হবে। হাতের সাহায্যে সাপোর্ট নিন।
সুপ্ত বদ্ধকোণাসন
এই আসনে শরীর রেস্ট পায় তাই ঘুম আসে সহজেই।
ইয়োগা ম্যাট বা বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই হাঁটু বাঁকিয়ে দুই পায়ের পাতা মেলান। এক হাত হৃদপিণ্ডে ও আরেক হাত পেটের ওপর রাখুন। এই আসন অভ্যাস করতে যদি কারও সমস্যা অনুভূত হয়, হাঁটুর নিচে পাতলা কুশন বা কাপড় ভাঁজ করে দিতে পারেন। কয়েক মিনিট গভীর শ্বাস ছাড়ুন ও নিঃশ্বাস নিন।
সূর্যভেদ প্রাণায়াম
একধরণের প্রাণায়াম। শ্বাস-প্রশ্বাসের এই আসনকে নাড়িশুদ্ধির আসনও বলা হয়।
মেরুদণ্ড সোজা করে পদ্মাসন বা সুখাসনে বসুন। এবার ডান হাতের অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে বাম নাসাপথ (নাকের ছিদ্র) বন্ধ করে ধীরে ধীরে ছয় সেকেন্ড পর্যন্ত ডান নাসাপঠে নিঃশ্বাস নিন। শ্বাসগ্রহণ হয়ে গেলে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ডান নাসাপথ বন্ধ করে ছয় সেকেন্ড পর্যন্ত নিঃশ্বাস আটকে রাখুন। এরপর বাম নাসাপথে ছয় সেকেন্ড সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বায়ু ত্যাগ করুন। এটাই সূর্যভেদ প্রাণায়াম। এ ভাবে ছয় বার অভ্যাস করুন। সমস্ত শরীরে আরামের অনুভূতি এনে দেবে এই আসন।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি