বর্ষায় চুল পড়ে? সমাধান লুকিয়ে রান্নাঘরে
২ আগস্ট ২০২২ ১৭:২৫
চুল পড়া সমস্যা যাদের আছে তাদের সব ঋতুতেই কম বেশি চুল পড়ে। কিন্তু বর্ষা আসলে চুল পড়া যেন অন্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। অনেকে হয়তো ভাবেন বৃষ্টির জন্য ধুলাবালি কম, চুলও কম পড়বে। বৃষ্টির পানি খালি চোখে পরিষ্কার মনে হলেও তাতে কিন্তু এক ধরনের অ্যাসিড থাকে। তা ছাড়া স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, ভ্যাপসা গরম, মাথায় ঘাম, চুল ঠিকমতো না শুকানো— এ সবের কারণে চুলের গোড়ায় ছত্রাক বাসা বাঁধে। মাথার ত্বকে চুলের গোড়ায় ইনফেকশন, খুশকি, চুল পড়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়া, রুক্ষ হয়ে পড়াসহ নানা ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে চুলে ক্ষতি হয় বর্ষায়।
এছাড়া বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, ফলে পরিবেশ হয় স্যাঁতসেঁতে। চুলের ওপরও এই পরিবেশের প্রভাব পড়ে। আদ্রতার কারণে এই সময়ে চুল ঠিকমতো শুকাতে পারে না। ফলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। এতে চুল ভঙ্গুর হয় ও চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।
চুলের সঠিক যত্নের অভাবে এই সমস্যাগুলো আরো বাড়ে। তাই এসময় চুলের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। রান্নাঘরেই মিলবে চুল পরিচর্যার নানা উপাদান। আসুন দেখে নেই কোন প্যাকগুলো ঘরেই বানিয়ে চুলের যত্ন নিতে পারি।
গ্রিন টি
নতুন চুল গজাতে গ্রিন টি দারুণ কার্যকরী। চুলের ডগা ফাটা রোধ করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। দুই কাপ গরম পানির মধ্যে দুই বা তিনটি গ্রিন টির ব্যাগ দিয়ে ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। টি ব্যাগ উঠিয়ে ঠান্ডা চা সম্পূর্ণ চুল ও চুলের গোঁড়ায় দিয়ে আঙুলের সাহায্যে মাসাজ করুন। কিছুক্ষণ রেখে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। একদিন পর শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
নারকেলের দুধ
চুল ও ত্বকের জন্য নারকেল তেলের গুনাগুণের কথা তো অনেক শুনেছেন, চুল পড়া বন্ধ করতে এবার চুলে দিন নারকেল দুধ। এতে চুল পড়া বন্ধের পাশাপাশি নতুন চুল জগানোতেও সাহায্য করবে। সরাসরি চুলের গোঁড়ায় আঙুল বা ব্রাশের সাহায্যে নারকেলের দুধ লাগানোর পর মাথায় অন্তত ২০ মিনিট একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখুন। তারপর শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে চুল শুকিয়ে নিন। একদিন পর শ্যাম্পু করুন।
আমলকির শাঁস
আমলকিতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এতে শুধু চুল পড়া কমায় ই না, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও আমলকি দারুণ কার্যকর। এই প্যাক বানাতে আমলকি টুকরো করে কেটে শাঁস আলাদা করে নিন। এর সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করে তাতে এক টেবিলচামচ আমলকি গুঁড়ো ও এক টেবিলচামচ লেবুর রস দিয়ে মিশ্রণ বানান। মিশ্রণটি আঙুলের সাহায্যে চুলের গোঁড়ায় গোঁড়ায় লাগান। সারারাত রেখে সকালে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার লাগান। সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহারে চুল পড়া কমে যাবে অনেকটাই।
অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকালিন আছে, যা চুলের পিএইচ লেভেল বা জলীয় উপাদান ঠিক রাখে। চুল ঘন হতেও সাহায্য করে অ্যালকালিন। অ্যালোভেরার মধ্যে যে স্বচ্ছ আঠার মতো শাঁস তা-ই অ্যালোভেরা জেল। অ্যালোভেরা পাতা নিয়ে উপরের সবুজ অংশ পাতলা করে কেটে একটি চামচ দিয়ে টেনে শাঁস বের করুন। এবার এটি ব্লেন্ড করে চুলের গোঁড়া ও সম্পূর্ণ চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে রেখে দিন এক বা দুই ঘন্টা। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মেথি
রুক্ষ, ভঙ্গুর চুলের যত্নে মেথির জুড়ি নেই। যাদের চুল ফেটে যায়, তারাও মেথি ব্যবহারে উপকার পাবেন। এক কাপ মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মেথি ব্লেন্ড করে পেষ্ট বানান। এবার এই মেথিবাটা পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
বর্ষায় চুল পড়া রোধে কেবল প্যাক ব্যবহারই যথেষ্ট নয়। মেনে চলতে হবে আরও কিছু নিয়ম—
ভেজা চুল কখনোই নয়
বর্ষাকালে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। এসময় যতটা দ্রুত সম্ভব চুল শুকিয়ে নিতে হবে। ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানোই ভালো। তবে বাইরে যাওয়ার তাড়া থাকলে চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
প্রোটিনজাতীয় খাবার
চুলের যত্ন কেবল বাহ্যিকভাবে নিলেই হয় না, চুলের পুষ্টি নির্ভর করে সঠিক খাবারদাবারের ওপর। প্রোটিনজাতীয় খাবার চুলের পুষ্টি যোগায়। বাদাম, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে পরিমাণমতো। পাশাপাশি সবুজ শাক-সবজিও খেতে হবে। এই খাবারগুলো চুল পড়া রোধে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত পানি পান
চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পানি আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বক ও চুলকে রাখবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল।
ভেজা চুল বাঁধা যাবে না
কোন অবস্থাতেই ভেজা চুল বাঁধা ঠিক না। এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল পড়ে যায়। বাঁধতে চাইলে আগে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নেবেন।
মাইল্ড বা মৃদু শ্যাম্পু
চিকিৎসকরা বলেন, অন্য ঋতুতে দিনে ৫০ থেকে ৬০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। আর বর্ষাকালে এর দ্বিগুণ চুল পড়ে। তাই এইসময় চুলের বাড়তি যত্ন নিতে হয়। অন্য ঋতুতে আপনি যে শ্যাম্পুই ব্যবহার করুন, বর্ষাকালে মাইল্ড বা মৃদু ক্ষার আছে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। প্রোটিন ও অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু এই সময়ের জন্য বেশ উপযোগি।
বর্ষাকালে চুলের যত্নে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম ও উপযোগি প্যাক ব্যবহার করাই যথেষ্ট। তবে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াসংক্রান্ত সমস্যা যদি বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
বর্ষায় চুল পড়ে? সমাধান লুকিয়ে রান্নাঘরে লাইফস্টাইল সুন্দর যাপন