গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারীতা
৬ আগস্ট ২০২২ ১৭:০৩
পুষ্টিগুণ বিবেচনায় বাদামের জুড়ি মেলা ভার। গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য বাদাম খুবই দরকারি খাদ্য উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে, মা ও গর্ভের শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বাদাম কার্যকর। গর্ভধারণের পর গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় অনেকে গরুর দুধ খেতে পারেন না। ফলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থেকেই যায়। গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে এই সময়ে খেতে পারেন বাদাম দুধ। প্রতিদিন কতটুকু বাদাম বা বাদাম দুধ আপনার জন্য দরকার, তা চিকিৎসকের কাছে জেনে নিতে হবে।
তবে বাদাম খেলে যাদের এ্যালার্জি বা অন্য সমস্যা হয়, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। মনে রাখা ভালো, গর্ভবতী মা ও শিশুর সুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শই শেষ কথা।
আসুন জেনে নেই, গর্ভের শিশুর জন্য বাদাম উপকারিতা সম্পর্কে—
মাংসপেশী গঠনে
বাদামে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন আছে। তাই শিশুর মাংসপেশী গঠনে সাহায্য করে এটি। শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
ত্বক ও চুলের জন্য
বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আছে। ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের সুস্থতায় খুবই উপকারী। গর্ভবতী মা নিয়মিত বাদাম শিশুর ত্বক ও চুল ভালো হয়।
দাঁত ও হাড় গঠনে
গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় ও দাঁত মজবুত করে।
স্নায়ুতন্ত্রের কাজে
বাদামে আছে ম্যাগনেশিয়াম, যা কেন্দ্রীয় স্নাযুতন্ত্রের কাজ সচল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া শিশুর ওজন বাড়াতেও ম্যাগনেশিয়াম খুব দরকারি।
মস্তিষ্ক গঠনে
বাদামে থাকা ভিটামিন বি-৯ ও ফলেট শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া মায়ের ডিম্বাশয়ের নানা জটিলতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে এই পুষ্টি উপাদানগুলো। ফলে গর্ভে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় না।
এবার জেনে নেই, গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাদামের উপকারিতা নিয়ে—
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
বাদাম বা বাদাম দুধ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা গর্ভবতী মায়ের হৃদপিন্ড ভালো রাখে।
ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর
নানারকম ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান হলো বাদাম। এতে আছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি। গর্ভধারণের পর যারা মাছ, মাংস খেতে পারেন না, তাদের শারীরিক পুষ্টির যোগানদাতা হিসেবে বাদাম বেশ কার্যকর। গর্ভবতীদের হাড়ের সুস্থতায় বাড়তি পুষ্টি দরকার, যা বাদাম থেকে পাওয়া সম্ভব। বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
অনেক নারী গর্ভধারণের পর উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যা মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়, যা ‘প্রি-অ্যাকলেমসিয়া’ রোগে পরিণত হয়। এই রোগ মা ও সন্তানের জন্য খুবই বিপদজ্জনক। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে বাদাম খেতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাদামে অল্পমাত্রায় যে চিনি থাকে তা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষতি করে না।
ত্বকের সুরক্ষায়
গর্ভধারণের পর অনেক নারী মুখে ব্রণ, ত্বকের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়াসহ নানারকম সমস্যায় ভোগেন। ত্বকের সমস্যায় বাদাম খুব উপকারী। ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে এটি। বাদাম দুধ ত্বকে লাগাতে পারেন। এতে ত্বক মসৃণ হয়।গর্ভধারণের সময়ে পেটে ফাটা দাগ হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এই সমস্যা দূর করতে ত্বকে প্রতিদিন বাদাম তেল লাগাতে পারেন।
বাদাম দুধ তৈরি করার পদ্ধতি
ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই খুব সহজে বাদাম দুধ ঘরে তৈরি করা যায়। ফ্রিজে রেখে গরুর দুধের মতোই সংরক্ষণ করা যায়। তবে দুইদিনের বেশি সংরক্ষণ করতে চাইলে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এতে বাদাম দুধের গন্ধ ও স্বাদ পরিবর্তন হবে না।
জেনে নিন বাদাম দুধ তৈরির পদ্ধতি—
উপকরণ: বাদাম ১ কাপ, পানি ২ কাপ, ছাকনি
পদ্ধতি—
বাদাম পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন। এই বাদাম আগেরদিন রাতেই পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা ভালো। ভিজিয়ে রাখলে বাদামের ওপরের খোসা আলগা হয়ে যায়। এবার খোসা ছাড়িয়ে বাদামের সাদা অংশটুকু ব্লেন্ডারে দিতে হবে। এর সাথে দুই কাপ পানি দিতে হবে। এবার বাদাম ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিলেই বাদাম দুধ আলাদা হয়ে যাবে।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারীতা বাদাম দুধ লাইফস্টাইল সুস্থ থাকুন