গাড়িতে তেলের খরচ বেড়েছে? কমাবেন যেভাবে
১৩ আগস্ট ২০২২ ১৪:০৯
আশেপাশে কান পাতলেই দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, গত কয়েকমাসে মানুষের আলোচনার একটি নির্ধারিত টপিক যেন! সবশেষ নিত্যদিনের এই ব্যায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বিষয়টি যেন ষোলকলা পরিপূর্ণতা পেয়েছে। গ্যাস আর তেলের দাম বাড়াতে অতিধনী আর ধনীদের কপালের কুঞ্চন হয়তো বেড়েছে। তবে সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন উচ্চ মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্তরা। যারা এই তিলোত্তমা নগরীতে গণপরিবহণের সেবা নিতে অনেকটাই অপারগ। এদের অনেকেই ধার-দেনা করে বা অন্য কোনোভাবে ‘স্ট্যাটাস’ রাখতে একটি গাড়ি কিনে চলাচল করতেন। তেলের মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় এরাই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। জ্বালানির জ্বালায় এই গাড়িই এখন অনেকের গলার কাঁটা। তাই অনেকে ভাবছেন শখের গাড়িটি বিক্রির কথাও। অনেকেই আবার জ্বালানি খরচ কমাতে গাড়িকে সিএনজি করে ফেলার কথাও ভাবছেন। কিন্তু সিএনজিরও দাম বাড়ছে বলে গুঞ্জন বাজারে।
এই আপাত ক্ষতিগ্রস্থ শ্রেণীটির জন্য অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার আফসার হোসেইনের একটি সহজ পরামর্শ, গাড়ি বিক্রির কথা না ভেবে বরং ভাবুন এই দুঃসময়ে কম খরচে কীভাবে গাড়ি চালাবেন। এমন ভাবে গাড়িকে ব্যবহার করতে হবে যেন, গাড়ির কোন অসামঞ্জস্যতায় গাড়ির জ্বালানি অতিরিক্ত খরচ না হয়। আর খুব প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি বের করবেন না। দূরের যাত্রায় বাসের ব্যবহার বাড়ান। আর গাড়িতে তেলের খরচ কমান। এতেই সমাধান। আর এই তেলের খরচ কমানোর জন্য সারাবাংলার পাঠকদের কিছু সহজ টিপসও দিয়েছেন এই অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার।
ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল
ভালো মানের এবং সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে আর নিয়ম মেনে তা বদলানো হলে জ্বালানী সাশ্রয় হয়। কারণ সবকিছু ঠিক থাকলে ইঞ্জিনের ভেতরের যন্ত্রাংশগুলো মসৃণভাবে নড়াচড়া করতে পারে, ফলে কার্যকারিতা বাড়ে। কত কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল বদলাতে হবে, সেজন্য গাড়ি প্রস্তুতকারকের নির্দেশনা মানতে হবে, গ্রেডের ক্ষেত্রেও তাই।
এয়ার ফিল্টার বদলানো
জ্বালানি তেল বাঁচাতে চাইলে গাড়ির এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার রাখার বিকল্প নেই। এয়ার ফিল্টারে ময়লা জমলে ইঞ্জিনে বাতাসের সরবরাহ কমে যায়, যা ইঞ্জিনের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়। আর এ অবস্থায় গাড়ি চালালে তেল বেশি খরচ হয়। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে এমন গাড়ির ক্ষেত্রে ফিল্টারে গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই সময় মতো এয়ার ফিল্টার বদলাতে হবে।
চাকায় হাওয়ায় সঠিক মাপ
যদি মনে করেন গাড়ির ইঞ্জিন একাই তেল হজম করে তাহলে আপনি ভুলের স্বর্গে আছেন। গাড়ির চাকায় হাওয়ার মাপ সঠিক না থাকলে সেই গাড়িও জ্বালানি খরচ বাড়ায়। গাড়ির টায়ারে প্রেশার কম থাকলে সেটি রাস্তায় ঠিকভাবে চলতে পারেনা, ফলে ইঞ্জিনের উপর চাপ পড়ে। আর ইঞ্জিনের উপর চাপ পড়লেই গাড়ির জ্বালানি বেশি খরচ হয়। তাই গাড়ির টায়ারে বাতাসের পরিমাণ সবসময় ঠিক রাখুন। এতে গাড়ির মাইলেজ বাড়বে।
গতি নিয়ন্ত্রণ
গাড়ির গতির ওপরও তেল পোড়ার হার নির্ভর করে। বেশি গতিতে চললে যে কোনো ইঞ্জিনেই তেল খরচ বেশি হয়। এছাড়া বারবার গতি কম-বেশি করলেও তেল খরচ বেড়ে যায়। নির্দিষ্ট গতিসীমার মধ্যে গাড়ি চালালে অপেক্ষাকৃত কম তেল পোড়ে। তাই এলোপাথাড়ি গাড়ি না চালিয়ে নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালান। হুটহাট গতি তুলবেন না। এতে জ্বালানি খরচ যেমন কমবে আপনার গাড়ির অন্যান্য যন্ত্রাংশ যেমন ‘ব্রেক-শু’, গিয়ার বক্সের স্থায়িত্বও বাড়বে।
অপ্রয়োজনীয় ওজন নয়
গাড়ির ওজনের ওপরও জ্বালানি খরচের পরিমাণ নির্ভর করে। যে গাড়ির ওজন যত বেশি, সে গাড়ি চলতে তই বেশি জ্বালানির দরকার হয়। এজন্য গাড়ি থেকে অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় মালপত্র সরিয়ে রাখুন। গাড়িতে অতিরিক্ত পার্টস বা যে কোনো কিছু থাকলে সরিয়ে রাখুন। গাড়িকে রাখুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, টিপটপ আর ঝরঝরে।
এসিতে সাশ্রয়
গাড়ির জ্বালানি খরচের আরেকটি বড় উৎস হলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রক। যদি তেল যদি খরচ কমাতে চান, তাহলে মাঝেমাঝেই গাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বা এসি বন্ধ রাখুন। সবসময় গাড়ির মধ্যে এসি চালিয়ে না রেখে, মাঝে মাঝে গাড়ির জানালা খুলে দিন। অফ রোড বা লং রোডে ড্রাইভ করার সময় গাড়ির জানালা খুলে একটু প্রকৃতির স্বাদ নিন। এতে মন প্রফুল্ল থাকার পাশাপাশি গাড়ির জ্বালানি খরচ কমে যাবে।
নিয়ম করে রক্ষণাবেক্ষণ
গাড়ির ভালো থাকার অথবা রাখার আরেকটি বড় শর্ত হলো নিয়ম করে সার্ভিসিং বা রক্ষণাবেক্ষণ করানো। গাড়ির ড্যাশবোর্ডে ‘চেক ইঞ্জিন’ বাতি জ্বলে উঠলে তাকে অবহেলা না করে সার্ভিসিং করতে হবে। সার্ভিসিং এর অভাবে গাড়ির ফুয়েল খরচের হার ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। তাই গাড়িতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করালে মেরামত খরচ কমে।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অংকিতা চৌধুরী গাড়িতে তেলের খরচ বেড়েছে? কমাবেন যেভাবে লাইফস্টাইল সুন্দর যাপন