পরিবার একটি বন্ধন, একটি বিদ্যালয়
১৮ আগস্ট ২০২২ ২০:২৬
আজকাল যে শিশু কিশোরদের পাচ্ছি, নানা সমস্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, এমনকি প্যারেন্টস রেফার করছেন, ৯৯%-এর সমস্যা হলো বাচ্চাটি নিজেকে একা মনে করছে।
তার শারিরীক, মানসিক, আবেগীয় সুখ-অসুখ সে পরিবারের কারো সাথে শেয়ার করতে পারছেনা। কারো বাবা মা খুব বেশী ব্যস্ত, সারাদিনে বাবা মায়ের সাথে দেখাই হচ্ছেনা। একটি মাত্র ছুটির দিনেও তারা অন্যান্য সামাজিকতা নিয়ে এতই ব্যস্ত যে একমাত্র সন্তানটি একা একা গেইম খেলে বা মুভি দেখে ছুটির দিনটি পার করছে।
কেউ কেউ নিজের পেশায় প্রচন্ড সফল। ইন্জিনিয়ারিং ফার্ম-এ উপচে পড়া ক্লায়েন্ট বা ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ঢল। কিন্তু রাত বারোটায় যখন বাসায় ফিরছেন, তখন একমাত্র সন্তানটি টিভির সামনে ডিনার শেষ করে দরজা বন্ধ করে চ্যাটিং-এ ব্যস্ত।
কেউবা সিংগেল প্যারেন্ট। বিভিন্ন পারিবারিক ঝামেলায় সন্তানদের একই সুতোয় বেঁধে রাখতে পারেননি। এরমধ্যে কেউ কেউ প্রচন্ড একাকিত্বে ঝুঁকে পড়েছে ডিভাইসে। বেছে নিচ্ছে বিভিন্ন আপত্তিকর সাইট। এটাকেই একমাত্র এন্টারটেইনমেন্ট মনে করছে। শেয়ার করছে বন্ধুদের সাথেও। দূষিত করছে বন্ধু তথা সমাজকে।
তাই সবসময় একটাই চাওয়া, সন্তানকে প্রচুর সময় দিন। একাকিত্ব আপনার সন্তানকে ডিভাইস আসক্তি, বিষন্নতা, স্থুলতা, এককেন্দ্রিকতা, social anxiety-তে ভোগাতে পারে। করে দিতে পারে মানসিক ভাবে চরম অসুস্থ। আপনিও ছিটকে পড়তে পারেন সন্তানের কাছ থেকে বহু দূরে।
সব শিশুর ছোটবেলা থেকেই আবেগ অনুভুতি শেয়ার করার চাহিদা থাকে। তাই তাকে প্রচুর গঠনমূলক সময় দিন। তাকে পাশে নিয়ে মোবাইলে ব্যস্ত থাকা আসলে সময় দেওয়া নয়। তার সাথে গল্প করুন, সারাদিন কি করলো, বন্ধুদের গল্প শুনুন, কোন কোন ক্লাশ হলো, ক্লাশ ওয়ার্ক তুলেছে কিনা- গল্পচ্ছলে জানুন। তার টিচার বন্ধু, বন্ধুদের ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ রাখুন। গঠনমূলক কাজকর্ম, গান, ছবিআঁকা, বাগান করা, ফটোগ্রাফিতে উৎসাহ দিন। সেগুলো দেখুন, শুনুন। ভালো হলে সাবাস, Very good, well done- এমন উৎসাহব্যাঞ্জক কথা বলুন। বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরুন বা hug করুন। এটা তাকে খুব ভালো ফিলিংস দেয়।
ডিভাইস আসক্তি- মাদকাসক্তির চেয়ে কম ভয়াবহ নয়। তাই তার ২৪ ঘন্টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। ডেইলি লিভিং-এর কাজে অংশ নিতে উৎসাহিত করুন। আশেপাশে মাঠ না থাকলেও কোনো ক্রিকেট ক্লাব, সুইমিং ক্লাব-এ ভর্তি করে দিন। আউটডোর খেলায় মনের খোরাক মিটলে ডিভাইস আসক্তি কমবে।
একসাথে খাবার টেবিলে বসার চেষ্টা করুন। খাওয়ার সময় হালকা গল্প করুন। খাবার টেবিল ফ্যামিলি বন্ডিং-এর চমৎকার একটি স্থান।
দয়া করে দুজনই ব্যস্ত হয়ে যাবেন না। কিছুটা ব্যস্ততা কমিয়ে নিজের সন্তানের জন্য কিছুটা সময় বের করুন। দিন শেষে আপনার সন্তানই আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি-ব্যাংক ব্যালান্সের চেয়ে তো অবশ্যই।
লেখক: মনোবিজ্ঞানী, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
নাঈমা ইসলাম পরিবার একটি বন্ধন- একটি বিদ্যালয় লাইফস্টাইল সুন্দর যাপন