ডাবের পানি কেন পান করবেন?
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:০২
গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে প্রায় সারাবছরই ডাব পাওয়া যায়। দারুণ সুস্বাদু ডাবের পানি পছন্দ করেননা, এমন মানুষ পাওয়া ভার। বিশেষ করে গরমে ডাবের জলে মেলে প্রশান্তি। নিয়মিত ডাবের পানি পানের রয়েছে নানা উপকারিতা। ডাবের জল পানে প্রাণীদেহে প্রভাব সম্পর্কে নানা গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণা থেকে পাওয়া কিছু উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
কিছু গবেষণা অনুযায়ী, ডাবের পানি পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজ করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়বেটিক আক্রান্ত ইঁদুরকে ডাবের জল পান করালে অন্যান্য অসুস্থ ইঁদুরের চেয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি নিয়ন্ত্রণে থাকে। একই গবেষণায় এটাও জানা গেছে, ডাবের পানি পান করানো ইঁদুরের শরীরের হিমোগ্লোবিন এওয়ানসি এর মাত্রা কম থাকে। অর্থাৎ, দীর্ঘ সময়ের জন্য রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তবে মানব শরীরে শর্করার মাত্রার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডাবের পানির ভূমিকা সম্পর্কে এখনও প্রতিষ্ঠিত গবেষণা নেই।
প্রতি কাপ ডাবের পানিতে ৩ মিলিগ্রাম ফাইবার ও ৬ মিলিগ্রাম কার্ব পাওয়া যায়। তাই যেকোনো ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডাবের জল রাখতে উৎসাহিত করা হয়। ডাবের পানি ম্যাগনেসিয়ামের দারুণ উৎস। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা ও রক্তে শর্করা কমাতেও সাহায্য করে।
পুষ্টির দারুণ উৎস
প্রতি এক কাপ ডাবের পানি অর্থাৎ ২৪০ মিলিগ্রামে পাওয়া যায় ৪৬ ক্যালোরি। এছাড়া ৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩ গ্রাম ফাইবার, ২ গ্রাম প্রোটিন। এতে দৈনিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রতিদিনের চাহিদার ১৫ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম, ১৭ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ, ১৭ শতাংশ পটাশিয়াম, ১১ শতাংশ সোডিয়াম, ও ৬ শতাংশ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইঁদুরের পাকস্থলীতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিরাময়ে ডাবের পানি চিকিৎসায় দারুণ কাজ হয়েছে। ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টিএক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের ক্ষতিকর জারক নির্মূল করে।
আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ ফ্রুক্টোজ ডায়েটে থাকা ইঁদুরের শরীর থেকে ক্ষতিকর জারক দ্রুত নির্মূল করতে সহায়তা করে ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে ডাবের পানির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানব শরীরে কতটুকু কাজ করে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠিত গবেষণা নেই। ।
কিডনির পাথর প্রতিরোধে
প্রচুর জল পান করা কিডনির জন্য ভাল। যদিও সাদা পানি পান করাই কিডনির জন্য বেশি উপকারী তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানি কিছু ক্ষেত্রে আরও ভাল কাজ করে। ক্যালসিয়াম, অক্সালেট এবং অন্যান্য যৌগ মিলে যখন মূত্রনালিতে স্ফটিক তৈরি হয় তখন কিডনিতে পাথর হয়। ইঁদুরের উপর গবেষণায় দেখা গেছে, মূত্রনালিতে স্ফটিক তৈরিতে বাধা দেয় ডাবের জল। মূত্রে স্ফটিকের পরিমাণও কমায় ডাবের পানি।
তবে কিডনির পাথর প্রতিরোধে ডাবের পানির কার্যকরিতা জানতে এই গবেষণাটিই প্রথম ও একমাত্র। গবেষকরা মনে করেন এ ব্যাপারে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে ডাবের পানি কাজ করে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব ইঁদুর ডাবের পানি পান করে, তাদের রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লাইসেরাইডস এর উৎপাদন হ্রাস পায়। এছাড়া যকৃতে চর্বির পরিমাণও কমায়।
আরেক গবেষণায় প্রতি ১০০ গ্রাম ওজনের একদল ইঁদুরকে ৪ মিলিগ্রাম হারে ডাবের পানি পান করানো হয়। ৪৫ দিন পর দেখা যায় ডাবের পানি পান করে না এমন ইঁদুরের তুলনায় এদের শরীরে কোলেস্টরেল ও ট্রাইগ্লিসেরাইড এর উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
রক্তচাপ কমাতে
ডাবের পানির নানা উপকারী উপাদান রক্তচাপ কমাতেও কাজ করতে পারে বলে মনে করা হয়। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত কয়েকজন রোগীর শরীরে ডাবের পানির প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে ৭১ শতাংশের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া ডাবের পানিতে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
শরীরে তরলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে
লম্বা সময় জিম, খেলাধুলা বা শারীরিক পরিশ্রমের পর ডাবের পানি পান করলে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের যোগান বাড়ে। শরীরে পানিশূন্যতা হওয়ার ঝুঁকিও কমে। ইলেক্ট্রোলাইট এমন এক মিনারেল যা শরীরে তরলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কাজ করে।
অন্তত দুটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক পানির চেয়ে ডাবের পানি পান করলে শরীরে তরলের ভারসাম্য বেশি ভালো অবস্থায় থাকে। উচ্চ পরিশ্রমের পর ডাবের পানি পান করলে বমি বমি ভাব বা পেটে অস্বস্তি হয় না।
-হেলথলাইনডটকম অবলম্বনে
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি