Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শরীরে কেটে গেলে কী করবেন?

তামান্না সুলতানা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:২৬

হঠাৎ ছুরি বা চাকু দিয়ে কিছু কাটার সময় অসাবধানতাবশত হাত বা আঙুল কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে পারে। এ তো গেলো ছোটখাট দুর্ঘটনা। এছাড়া সড়ক বা অন্যান্য দুর্ঘটনায়ও যখন হাত বা পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন চামড়া, হাড়, মাংস, স্নায়ু ইত্যাদির সঙ্গে আমাদের রক্তনালি কথা শিরা ও ধমনিগুলোও কেটে যেতে পারে বা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা, শিশুদের ক্ষেত্রে গাছ বা অন্য কোনো উঁচু জায়গা থেকে নিচে পড়ে যাওয়া, ভারি যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র নিয়ে কাজ করার সময় দুর্ঘটনা এমনকি নিজের হাত বা পায়ের রক্তনালি কেটে ফেলার মতো ঘটনাও দেখা যায়। আর এসবের ফল আঘাত পাওয়া ধমনিতে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ ঘটে যাওয়া এসব দুর্ঘটনায় কারোই তেমন প্রস্তুতি থাকে না। কিন্তু শরীর বা রক্তনালী কেটে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দরকার সচেতনতা ও কিছু জরুরি সরঞ্জাম। কিন্তু ঘরোয়াভাবে এইসব উটকো দুর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে করবেন সেটিই বুঝে উঠতে পারি না অনেকে। কিন্তু ওই প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুই অনেকসময় অনেকের প্রাণ বাঁচিয়ে দেয়। হঠাৎ অসুস্থতায় ঘরেই প্রাথমিকভাবে কী করবেন সেই উপায়গুলো জানিয়েছেন চিকিৎসক আদনান আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

শরীরে বা রক্তনালীর কোথাও কেটে গেলে তখন প্রথম কাজই হলো দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করা। কাজেই যেখান থেকে রক্ত ঝরছে, সেখানটায় চেপে ধরতে হবে, যাতে রক্তপাত বন্ধ হয়। ক্ষত যদি গভীর না হয়, তাহলে রক্তপাত বন্ধ হলে একটু হেক্সিসল দিয়ে তুলা ভিজিয়ে জায়গাটা মুছে যে কোনো অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগিয়ে দিতে হবে। অল্প কাটা গেলে কিছুক্ষণ রক্তক্ষরণের জায়গাটি চেপে ধরে রাখলে শরীরের স্বাভাবিক নিয়মেই দু-এক মিনিটের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। রক্তক্ষরণ কমাতে হলুদ গুঁড়ো, গাঁদা পাতা বাটা বা চিনি দিলেও রক্ত বন্ধ হয়। এছাড়া কেটে না গিয়ে স্থানে স্থানে যদি চামড়া ছিলে যায়, তাহলে ছিলে যাওয়া বা ছিঁড়ে যাওয়া জায়গাগুলোতে আয়োডিন বা অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগিয়ে দিতে হবে।

তবে ক্ষত যদি বেশি ও গভীর হয়, তখন সেলাইয়ের প্রয়োজন হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। দুর্ঘটনায় বড় ঝুঁকি আসে যখন রক্তনালি কেটে যায়। আর দুর্ঘটনার পর রক্তনালী-শিরা বা ধমনীর ক্ষতি হয়েছে কিনা তা বোঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজ নয়। তাই বেশি রক্তপাত ঘটলে বিন্দুমাত্র দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে প্রাথমিকভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য রক্তনালির ওপর পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে সাময়িকভাবে বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় রক্তক্ষরণে জীবনহানিও হতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ধমনির আঘাতের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা পরবর্তী প্রতিটি মুহূর্ত মহামূল্যবান।

আগেই বলেছি ধমনিতে আঘাত বোঝা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। কিন্তু কিছু লক্ষণ আছে যা মনে রাখলে আপনিও ধমনীর আঘাত সনাক্ত করতে পারবেন। ধমনির ক্ষতিগ্রস্ত স্থান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে বা আঘাতপ্রাপ্ত অংশের আশপাশে জমাট রক্তের চাকা তৈরি হতে পারে। মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা বা ভারি যন্ত্রপাতির আঘাতে কখনও কখনও ধমনি ছিঁড়ে গিয়ে এর একটা অংশ স্থানচ্যুত বা বিচ্ছিন্ন হয়। আবার কখনও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না হলেও ধমনির দেয়াল থেঁতলে যেতে পারে। তখন ধমনির ওই অংশের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। আর এসবের অবশ্যম্ভাবী ফল হল আঘাতপ্রাপ্ত ধমনির পরবর্তী অংশে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া।

আঘাতপ্রাপ্ত ধমনির পরবর্তী অংশে রক্ত সরবরাহ কমে যেতে পারে। ফলে হাত বা পায়ের ওই অংশ ফ্যাকাশে ও ঠাণ্ডা হয়ে আসে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ অংশে তখন নাড়ির উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না বা পাওয়া গেলেও তা স্বাভাবিক নাড়ির মতো জোরালো হয় না। রক্ত সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেলে আক্রান্ত অংশ ফুলে শক্ত হয়ে যেতে পারে, যাকে ‘কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম’ বলে। কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোমের কারণে আক্রান্ত অংশের ভেতরে চাপ বেড়ে যায়, যার ফলে রক্ত সরবরাহ আরও কমে যায়। এক পর্যায়ে অক্সিজেন ও পুষ্টিবঞ্চিত মাংসপেশি ও স্নায়ুর মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো মারা যেতে শুরু করে। তখন ওই অংশের অনুভূতি বা নড়াচড়ার ক্ষমতা দ্রুত লোপ পায়। তাই বেশি রক্তক্ষরণ হলে বা ধমনীর আঘাত অনুমান করা গেলেও দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

তামান্না সুলতানা লাইফস্টাইল শরীরে কেটে গেলে কী করবেন? সুস্থ থাকুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর