[পর্ব-১৯] ছাদবাগানে লক্ষী মেয়ে বরবটি
২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৪:৩৮
গত ছয় বছরের চাষাবাদ জীবনে থেকে এখন পর্যন্ত সব সবজির মাঝে ছাদবাগানে চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে লক্ষী সবজি লতা বরবটিকে পেয়েছি। আজ তাই মনে হল সব বাদ দিয়ে বরবটির গল্প বলি সবাইকে। তাছাড়া এ সময়ে সবচেয়ে উপযুক্ত সবজি এই বরবটি, ছাদবাগানে চাষাবাদের জন্য।
বরবটি লতা শুধু ছাদবাগানেই নয়, বারান্দাতেও খুব সহজেই চাষ করা যায়। যদি বা আপনার বারান্দায় পরিমিত সূর্যের আলো কয়েক ঘন্টার জন্য থাকে, তাহলে মাঝারি একটা টবেই বরবটি লতা বুনে দিতে পারবেন। বরবটির ফুল অতীব সৌন্দর্যের অধিকারী। যদিও এই ফুলের সাথে শিম ফুলের অনেক মিল খুঁজে পায় অনেকেই। এমন কি বরবটির পাতার সাথেও একই ঘটনা ঘটে।
আমি সাধারণত বরবটি বীজ থেকে চারা তৈরী করি। প্রতি বছরই দুই তিনটা বরবটি পেকে গেলে সেগুলো শুকিয়ে বিচি বের করে বাতাস ঢুকে না এমন বয়াম বা প্যাকেটে রেখে দেই। সেখান থেকে শুকনো বীজ ঘন্টা খানেক জলে ভিজিয়ে রেখে ছোট মালসায় ভেজা মাটিতে বুনে দেই। একটা একটা করে বীজ বুনতে হয়, একসাথে নয়। তিন চার দিনের মাথায় তারা মাটি ফুঁড়ে বের হয়।
চারা তৈরি করবার সময় এবং তিন চার ইঞ্চি লম্বা না হওয়া পর্যন্ত একটু চোখে চোখে রাখতে হয় তাদের। বিশেষ করে অতি জল বা বৃষ্টি এবং পাখিদের হাত থেকে দূরে রাখতে হয়। বরবটি লতা অত্যন্ত নাজুক প্রকৃতির। তাই কিছুটা লম্বা হবার সাথে সাথেই ছোট করে কঞ্চির কাঁধ না দিলে হেলে মাটিতে নেমে যায়। আরেকটু লম্বা হবার পর আলাদা আলাদা বাসস্থান তৈরি করে দিলে বরবটি ফলনের জন্য ভালো। বরবটি চারা দুই থেকে চারটা পর্যন্ত একসাথে বুনে দিলেও কোন সমস্যা হয় না। এদের জায়গা লাগে কম। তবে লতানের জন্য কাঁধ হিসেবে ছোট মাচাং বা বারান্দার গ্রিল হলেই হয়।
এ বছর আমি তিন জায়গায় বরবটি চাষ করেছি। নিজের জন্যই একখানা গবেষণা করবো বলে দুটো চারা বুনেছি ছোট মাটির টবে। আসলে দেখতে চেয়েছিলাম, বরবটি লতা এতো কম জায়গায় বড় হয় কিনা! আমাকে অবাক করে দিয়ে বেশ বরবটি ফলিয়ে তারা এখনও সুন্দর করে বসবাস করছে সেই টবে। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি বরবটি এতো ছোট জায়গা নিয়ে বড় হয় বা ফলন দেয়। আরেকটা বাসস্থান করেছি সেই কাওরান বাজারের একশো টাকার গামলাতে। তিনভাগ জৈবসার আর এক ভাগ মাটিতে তিনটা চারা বুনেছিলাম। তিনকোণা ছোট্ট কিন্তু তিন ফুট লম্বা মাচাং করে দিয়েছি তাদের। তারা সুস্থ সবল হয়ে বড় হচ্ছে। ফলনও দিচ্ছে ভালো। একদম শেষের চারটা চারার মাঝারি ড্রামে বাসস্থান করে দিয়েছি। মাটির মিশ্রন গামলার মতনই। তড়তড়িয়ে তারা বড় নেটের মাচাং বেয়ে উঠছে।
বরবটি গাছে জল দিতে হয় একবার। শুয়োপোকা পাতা খায়। তাই সজাগ থাকতে হয় বড় না হওয়া অবধি। বিশেষ করে নরম লতা আগাগুলো সাবধানে রাখতে হয়। বরবটি লতা একবার বড় হয়ে গেলে আর চিন্তা থাকে না। নিজেদের মতন গুছিয়ে থাকে। সকালে ফুল ফোটে। সন্ধ্যার মাঝেই সুতার মতন শূঁর বের হয় সে ফুলে। দুই দিন পর সেই শূঁরটিই সবুজ বরবটি হয়ে চোখে ধরা দেয়।
বরবটি সবচেয়ে লক্ষী সবজি। কারণ খুব কম সময়ে তারা বড় হয়। অল্প জায়গা লাগে। মাটিও তেমন বেশী লাগে না। ফুল আসবার পাঁচ ছয়দিনের মাথায় বরবটি খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। খুব নীরবে এবং অল্প যত্নে বরবটি চাষাবাদ করা যায়। টব, গামলা বা ড্রাম সবগুলোতেই তারা একই রকম ভাবে বাড়ে, আমার গবেষণায় তাই বলে। তবে টব হলে একটি চারা বুনলে ভালো। ফলনে সুবিধা হয়। বরবটির ফুল ঝরে পড়ে না। প্রতিটি ফুলেই বরবটি হয়। এটা হচ্ছে এই সবজির সবচেয়ে বড় গুণ।
সময় এখনই, বরবটি চাষের। খালি টব হলেই হবে। বীজ না থাকলে কষ্ট করে নার্সারি থেকে চারা এনে বুনে দিতে পারেন। ছাদে বা বারান্দায়। প্রথম সাতদিন একটু চোখে চোখে রাখলেই আর চিন্তা থাকবে না। প্রতি সপ্তায় একবেলার সবজি আপনার রান্না ঘরে পৌঁছে যাবে। একটু বেশি যত্ন নিতে চাইলে ফেলে দেয়া সবজিগুলো বরবটির গোঁড়ায় দিয়ে দিবেন। একবেলা জল। লক্ষী লতা বরবটির জয় হোক সবার ঘরে ঘরে। চাষী পরিবার, সুখি পরিবার।
সারাবাংলা/এসএস