বয়সভেদে চাই ভিন্ন খাবার
৯ নভেম্বর ২০২২ ১২:৪৯
বয়স অনুযায়ী দেহে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে হয়। কোন বয়সে কী ধরনের পুষ্টির চাহিদা থাকে তা জানা দরকার। অনেকের ধারণা, একই ডায়েট চার্ট সারাজীবন অনুসরণ করা যায়। আবার কেউ কেউ ভাবেন, সব বয়সে একই ধরনের খাবার খেতে হবে। এই ধারণাগুলো ভুল। বয়স, লিঙ্গ ও শারীরিক সমস্যাভেদে একেকজনের জন্য একেকধরনের খাবার উপযোগী।
আসুন জেনে নেই, সুস্থ থাকতে হলে কোন বয়সে কী ধরনের খাবার খাওয়া দরকার—
১৩ থেকে ১৯ বছর
১৩ থেকে ১৯ বছর- এই বয়সকে বলা হয় টিনএজ। এসময় ছেলে, মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন ঘটে। টিনএজ বয়সে দেহে ব্যাপক পুষ্টির চাহিদা থাকে। তাই এই বয়সে প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। প্রতিবেলায় যেন ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রনজাতীয় খাবার থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।
অনেকে মনে করেন, টিনএজ বয়সে ফাস্টফুড খেলে ক্ষতি হয় না। এই ধারণা একেবারেই ভুল। ফাস্টফুড খেলে ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায় এবং ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দেয়। ফলে দেহে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।
২০ থেকে ২৯ বছর
এই বয়সকে বলা হয় যৌবন। টিনএজ বয়সে যেসব খাবারের প্রতি আসক্তি থাকে, এই পর্যায়ে সেগুলো পুরোপুরি বাদ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। যেমন চিপস, চকলেট কিংবা আইসক্রিম। তবে এই খাবারগুলো পরিমাণে অল্প খেতে হবে।
এই বয়সে শর্করা ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। মিল্ক চকলেটের বদলে ডার্ক চকলেট, মিষ্টি দইয়ের বদলে টক দই, সাদা পাউরুটি না খেয়ে লাল পাউরুটি, বাদাম, মুরগির মাংস, ফলিক এসিড এবং ওমেগা ৩ জাতীয় খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
৩০ থেকে ৩৯ বছর
এই বয়সে শারীরিক অনেক পরিবর্তন আসে। তাই এই পর্যায়ে দরকার সঠিক ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা। বিশেষ করে হাড় সুস্থ রাখতে খুবই সচেতন থাকা দরকার। প্রোটিনজাতীয় খাবার খেতে বেশি খেতে হবে। ডিম, মুরগি, ডাল, বাদাম, শস্যদানা এই খাবারগুলো প্রোটিনের ভালো উৎস। এছাড়া ফ্যাট ছাড়া দুধ ও টক দই খেতে হবে নিয়মিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ফুড সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে।
৪০ থেকে ৪৯ বছর
রক্তচাপ এবং বিপাক প্রক্রিয়া ঠিক রাখার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে এই পর্যায়ে। খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে আঁশজাতীয় খাবার। ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখার জন্য ব্রকলি, শস্যদানা ও শাক-সবজি খেতে হবে। জাঙ্ক ফুড একেবারেই বাদ দিতে হবে। কখনও খেতে ইচ্ছা করলে বাসায় বানানো ভেজিটেবল বার্গার খাওয়া যেতে পারে। কেনার চেয়ে বাসায় বানানো স্যান্ডউইচ, দই, মাখন বেশি উপকারি। প্রতিবেলার খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকতে হবে।
৫০ থেকে ৫৯ বছর
এই বয়সে বিপাক প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়। ফলে যে খাবারগুলো সহজে হজম হয় সেগুলো খেতে হবে। মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। ফ্যাটবিহীন দুধ ও টক দই খেতে পারেন। দুধের সঙ্গে মধু মেশানো যেতে পারে।
এসময় চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে পারে। বয়সের ছাপ এড়ানোর জন্য ব্রকলি, ব্লুবেরি, বাদাম, শাক-সবজি খেতে হবে। এই বয়সে আপেল খুবই উপকারি। আপেল খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দেহে আঁশের চাহিদা পূরণ হয়।
৬০ বছরের পর
জীবনের পড়ন্ত বেলায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রোগবালাই দেখা দেয়। তাই এসময় আরও সচেতনতা দরকার। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে ৫ ধরনের শাকসবজি ও ২ ধরনের ফল। আয়রনজাতীয় খাবার খেতে হবে। তবে যে খাবারগুলো আপনার হজমে সমস্যা করবে না সেগুলো খেতে হবে। রান্না করা খাবারে লবণের পরিমাণে কমাতে হবে। দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি খেতে হবে। জাঙ্ক ফুড ও মিষ্টিজাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিতে হবে।
সুস্থ থাকতে হলে খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে পুষ্টিকর খাবার। পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়ামও সুস্থ থাকার অন্যতম অনুষঙ্গ। কোন বয়সে কী ধরনের ব্যায়াম উপযোগি তা চিকিৎসকের কাছে জেনে নেওয়া উচিত।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি