চোখ জুড়ায়, মন ভোলায়
২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:০০
বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে লালবাগ কেল্লা অন্যতম। এটি পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত। পুরান ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল লালবাগে ১৭ শ শতকে নির্মিত লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। লাল ইট, মার্বেল ও কষ্টিপাথর দিয়ে নির্মিত এই কেল্লা মূলত মুঘল শাসন ও তাদের জৌলুসময় যাপিতজীবনের নীরব সাক্ষী বহন করে। লালবাগ কেল্লা বাংলাদেশের মোগল আমলের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন, যাতে একই সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টিপাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙ-বেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন বৈচিত্র্যময় সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত।
তিনশ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলা এই দুর্গ তার স্থাপত্য কৌশল, ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের কারণে এখনো তা জনসাধারণের কাছে দর্শনীয় স্থান। কেল্লার ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে কেল্লার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। লালবাগ কেল্লায় রয়েছে পাতাবাহার আর ঝাউগাছের সারি। রঙ্গন, গোলাপ, গাদাসহ রকমারি ফুলের গাছ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, লালবাগ কেল্লার নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মুহাম্মদ আজম শাহ। তিনি বুড়িগঙ্গার তীরে এক প্রাসাদ-দুর্গ নির্মাণ কাজে হাত দেন। পিতার নামানুসারে এর নাম রাখেন আওরঙ্গবাদ কেল্লা বা আওরঙ্গবাদ দুর্গ। পরবর্তী সময়ে এর নাম হয় লালবাগ কেল্লা। তবে অনেকে মনে করেন, এ এলাকায় লাল গোলাপের বাগান ছিল। সেই থেকে এলাকার নাম এবং এলাকার নামে নামকরণ হয় লালবাগ কেল্লার।
লালবাগের কেল্লার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার একটি হলো পরীবিবির সমাধি। যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শায়েস্তা খাঁর কন্যা ‘ইরান দুখত রাহমাত বানু’ বা ‘পরীবিবি’। লালবাগ কেল্লার তিনটি বিশাল দরজার মধ্যে বর্তমানে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত মাত্র একটি দরজা। এই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর সোজা চোখে পড়ে পরীবিবির সমাধি। পরীবিবির সমাধির পশ্চিমে রয়েছে শাহী মসজিদ। ১৬৭৮-৭৯ সালে বাংলার সুবেদার থাকাকালীন সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি এদেশের প্রচলিত মুঘল মসজিদের একটি আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানেও মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লালবাগ কেল্লার দরবার হল ও হাম্মামখানাটি বর্তমানে সর্বসাধারণের দেখার জন্য একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে, যা পূর্বে নবাব শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ছিল আর এখান থেকেই তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।
হাম্মামখানা ও দরবার হল সমৃদ্ধ সুবেদার শায়েস্তা খাঁর সুরম্য দ্বিতল প্রাসাদটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাদুঘরের নিচতলায় রয়েছে সৈনিকদের ব্যবহৃত ১৯ শতকের বর্শামূল ও বর্শাফলক, লোহার জালের বর্ম, ছোরা ও খাপ, গুপ্তি, ঢাল, তরবারি, দস্তানা, পারকাশন লক বন্দুক ও রাইফেল, তীর, ধনুক, শিরস্ত্রাণ, বক্ষবর্ম, পারস্যের তৈরি বাসনপত্র, কামানের গুলি তৈরির ছাঁচ, ফ্লিন্ট লক পিস্তল, পারকাশন লক পিস্তল ও সিসার গুলি, সৈনিকের পোশাক, ধাতুর তৈরি সুরার পাত্র, চীনা গামলা, ফারসি ভাষার কিতাব আদব-ই-আলমগীরি, সুরা ইউসুফের তাফসির, আরবি ও ফারসি তাফসির, পবিত্র কোরআন শরিফসহ মুঘল আমলের আরও নানা দুর্লভ নিদর্শন যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
সারাবাংলা/এসবিডিই
চোখ জুড়ায়- মন ভোলায় বেড়ানো মো. মেহেদী হাসান অর্ণব লাইফস্টাইল