Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্ট্রোক: যখন প্রতিটি মূহুর্তই যখন মূল্যবান

তামান্না সুলতানা
২৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৪১

মানুষকে স্ট্রোকের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করা ও স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালন করা হচ্ছে। স্ট্রোক বলতে সাধারণত মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাকেই বুঝানো হয়। সারাবিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী যত অসংক্রামক ব্যাধি আছে, সেগুলোর মধ্যে মৃত্যুর দিক থেকে হৃদরোগের পরেই স্ট্রোকের অবস্থান। এছাড়া পঙ্গুত্বের অন্যতম বড় কারণ স্ট্রোক। দিন দিন এতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

উন্নত বিশ্বের তুলনায় নিম্ন আয়ের দেশে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি বলে মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ২ কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরা হয়, তাহলে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে ১১ জনই স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। স্ট্রোকের রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে রোগীকে পঙ্গুত্ব বরণের পাশাপাশি তার মৃত্যু পর্যন্ত পর্যন্ত হতে পারে। অন্যদিকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া গেলে রোগীর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

বিজ্ঞাপন

স্ট্রোক কি হার্ট নাকি মস্তিষ্কের রোগ?

বাংলাদেশের অনেকেরই এ বিষয়ে ধারণা পরিষ্কার নয় যে, স্ট্রোক কি হার্ট নাকি মস্তিষ্কের রোগ? স্ট্রোকের সাথে অনেকে হার্ট অ্যাটাককে গুলিয়ে ফেলেন। আসলে মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে গেলে স্ট্রোক হয়। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কারণ এই রক্তের মাধ্যমেই শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছায়। কোনো কারণে মস্তিষ্কের কোষে যদি রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায় তখনই স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।

স্ট্রোক কেন হয়?

স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ উচ্চ রক্তচাপ। তবে আরও কয়েকটি কারণে স্ট্রোক হতে পারে। যেমন- হৃদরোগ থাকলে। রক্তে কোলেস্টোরেলের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে। মানসিক চাপ, অতিরিক্ত টেনশন, অবসাদের মতো মানসিক সমস্যা থাকলে। সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে, কায়িক পরিশ্রম না করলে, ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে। অস্বাস্থ্যকর অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে। বিশেষত অতিরিক্ত তেল ও চিনিযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবার ও পানীয় খেলে।
ধূমপান, তামাক-জর্দা বা অন্যান্য মাদক সেবন, মদপান।

স্ট্রোক কয় ধরণের?

স্ট্রোক সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। মাইল্ড স্ট্রোক, ইসকেমিক স্ট্রোক ও হেমোরেজিক স্ট্রোক। মাইল্ড স্ট্রোকে রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ সাময়িক বন্ধ হয়ে আবারও চালু হয়। এটি মূলত বড় ধরণের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ। ইসকেমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের ও শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধে। হেমোরেজিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়ে রক্তপাত হয়। স্ট্রোক, মস্তিষ্কে কতোটা ক্ষতি করবে এটা নির্ভর করে এটি মস্তিষ্কের কোথায় ঘটেছে এবং কতোটা জায়গা জুড়ে হয়েছে, তার ওপর।

স্ট্রোকের লক্ষণ কী?

স্ট্রোকের লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো- আচমকা হাত, পা বা শরীরের কোনও একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া। হাত ওপরে তুলতে না পারা। চোখে ঝাপসা বা অন্ধকার দেখা। কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া। ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া। জিহ্বা অসাড় হয়ে, মুখ বেঁকে যাওয়া। খাবার মুখ থেকে পড়ে যাওয়া বা সাধারণ কোনো কিছু ওঠাতে ব্যার্থতা।
শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে পড়ে যাওয়া অথবা জ্ঞান হারানো। হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাজ পড়ার মতো তীব্র মাথাব্যথা। বমি বমি ভাব, বমি, খিঁচুনি হওয়া।

স্ট্রোকের চিকিৎসা

স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে বিছানায় বা মেঝেতে কাত করে শুইয়ে দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীকে বাতাস করতে হবে, অথবা আলো বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। রোগীর আশেপাশে ভিড় করে কান্নাকাটি করা যাবে না। গায়ে থাকা কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে যেন রোগীর শ্বাস নিতে অসুবিধা না হয়। রোগী জ্ঞান হারালে তার মুখ খুলে দেখতে হবে কিছু আটকে আছে কিনা। ভেজা কাপড় দিয়ে মুখে জমে থাকা লালা, খাবারের অংশ বা বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে। এ সময় রোগীকে পানি, খাবার বা কোন ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। কারণ একেক ধরণের স্ট্রোকের ওষুধ একেক রকম।

স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে যা করবেন

নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে স্ট্রোকের ঝুঁকি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা। শরীরচর্চা বা নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করা। প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমানো। ওজন ঠিক রাখা। অতিরিক্ত তেলচর্বি ও চিনি-লবনযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড এড়িয়ে পুষ্টিকর ডায়েট মেনে চলা। ধূমপান, জর্দা-তামাক, মাদক সেবন, মদপান এড়িয়ে চলা এবং প্রতি ছয়মাস অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।

সারাবাংলা/এসবিডিই

স্ট্রোক: যখন প্রতিটি মূহুর্তই যখন মূল্যবান