Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রচণ্ড গরমে রোগমুক্ত থাকতে কী করবেন

তামান্না সুলতানা
১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩০

গ্রীষ্মের শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা। পহেলা বৈশাখের দিন অর্থাৎ গত রোববার দুপুর দুইটায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যদিও আর্দ্রতার কারণে বাস্তবে গরম ছিল আরো বেশি। সোমবার তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। মঙ্গলবার আবার ৩৫ ডিগ্রি।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এপ্রিল মাসের বাকি সবকটি দিনে ঢাকায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তাপপ্রবাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কী করতে হবে? চিকিৎসকদের মতে, গরমের সময় শুধুমাত্র সতর্ক থেকে অনেক বিপদ এড়ানো যেতে পারে। এ বিষয়ে সারাবাংলার কথা হয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শারমীন সুলতানার সঙ্গে। বৈশাখের প্রচণ্ড গরমে রোগমুক্ত ও সুস্থ থাকতে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

তীব্র রোদ এড়িয়ে চলুন

গ্রীষ্মে সকাল ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা বেশি থাকে। এ সময় জরুরি কাজ না থাকলে বাইরে বের না হওয়াই ভাল। বাইরে বেরোনোর অন্তত ২০ মিনিট আগে শরীরের অনাবৃত অংশে সানস্ক্রিন লোশন মেখে নিন। বাইরে বেরোনোর সময় ছাতা, স্কার্ফ, সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করা, যাতে সরাসরি রোদের মধ্যে থাকতে না হয়। এ সময় চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপও ব্যবহার করা যেতে পারে। যারা মাঠেঘাটে কাজ করেন, তারা মাথায় মাথাল জাতীয় টুপি ব্যবহার করতে পারবেন, যা তাদের রোদ থেকে রক্ষা করবে।

বেশি বেশি পানি পান করুন

গরমে ঘাম হয়ে শরীর থেকে প্রচুর পরিষ্কার পানি বের হয়ে যায়, তখন ইলেট্রোলাইট ইমব্যালান্স তৈরি হতে পারে। এ কারণে এই সময়টাতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি রাখুন। সারাদিন পানিশূন্যতা কমাতে তিন-চার লিটার পানি পান করুন। শরীরে লবণের পরিমাণ ঠিক রাখতে খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি ও গ্লুকোজ গ্রহণ করুন।
লবণ মিশিয়ে পানি পান করতে পারলে আরো ভাল। ফলের জুস খাওয়া শরীরের জন্য ভাল, তবে এ জাতীয় জুস খাওয়ার সময় দেখে নিতে হবে সেটি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে তৈরি কিনা। খোলা, পথের পাশের দুষিত পানি বা সরবত এড়িয়ে চলতে হবে।

অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ব্যায়াম বাদ দিন

এই গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। পারলে খুব ভোরে খোলা বাতাসে হেঁটে আসুন। ফিটনেস বজায় রাখার জন্য সাঁতার কাটতে পারেন। যোগ ব্যায়াম, মেডিটেশন করতে পারেন। ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। এতে দেহ যেমন ঠান্ডা থাকবে, মনেও শান্তি থাকবে।

সুতির হালকা রঙের কাপড় পরুন

গরমের এই সময়টায় জিন্স বা মোটা কাপড় না পরে সুতির নরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। এ ধরণের কাপড়ে অতিরিক্ত ঘাম হবে না এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করবে। গরমের সময় কালো বা গাঢ় রঙের কাপড় এগিয়ে সাদা বা হালকা রঙের কাপড় পরিধান করা ভাল, কারণ হালকা কাপড় তাপ শোষণ করে কম।

গরমের সময় খোলামেলা জুতা পরা উচিত, যাতে পায়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। কাপড় বা সিনথেটিকে বাদ দিয়ে চামড়ার জুতা হলে ভাল, কারণ এতে গরম কম লাগে। সম্ভব হলে মোজা এড়িয়ে চলা যেতে পারে।

ভারি খাবার এড়িয়ে চলুন

ভারী খাবার ও ফাস্টফুড হজম করতে সময় বেশি লাগে। ফলে সেটি শরীরের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে এবং শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সেটি আরো বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। খাবারের মেন্যু থেকে গরমের সময় তেলযুক্ত খাবার, মাংস, বিরিয়ানি, ফাস্টফুড ইত্যাদি বাদ দেয়া যেতে পারে। বরং শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খাওয়া যেতে পারে।

আরেকটা বিষয় গরমে খাবার-দাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাসী খাবার বা আগের দিন রান্না করা খাবার খাওয়ার আগে দেখে নিতে হবে যে, সেটি নষ্ট কিনা। এ জাতীয় খাবার খেলে ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানাসহ পেটের অসুখ হতে পারে।

চা, কফি, কোমল পানীয় পরিহার কমিয়ে লেবুর শরবত, আখের রস, ডাবের পানি, তরমুজ, পেঁপে ও বেলের শরবত নিয়মিত পান করুন। প্রতি বেলার খাদ্য তালিকায় টক দই ও সালাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। হালকা সহজপাচ্য কম মসলাযুক্ত খাবার, শাকসবজি, স্যুপ, মাছের ঝোল, ডাল, টমেটোর টক খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। গরমের সময় চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

ঘরে পানি ভর্তি বালতি রাখুন

এসি না থাকলেও সমস্যা নেই। ঘরের ভেতর ফ্যানের নীচে একটি পানি ভর্তি বালতি রাখুন, যা ঘরকে খানিকটা ঠাণ্ডা করে তুলবে। ঘরে হালকা রঙের পর্দা ও বিছানায় হালকা রঙের চাদর ব্যবহার করুন। ফোমের বালিশ ব্যবহার না করে শিমুল তুলার বালিশ ব্যবহার করুন। দিনের বেলায় ঘরে বাতি নিভিয়ে রাখুন। ঘরের মধ্যে একটি-দুটি টবে গাছ রাখুন। স্নিগ্ধ সতেজতা আনতে ঘরে বেলিফুল রাখতে পারেন।

প্রতিদিন গোসল করুন

গরমের সময় প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করতে হবে, যা শরীর ঠাণ্ডা রাখবে। দিনে একাধিকবার হাত, মুখ, পায়ে পানি দিয়ে ধুতে পারলে ভাল। বাইরে বের হলে একটি রুমাল ভিজিয়ে সঙ্গে রাখতে হবে, যা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর মুখ মুছে নেয়া যাবে।

হিট স্ট্রোকের বিষয়ে সচেতন থাকুন

প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে মাংসপেশি ব্যথা, দুর্বল লাগা ও প্রচণ্ড পিপাসা হওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে প্রেশার পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সারাবাংলা/এসবিডিই

তামান্না সুলতানা প্রচণ্ড গরমে রোগমুক্ত থাকতে কী করবেন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর