Saturday 05 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

[পর্ব-২৩] ছাদবাগানে চাষীর ছোট বড় লড়াই


২৯ মে ২০১৮ ১৫:৫৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছাদবাগানে আর কৃষি চাষাবাদে পার্থক্য একটাই, তা হচ্ছে জমির পরিধি। ছাদবাগান একটা সীমিত জায়গায় করা হয়। আর কৃষি চাষাবাদ একরকে একর জমিতে বিস্তৃত। যে কোন সাধারণ কৃষকের মতই প্রতি মৌসুমে ছাদবাগানের নগরচাষীরা ঝড়, বৃষ্টি, খরা, পোকামাকড়, শিলাবৃষ্টি, পাখি, মৌমাছি ইত্যাদীর মতন সব রকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সাথে লড়াই করে থাকে। লড়াইটা একার। লড়াইয়ের জয়টা সবার। আমার এই লড়াই প্রায় ছয় বছর ধরে চলছে।

ছাদবাগানে কাজ করছেন শাওন মাহমুদ

 

বৈশাখ আসবার আগ দিয়ে কালবোশেখী ঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় আমার। বড় গাছগুলোর ড্রাম বা টবগুলো যত সম্ভব একে অন্যের সাথে জড়িয়ে দড়ি বেঁধে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হয়।  এগারো তলার উপরে এবং সামনে হাতির ঝিল থাকায় একদম খোলা ছাদে বাতাসের ঝাপটা অত্যাধিক থাকে। তাছাড়া গত দুই বছর ধরে ঝড়ের মাত্রা অধিক হওয়ায় আপনার যদি বারান্দাতেও বড় গাছ থেকে থাকে, তাদেরও এ সময়টায় গ্রিলের সাথে বেঁধে রাখলে শিকড় উপড়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম হয়। এই বৎসর হঠাৎ করে ঝড়ের ঝাপটা এত বেশি এসেছিল যে বড় গাছগুলো উপড়ে না গেলেও ডালপালা ভেঙে একাকার হয়ে গিয়েছিল। লতানো গাছগুলো সরানোর আগেই সব ছিঁড়েখুঁড়ে টবসহ টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

 

কালবোশেখী ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টি আরেক সর্বনাশা বিপদের নাম। বছরে একবারও যদি বৃষ্টির সাথে শিলা পড়ে তাহলে গাছের যে ক্ষতি হয় তা নতুন পাতা বা ডাল না আসা পর্যন্ত আর কিছু করবার থাকে না। এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জননী পৃথ্বীর উপর ভরসা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। গত বছরের শিলাবৃষ্টির চিহ্ন আমার ছাদবাগানের আম, জামরুল আর পেয়ারা গাছগুলোতে এখনও রয়ে গেছে। যদি আপনার ছাদে ঢাকা জায়গা থাকে তাহলে ছোটখাটো গাছগুলোকে সরিয়ে সেখানে নিয়ে যাওয়া ভালো। মৌমাছি আর ভিমরুলও শিলার মতন ঠেকানো দায়। শীত আর বর্ষাকালে এদের আনাগোনা অত্যাধিক থাকে। পরাগায়ণ প্রচুর সাহায্য করলেও মধু আহরণের সাথে সাথে জামরুল, সোনালু, জারুল গাছের কচি পাতা মিষ্টি হওয়ায়, সেগুলোও খেয়ে যায়।

 

চৈত্র, ফাল্গুন, জৈষ্ঠ্য বা ভাদ্রের খরা আরেক বিপদ ডেকে নিয়ে আসে। আমার ছাদবাগান একেবারে পূর্ব পশ্চিম দিক জুড়ে অবস্থিত। যার কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্য মাথার উপরে অবস্থান করে পুরোটা ছাদবাগানে। সকালে জল দিলে বিকেলে গিয়ে দেখা যায় নরম গাছগুলো সব হেলে আছে। এই মাসগুলোতে আমি চেষ্টা করি দিনে একবার পরিমিত জল দেয়ার পরও শিউলী, কামরাঙা, জামরুল, আলুবোখরার মতন নরম গাছগুলোতে আরেকবার জল দেয়ার। যদি সে সময়ে সবজি হিসেবে করল্লা, চালকুমড়া, চিচিংগা বা বরবটি থেকে থাকে, সেগুলোতে অবশ্যই দু’বার জল দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু গ্রীষ্মকালে দেশি ফলগুলো পাকে, তখন পাকা ফল খাওয়ার জন্য পাখীদের আনাগোনা বাড়ে অনেক। জামরুল, পেয়ারা, আম জাতীয় ফলগুলোকে এসময় বড় নেট দিয়ে ঢেকে রাখলে তাদের অত্যাচার থেকে খানিকটা হলেও রেহাই পাওয়া যায়।

 

আমাদের ষড়ঋতুর দেশ। ছাদবাগান করলে মাথায় রাখতে হবে ঋতুর প্রকৃতি বা চলাচলকে। আষাঢ় শ্রাবণ – বর্ষাকাল হলেও, বোশেখ আর ভাদ্রতে অনেক সময় হঠাৎ করে ভারি ও দীর্ঘ সময়ের জন্য বৃষ্টি হয়ে থাকে। টানা বর্ষণে বড় গাছগুলোর তেমন কোন সমস্যা হয় না। মরিচ, কুমড়োর মতন নরম যে কোন সবজির গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ছোট জায়গায় বাগানটা থাকলে টানা বৃষ্টির সময়গুলোতে শক্ত ত্রিপল টাঙিয়ে সবজি গাছগুলো তার নিচে রাখলে আর এই ভয় থাকে না। তাছাড়া প্রতিদিন টবগুলো থেকে জমে থাকা জল ফেলে দিতে হবে কষ্ট করে। শামুক, কেঁচো, কেড়িপোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ছাদের মেঝেতে সপ্তায় একদিন ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে। আমি মাঝে মাঝে ডিটারজেন্ট পাউডার জলের সাথে গুলিয়েও দেই। অনেক কাজে দেয়।

অতি বৃষ্টি এবং অতি খরার মতন শীতের সময়কার অতি কুয়াশাও গাছপালার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শীতকালীন সবজির চারা থাকবার সময়টা তাদের উপরে পাতলা পলিথিন ফুটো করে ঢাকনী দিয়ে দিলে ভালো। অনেক বেশি কুয়াশায় দেখেছি যে লাউ বা শশা পাতায় কালো কালো ছোপ হয়। বিকেলে বা সকালে গাছে ছিটিয়ে ছিটিয়ে জল দিলে তেমন করে আর কুয়াশা ধরতে পারে না। তারপরও দেখেছি সবচেয়ে বেশি ঢেঁরশ গাছ থেকে মিলিবাগ ছড়ায়। সময় মতন ছাই না দিলে অন্যান্য গাছেও আক্রমণ করে তারা। শীতের শাকের বীজ ছড়ানোর সপ্তাহ খানেক আগে মাটিতে পটাশ দিয়ে রেখে দিলে ঝরঝরে হয়ে ওঠে মাটি। শামুক বা কেঁচো মরে যায়, তাই নরম কচি শাকের চারা তাদের হাত থেকে বেঁচে যায় অবলীলায়। যেহেতু আমি কীটনাশক বা সার ব্যবহার করি না। তাই পোকামাকড়ের পরিমাণও অনেক ছাদবাগানে। তবে কীটনাশক হিসেবে আমি ছাই ব্যবহার করে থাকি। এতে মিলিবাগ বা শুয়োপোকার মতন যে কোন পোকার বংশবৃদ্ধি প্রতিহত করা যায়।

 

আমার গত ছয় বছরের অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু পারলাম, ছোট করে একটু সে লড়াইয়ের কথা  জানালাম। আরেকটা কথা, মরা ডাল ছেঁটে ফেলবেন সময় মতন আর টব বা ড্রামের পাশে বা নিচে ঝরা পাতা জমতে দিবেন না। কষ্ট করে গাছের বাসস্থানের মেঝেটা পরিষ্কার রাখলে যে কোন পোকামাকড় বা অসুখ দূরে থাকে। আপনাদের যদি একটুও কাজে লেগে থাকি, তাতেই ধন্য হব। সবাই মিলে আনন্দে চাষাবাদ করুক।

চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।

 

সারাবাংলা/এসএস

 

 

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর