কমলালেবু কেন খাবেন
৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৪
সারাবছর পাওয়া গেলেও ‘কমলা’ মূলত শীতকালীন ফল। আর ক’দিন পরেই আসতে চলেছে শীত। বলা যায়, এই সময়েই সুস্বাদু হয়ে ওঠে লেবু জাতীয় ফলের স্বাদ। অন্যদিকে শীতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ত্বকে রুক্ষতা দেখা দেয় আবার হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। কমলা এমন একটি ফল যা শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
পুরোপুরি পাকা আর রসালো কমলার খোসা হবে টানটান আর ওজনে কিছুটা ভারী হবে। কমলা এমন একটি সুস্বাদু ফল যা, শুধু খাওয়া যায়, রস করে খাওয়া যায় আবার সালাদ ও নানারকম মিষ্টান্নেও কমলার ব্যবহার হয়।
যেকোন বয়সের মানুষের পছন্দের ফলের তালিকায় কমলার নাম আসবেই আসবে। আসুন জেনে নেই কমলার কিছু গুনাগুণ।
ভিটামিন সি-তে ভরপুর
ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেল থেকে মুক্ত করতে সক্ষম। এভাবে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। চেষ্টা করুন প্রতিদিন কমলা লেবু খেতে। একটি মাত্র কমলালেবু আমাদের সারাদিনের ভিটামিন সি এর চাহিদার ১১৬.২ শতাংশ মেটাতে সক্ষম।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রতিদিন কমলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কমলার ভিটামিন সি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা ও কানের নানা ধরণের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে কমলা লেবুতে থাকা ভিটামিন সি।
সুস্থ ত্বকের জন্য
কমলায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ত্বকের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি ত্বকে বয়সজনিত কারণে তৈরি নানা সমস্যার জন্য দায়ী ফ্রি র্যাডিকেল তৈরি হতে বাঁধা দেয়। বলা হয় প্রতিদিন কমলালেবু খেলে পঞ্চাশ বছর বয়সেও তরুণ দেখায় আমাদের ত্বক।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
কমলা লেবুতে প্রচুর ভিটামিন বি৬ রয়েছে। এটি রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। আবার কমলায় ম্যাগনেশিয়াম থাকায় তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
আমেরিকান ও কানাডিয়ান গবেষকদের বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে লেবু জাতীয় ফলের খোসায় পলিমেথোক্সিলেটেড ফ্ল্যাভোনিস (PMFs) নামক উপাদান থাকে যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধে নানারকম সাইড এফেক্ট থাকতে পারে কিন্তু লেবুজাতীয় ফলের খোসায় সেই ভয় নাই।
রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যআঁশ থাকে যা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য কমলা অত্যন্ত উপকারি। তার উপর কমলা লেবুতে সাধারণ রাসায়নিক গঠনের চিনি থাকে ও ফ্রুকটোজ থাকে। এতে করে কমলা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে চিনির মাত্রা অত্যধিক বাড়িয়ে দেয় না। গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্সে ৫০ এর নীচে থাকা খাবারে চিনির পরিমাণ কম থাকে। কমলায় এটা ৪০, তাই যেকোন বয়সীদের জন্যই কমলা অত্যান্ত উপকারি ফল। কিন্তু একসঙ্গে একগাদা কমলা খাওয়াও আবার ভালো নয়। এতে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় অথবা ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই যত উপকারিই হোক না কেন, দিনে একটির বেশি কমলা না খাওয়াই ভালো।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
কমলালেবুতে ডি-লিমোনিন থাকে যা ফুসফুসের ক্যানসার, ত্বকের ক্যানসার এমনকি স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। কমলায় থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়িয়ে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। সাধারণত দেখা যায় ডিএনএ-তে পরিবর্তনের (মিউটেশন) কারণে ক্যানসার ধরা পড়ে যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি। তাছাড়া কমলায় থাকা খাদ্যআঁশও ক্যনসারের হাত থেকে রক্ষা করে।
শরীরকে অ্যালকালাইজ করে
কমলা লেবুতে এসিডের পরিমাণ বেশি হলেও এটাতে প্রচুর পরিমাণ অ্যালকালাইন খনিজ আছে যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কমলালেবু অনেকটাই লেবুর মতো অ্যালকালাইনযুক্ত খাবার।
চোখের জন্য ভালো
কমলায় প্রচুর পরিমাণ ক্যারোটেনয়েড ও ভিটামিন এ থাকে। এগুলো চোখের মিউকাস মেমব্রেন সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পেশীতে ক্ষয়জনিত সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে যার ফলে অনেকসময় অন্ধত্ব দেখা দেয়। এই ক্ষয় প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ আলো শুষে নিতেও সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে
কমলা লেবুতে একইসঙ্গে দ্রবনীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্যআঁশ রয়েছে। এটি আমাদের পাকস্থলী ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। তাছাড়া কমলার খাদ্যআঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ভূমিকা রাখে।
মানুষ কখন থেকে কমলা লেবু খায়
চীনে কমলার চাষ শুরু হয় প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। এরপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব ভারতে কমলা চাষ শুরু হয় । খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে রোমানরা ভারত থেকে কমলা নিয়ে চাষ শুরু করে। অন্যদিকে ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯৩ সালে হাইতিতে কমলা রোপন করেন। এরপর ১৫১৮ সালের দিকে ব্রাজিলের পরপরই পানামা ও মেক্সিকোতে কমলা চাষ শুরু হয়। অন্যদিকে স্প্যানিশ অনুসন্ধানকারী হুয়ান পঞ্চ ডি লিওন আমেরিকায় প্রথমবারের মতো কমলা চাষের সুচনা করেন ১৫১৩ সালে। ভ্যালেন্সিয়া, ব্লাডি অরেঞ্জ, ন্যাভেল আর পার্সিয়ান জাতের কমলা সবচেয়ে মিষ্টি হয়।
মাথায় রাখুন-
ঠান্ডার চেয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার কমলার রস করা সহজ। তাই রস করার ইচ্ছা থাকলে ফ্রিজ থেকে বের করে কমলা কিছুক্ষণ বাইরে রাখুন অথবা হাতের তালুতে কিছুক্ষণ ঘষে নিন।
ভিটামিন সি বাতাসের সংস্পর্শে আসলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই কমলার খোসা ছাড়ালে বা কাটলে বেশিক্ষণ বাইরে খোলা অবস্থায় না রেখে দ্রুত খান।
(সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং ইন্টারনেট)
সারাবাংলা/এসবিডিই