Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানুষের হিংস্রতা কেন বাড়ছে?

গোলাম মোস্তফা মিলন
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪১

মানুষের হিংস্রতা বাড়ছে ক্রমাগত। প্রতীকি ছবিটি ফ্রিপিক ডট অর্গ থেকে সংগৃহীত

হতাশা থেকে হিংস্রতার জন্ম- কথাটি বলেছিলেন গবেষক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। একটি সভ্য ও সুস্থ সমাজেও হঠাৎ একটি বীভৎস ঘটনা যে কেউ ঘটাতে পারে। তার জন্য সেই সমাজ দায়ী নয়। কিন্তু একই ধরনের বর্বরতা যখন সমাজের সাধারণ মানুষের প্রবণতায় পরিণত হয়, তখন গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রকে তার দায় বহন করতে হয়। মানুষের জীবন জীবনই, তা ভিখারির হোক, পাগলের হোক, প্রতিবন্ধীর হোক বা রাজা-বাদশাহর হোক। স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে কারও কিছু বলার নেই। দৈবদুর্বিপাকে বা দুর্ঘটনায় অপমৃত্যু নিয়ে মানুষ দুঃখ করে, তবে তা নিয়তি হিসেবেই মেনে নেয়। কিন্তু জনতা যখন একজন অপরিচিত মানুষকে রাস্তাঘাটে দিনদুপুরে পিটিয়ে হত্যা করে, তখন তা আদিম বর্বরতাকে হার মানায়।

বিজ্ঞাপন

সব মিলিয়ে এক অস্থির সময় চলছে যেন চারিধারে। অতিরিক্ত রাগের বশে অনেকেই ভুল কাজ করে ফেলেন। এর ফলে পারিবারিক শান্তি নষ্ট হয়। পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও দুর্দশা নেমে আসে। এজন্যই বলা হয়, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। ভালো লাগার কারণে মানুষ যেমন খুশি হয়ে থাকেন; ঠিক তেমনই খারাপ লাগার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ পায়। তবে খারাপ লাগলেই যে রাগে ফেটে পড়তে হবে, তা কিন্তু নয়। বরং ঠান্ডা মাথায় যে কোনওও সমস্যার সমাধান দ্রুত করা সম্ভব। যদিও রাগ মানুষের স্বাভাবিক অভিব্যক্তি। তবে অতিরিক্ত রেগে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ার বিষয়টি মোটেও স্বাভাবিক নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত রেগে যাওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। মাদকাসক্তি কিংবা মানসিক রোগের কারণেই বেশিরভাগ মানুষ অতিরিক্ত রেগে যান।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রে যখন আইনের শাসন থাকে, ন্যায়বিচার থাকে, মানুষের মনে শান্তি থাকে, তখন অপরাধের মাত্রা থাকে খুব কম। অব্যক্ত চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। অব্যক্ত ক্ষোভ ও হতাশার কারণে অসুখী মানুষের মধ্যে নির্যাতনস্পৃহার প্রবণতা দেখা দেয়। শক্তিমানের অপকর্মে যখন প্রতিবাদী হওয়ার পরিবেশ থাকে না, তখন অসহায় ও দুর্বলকে নির্যাতন করে একশ্রেণির মানুষ অপার আনন্দ পায়। গণপিটুনিতে মানুষ হত্যাকে সেই শ্রেণিতে ফেলতে পারি।

গুজব খুব বাজে জিনিস। গুজব একশ্রেণির মানুষ উপভোগও করে বটে, তবে সাড়ে পনেরো আনা মানুষ তা বিশ্বাস করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সমালোচনা করা স্বাভাবিক, কিন্তু ভেংচি কেটে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে হড়হড়িয়ে মিথ্যা কথা বলা গুজব রটানোর চেয়ে ঘৃণ্য কাজ। তাতে মানুষের মধ্যে ক্রোধের সৃষ্টি হয়। সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গুজব রটনা বা মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে। সুতরাং সামাজিক পরিবেশ সুস্থ-স্বাভাবিক রাখতে সবারই সংযত আচরণ কাম্য।

অপরাধী শনাক্ত করতে মোবাইল ফোন এখন খুব ভালো ভূমিকা পালন করছে। যেসব গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, ধারণা করি, তার সবগুলোতেই কেউ না কেউ মোবাইলে ছবি ধারণ করেছেন। অনেকগুলোতেই পুলিশ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। এই সব ঘটনার প্রতিটিতে একজন করে অপরাধীরও যদি দ্রুত বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি না হয়, তবে তা হবে রাষ্ট্রের বড় ব্যর্থতা। তাতে এ–জাতীয় হিংস্র ও নিষ্ঠুর স্বভাবের মানুষকে প্রশ্রয়ই দেওয়া হবে। এতজন নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে মারা ঠান্ডা মাথায় খুন। অপরাধ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ডই তাদের প্রাপ্য।

বাঙালি সমাজ নিষ্কলুষ ও নিষ্পাপ কখনোই ছিল না। দুর্বৃত্ত এ সমাজে চিরকালই ছিল, কিন্তু এত বেশি মাত্রায় আগে ছিল না। শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন ছিল স্বাধীনতার আগেও, প্রশাসন স্বাধীনভাবে কাজ করত। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, থানায় সার্কেল অফিসার ও বড় দারোগা রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতেন। মানুষ তাদের শুধু যে ভয় করত তা নয়, সমীহ ও শ্রদ্ধাও করত। তখন আইন-আদালত নিজস্ব গতিতে চলত। মাত্রা মতো ঘুষ-দুর্নীতি তখনো ছিল। স্বজনপ্রীতিও ছিল। কিন্তু সমান্তরাল শাসনব্যবস্থা ছিল না। আগের দিনের অশ্বারোহী বাহিনীর কথা ইতিহাস বইতে পড়েছি, এখনকার সমাজে গড়ে ওঠা বিভিন্ন বাহিনীর কাছে দুর্ধর্ষতায় তারা দুর্বল।

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক

সারাবাংলা/এসবিডিই

হতাশা হিংস্রতা

বিজ্ঞাপন

মানুষের হিংস্রতা কেন বাড়ছে?
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর