ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের মির্জাপুর শাহী মসজিদ
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:১৯ | আপডেট: ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৪৮
দেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম পঞ্চগড় জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ মির্জাপুর শাহী মসজিদ। দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। ঐতিহাসিকদের মতে, এ মসজিদের বয়স সাড়ে ৩০০ বছরের বেশি। অনেকের ধারণা মসজিদটি ষোড়শ শতকের শেষের দিকে নির্মিত। অনুমান করা হয় এ মসজিদটি ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে (সম্ভাব্য) নির্মিত হয়েছে।
তবে মসজিদের শিলালিপি থেকে বোঝা যায় ১৬৫৬ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। ভারত সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার শাসনামলে শাহী মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। স্থানীয়রা মনে করেন, মির্জাপুর গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মালিক উদ্দীন শাহী মসজিদ নির্মাণের এ মহান কাজটি করেছেন। তবে দোস্ত মোহাম্মদ শাহী মসজিদ নির্মাণের শেষ কাজটি সমাপ্ত করেন বলে ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করেন, মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এই মসজিদের আশপাশের মুসল্লীরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারেন। এবং সেই সাথে মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি মাদ্রাসা। সেখানকার ছাত্ররাও এই মসজিদে প্রতিদিন নামাজ আদায় করে থাকেন।
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম মির্জাপুর শাহী মসজিদ। নির্মাণ সালে মতপ্রার্থক্য থাকলেও ধারনা মতে প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো এ মসজিদটি এখন ওই এলাকার গর্ব। কেউ কেউ মনে করেন, মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামও প্রতিষ্ঠা করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
টেরাকোটা ফুল এবং লতাপাতার নকশা খোদাই করা রয়েছে মসজিদটির দেওয়ালে। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থ আয়তকার এ মসজিদের ছাদে পাশাপাশি তিনটি গম্বুজ ও চারকোণে ৪টি চিকন মিনার স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদের নির্মাণ শৈলীর নিপুণতা ও দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
চুন ও সুড়কি দিয়ে তৈরি মির্জাপুর শাহী মসজিদের সামনের দেওয়ালে রয়েছে সুশোভন লতাপাতা ও ইসলামী ঐতিহ্যপূর্ণ টেরাকোটা নকশাখচিত মাঝারি আকৃতির তিনটি দরজা। তিনটি দরজাতেই ছাদ ও দরজার উপরিভাগের মাঝামাঝি স্থানে বাইরের দিকে উভয় পাশে ঢালু তোরণ আকৃতির একটি অতিরিক্ত স্ফীত অংশ সংযুক্ত হওয়ায় অলঙ্করণ বিন্যাসে সৃষ্টি হয়েছে নতুনত্ব।
বর্তমানে এ মসজিদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। দৃষ্টিনন্দন মির্জাপুর শাহী মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য পর্যটক। দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যখচিত মার্বেল পাথরের এই শৈল্পিক স্থাপনাটি দেখতে হলে দেশের যেকোন জেলা থেকে যেতে হবে পঞ্চগড় জেলা শহরে। সেখান থেকে প্রায় একটি ইজিবাইক নিয়ে ১৮-২০ কিলোমিটার পূর্বে আটোয়ারি উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে গেলেই দেখা মিলবে এ মসজিদটির।
লেখক: লেখক ও সমাজকর্মী
সারাবাংলা/এসবিডিই