বাড়িতে ক্রিসমাস পার্টি? জেনে নিন প্রস্তুতির খুঁটিনাটি
২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:২৬
রাজনীন ফারজানা-
ক্রিসমাস দোরগোঁড়ায়। বড়দিনের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বিদের সবচাইতে বড় এই উৎসবে গীর্জা, নামীদামী হোটেলে আয়োজন তো হয়ই। অনেকেই নিজের বাড়িতে ক্রিসমাস পার্টির আয়োজন করেন। আজ জানিয়ে দেব বাড়িতে ক্রিসমাস পার্টির আয়োজন করতে গেলে কী কী বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
সবার আগে উপহার
একটা কথা আছে, দেওয়া সবসময়ই নেওয়ার চাইতে ভাল। বড়দিনের বড় আয়োজনেও তাই প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। এর জন্য প্রস্তুতি বেশ আগে থেকে শুরু করা ভাল। খুব দামী উপহার কিনতে হবে তা নয়। নিজ নিজ সামর্থ্য এবং রুচি অনুযায়ী একটি সুন্দর উপহার দিলেই প্রিয়জনের হাসিমাখা মুখ দেখতে পাবেন। উপহার আগে থেকেই কিনে সুন্দর করে র্যাপিং পেপারে মুড়ে রাখতে পারেন। দাওয়াতির তালিকা দেখে চেক করে দেখুন কারো জন্য উপহার কেনা বাদ গেল কিনা। বিশেষ করে শিশুদের জন্য সান্তা ক্লজের হাতে কিছু উপহার দেওয়াতে পারলে ব্যাপারটা খুবই চমৎকার হয়। উপহার হিসেবে শুভেচ্ছা কার্ড, সান্তা ক্লজের পুতুল, শিশুদের জন্য খেলনা, চকলেট বা মিষ্টিজাতীয় খাবার দিতে পারেন।
ক্রিসমাস ট্রি
বড়দিনের উৎসবে ক্রিসমাস ট্রি অন্যতম বড় আকর্ষন। এই দেশে যেহেতু আসল ক্রিসমাস ট্রি তেমন পাওয়া যায়না তাই প্লাস্টিকের ক্রিসমাস ট্রি সব বাড়িতেই রাখা হয়। শহরে অনেকে পাইন গাছ রাখে আর গ্রামের দিকে ঝাউ গাছ ব্যবহৃত হয় ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে। এই ক্রিসমাস ট্রিকে সাজানো হয় খুবই আকর্ষনীয়ভাবে। এতে ঝোলানো হয় ছোট ছোট রঙিন বল, মোজা, ছোট ছোট কাপড়ের সান্তা ক্লজ, রঙিন ফিতা ইত্যাদি। অনেকে গাছের মাথায় একটা ছোট স্টারও রাখে। ক্রিসমাস ট্রিতে মরিচবাতি বা এলঅইডি বাতি ঝোলালে তা দেখতে খুবই আকর্ষনীয় লাগে। আজকাল এলইডি বাতিই চলে বেশি। বাতির বদলে লাইট জ্বলে এমন বলও ঝোলাতে পারেন। আমাদের দেশে যেহেতু বরফ পড়েনা তাই বরফের অনুভূতি বোঝাতে অল্প অল্প করে তুলা ছড়িয়ে
রাখতে পারেন আপনার প্রিয় ক্রিসমাস ট্রিতে। সজ্জিত ক্রিসমাস ট্রির নীচেই রাখুন উপহারের প্যাকেটগুলো।
টুইঙ্কল টুইঙ্কল শাইনিং স্টার
যিশু খ্রিষ্টের আগমন বার্তা সমৃদ্ধ স্টার ঝোলানো বড়দিনের একটি অন্যতম বড় আকর্ষণ। বড়দিন উপলক্ষে দেশের প্রত্যেকটা খ্রিস্টান বাড়িতে ডিসেম্বরের ২০ তারিখ থেকেই স্টার ঝোলানো হয়। কেউ ঝোলায় ছাদে কেউবা ঘরের সামনে।
সান্তা ক্লজ এল উপহারের থলি নিয়ে
বড়দিনের আগের রাতে সান্তা ক্লজ থলি ভর্তি করে উপহার এনে প্রত্যেক শিশুর মাথার কাছে রেখে দেবে এমন স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে যায় প্রত্যেক খ্রিষ্টান শিশু। সত্যিকারের সান্তা ক্লজ হয়ত আসেনা কিন্তু বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজন সান্তা ক্লজের হয়ে এই কাজটি করে দেন। এক্ষেত্রে বড়দের মাঝে কেউ সান্তা ক্লজের বিশেষ সাদা কলার আর হাতা যুক্ত লাল পোশাক আর টুপি পরে আসলে আপনার ঘরোয়া পার্টি জমে যাবে পুরোপুরি।
বড়দিনে ঘরদোর
সজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি তো থাকবেই, ঘরসজ্জাতে রাখতে পারেন বড়দিনের আমেজ।যেমন, যিশু খ্রিষ্টের জন্ম উপলক্ষকে ধরে রাখতে বড়দিনে খড় আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে কৃত্রিম গোয়ালঘর বানানো হয়। তাতে যিশু খ্রিষ্ট, যোসেফ, মারিয়া, গরু, ভেড়া ইত্যাদির রেপ্লিকা রাখা হয়। গোয়ালঘরের উপরে কাঠির দন্ডে একটা স্টার লাগান হয়।
ডায়নিং টেবিলে লাল, সাদা আর সবুজে মিশ্রণে কোস্টার রাখতে পারেন।
সোফা, পর্দা, বেডশিট, কুশন কাভারও করতে পারেন সান্তা ক্লস, হরিণ বা ক্রিসমাস ট্রির ছবি সম্বলিত। সান্তা ক্লসের টুপিও রাখতে পারেন পার্টিতে পরার জন্য।
ঘরের চারদিকে রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো যায় আকর্ষন বাড়াতে। এসব বেলুন লাল, সাদার মিশ্রণে হলে বড়দিনের আমেজ ফুটে উঠবে বেশ।
ইয়াম ইয়াম ক্রিসমাস কেক
শুধু কেকই নয় বড়দিনের বড় উৎসবে নানারকম কুকিজ, ডোনাট ইত্যাদিও ঘরে বানানো হয়। আর বড়দিন যেহেতু শীতকালে তাই এদেশে শীতের পিঠাও বানানো হয় ক্রিসমাস পার্টিতে।
যারা বাড়িতে ক্রিসমাস পার্টি আয়োজন করবেন, তারা ঘরের পাশাপাশি বিভিন্ন বেকারি, কেক শপ বা কনফেকশনারি থেকেও কুকিজ এবং কেক সংগ্রহ করতে পারেন। এসব কেক কুকিজের অনেকগুলোই ক্রিসমাস উপলক্ষে সান্তা ক্লসের আদলে বা লাল ও সাদা রঙের সংমিশ্রণে হয়।
এখন তো ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার দেওয়ার সুবিধাও রয়েছে। নিজ নিজ সুবিধা মত প্রস্তুতি নিয়ে নিন আর ক্রিসমাসে প্রিয়জনের সাথে উপভোগ করুন মজার মজার খাবার। স্পেশাল ক্রিসমাস কেক কিন্তু গিফট হিসেবেও দিতে পারেন বন্ধুদের।
জিঙ্গল বেলস জিঙ্গল বেলস, জিঙ্গল অল দ্য ওয়ে…
বড়দিন মানেই যেন ক্রিসমাস ক্যারলের সুরে মাতোয়ারা পুরো পার্টি অঙ্গন। পার্টি মাতাতে ক্রিসমাসের স্পেশাল গানগুলো আগে থেকেই প্রস্তুত রাখুন। শহরে ক্রিসমাস ক্যারল হয় রবীন্দ্র সঙ্গীত বা আধুনিক সুরে আর গ্রামে এখনো ভাটিয়ালি আর কীর্তনই গাওয়া হয় ক্যারল হিসেবে। আপনি আপনার পছন্দমত ইংলিশ, বাংলা গানের ক্রিসমাস ক্যারল প্রস্তুত রাখতে পারেন। কেউ চাইলে গান বাজনার জন্য ডিজে আনতে পারেন যার প্রস্তুতি আগে থেকেই সেরে রাখতে হবে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সারাবাংলা/আরএফ