Tuesday 12 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বই আলোচনা: কিযী তাহ্‌নিন ও তার ‘ইচ্ছের মানচিত্র’


১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:২৩

।।মাহমুদ মেনন।।

‘দোতলা বাড়ি। লাল ইটের। দেখলে মনে হয় যেন লাল ইটের ভাঁজে ভাঁজে পৃথিবীর সকল শান্তি সিমেন্টের সাথে লেপ্টে আছে।’- কী দারুণ অর্থবহতা লেখনিতে। বইটির ৮০তম পৃষ্ঠায় এই লাইন ক’টি পাবেন। এমনি করে এর গল্পে গল্পে, পাতায় পাতায়, বাক্যে বাক্যে, শব্দে শব্দে অর্থবহতা লেপ্টে আছে। বইটির নাম- ইচ্ছের মানচিত্র।

প্রশ্ন করতে পারেন- ইচ্ছের আবার মানচিত্র হয় নাকি? ইচ্ছেরা তো পাখা মেলে ওড়ে। সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে। উত্তর হচ্ছে- একজন লেখকই পারেন ইচ্ছেকে মানচিত্রে বন্দি করতে। তবে সে পারাটা খুব চারটিখানি কথা নয়!

কিযী তাহ্‌নিন সে কাজটিই করেছেন। ইচ্ছের মানচিত্র এঁকেছেন গল্পে গল্পে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বইটির প্রকাশনা উৎসবে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। আসলে কিযীর ইচ্ছেতেই যাওয়া। কারণ সেখানে তিনি বলছিলেন- একমাত্র তারাই দাওয়াত পেয়েছেন যাদের তিনি দাওয়াত দিতে চেয়েছেন। ফলে সেখানেও তার ইচ্ছারই প্রতিফলন।

তো- সেই নেমতন্নে যেয়ে সেই সন্ধ্যাটিও অর্থবহ হয়ে উঠেছিলো। অনুষ্ঠানে অনেক কথা হলো। সে সবগুলো কথাই গুরুত্বপূর্ণ। বইটি পড়লে কিযীবন্দনা তো করতেই হবে। কিন্তু না পড়েও এ নিয়ে দুটো কথা বলা যায়। কারণ- বইটির নাম ও এর প্রচ্ছদ। যিনি প্রচ্ছদ এঁকেছেন, সেলিম আহমেদ, তিনি কী মনে রেখে এই অংলকরণে সাজিয়েছেন কিযীর ইচ্ছের মানচিত্রকে তা জানি না। তবে আমার মনে পড়ে যায়- কিশোর রবীন্দ্রনাথের লেখা- ‘মীনগণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে, এখন তাহারা সুখে জলক্রীড়া করে’। ইচ্ছের মানচিত্রে এমন একটি প্রচ্ছদ সুমানান। কারণ কিযীর ইচ্ছের গল্পগুলো এতদিন লুকোনোই ছিলো বলতে হবে। এখন সেগুলো প্রকাশিত হয়েছে এই প্রচ্ছদ নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

প্রচ্ছদ ওল্টালে ফ্লাপে যে বলা হয়েছে, কিযী তাকিয়ে দেখতে ভালোবাসেন- আমিও ঠিক তাই মনে করি। তবে কী! আমার একটু বাড়িয়ে মনে হয়- কিযী আসলে দেখেন না… মূলত কিযীর চোখে ধরা পড়ে। চারপাশের ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা। তা না হলে কী আর ছোট গল্প হয়?
হয়তো সে কারণেই কিযীর প্রতিটি গল্প একেকটি ছোটগল্প।

বইটি পড়ে কিযীর লেখার-বোঝার-অনুধাবনের শক্তি সম্পর্কে ধারণা পাঠকমাত্রই পাবেন। কিন্তু যারা ভবিষ্যত পাঠক, এখনো যারা কিযী পড়েননি তাদের জন্য বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যার আলোচনায় আনোয়ারা সৈয়দ হকের বক্তব্যের একটি অংশ তুলে ধরা যায়। তিনি বলছিলেন- লেখার জন্য একটা দম লাগে। সে দম কিযীর মধ্যে তিনি দেখতে পান। এবং তিনি চাইছেন- কিযী আর কিছুই করবেন না। শুধুই লিখবেন।

আর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলছিলেন কিযীর সৃষ্টিশীলতার কথা। সে কথা অবশ্য তিনি আগেও বলেছেন যা রয়েছে বইটির পেছন প্রচ্ছদে ঠিক এভাবে- ”… কিযীর সৃষ্টিশীলতা যেন একটা উচ্চতায় পৌঁছেছে, যে উচ্চতায় ওঠার অর্থ হচ্ছে একটা সময় আকাশটা ছোঁয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হওয়া।” বইয়ের মুখবন্ধে সে কথা আরও বিষদ করে লিখেছেন এই শিক্ষাবিদ সাহিত্যিক।

সেতো গেলো বইটির সামনের ও পেছনের অংশের কথা। আর ভেতরে? সেখানে গল্পের ডালি সাজানো হয়েছে পাঠককে তুষ্ট করার মতো সকল বহমানতায়। দেড় ডজন গল্প। ওই যে, ৮০তম পৃষ্ঠার কথা বললাম- ভেবে বসবেন না- সেখানেই শুধু? ওল্টান না! বইটির যে কোনও পৃষ্ঠা! হোক না সে যে কোনও গল্পের অংশ! কোনও বর্ণনার ছটা পাবেন না। ঘটনার ঘনঘটাও নেই। তবে আছে- অকালের বিচ্ছিন্ন মুকুল। কত ভাব, কত ভয় ভুল।

এই ধরুন- প্রথম গল্পে ভুল করে ভুল বুঝে বাড়ির কাজের ছেলে আবদুর রব তিনশ টাকার পুদিনা পাতা কিনে কী বিপাকেই না পড়েছে। সে গল্প কি শুধু বিপাকেই শেষ হয়েছে? না। বরং গভীর ভাবে চোখের সামনে তুলে আনা হয়েছে একজন রবের গল্প যার সঙ্গে বাড়ির মানুষগুলোর, কিংবা বাড়ির মানুষগুলো সঙ্গে তার ছিলো এক আত্মার সম্পর্ক। যা সাধারণ চোখে দেখা যায় না।

বিজ্ঞাপন

এটি কিযীর প্রথম বই। কিযী যে ভালো গল্পকার সে প্রমাণ গল্পে গল্পে মিলবে। তবে তিনি যে উত্তীর্ণ এক লেখক তার প্রমাণ পাওয়া যাবে অঙ্কলক্ষ্মী গল্পটিতে। সে, ও এবং সে এবং ও এই তিনটি পর্বে সাজানো হয়েছে গল্পটিকে। এখানে ভাষার গুন, ভাবনাকে ভাষায় প্রকাশের দক্ষতা, কাহিনী এসব কিছুকে ছাপিয়ে স্পষ্ট হয়েছে একটি গল্পের ধারাবাহিকতাকে ভাঁজে ভাঁজে সাজিয়ে উপস্থাপনায় তার অনন্য দক্ষতা।

আমরা যারা কিযীর লেখালেখির সাথে আগে থেকে পরিচিত তাদের জানা যে- কিযীর একটি জানালা আছে। সেখান থেকে কিযী সমাজের অসঙ্গতিগুলো দেখেন। আর কিযীর চোখ দিয়ে পাঠকও দেখতে পান সে অসঙ্গতি। সারাবাংলা.নেট এ কিযীর সে জানালা পথে দেখা অসঙ্গতিগুলোর কোনও কোনওটিও স্থান পেয়েছে এই ইচ্ছের মানচিত্রে।

কিযীর প্রতিটি গল্প একেকটি চিন্তার খোড়াক। আমার ধারনা কিযীর প্রতিটি ছোটগল্প নিয়ে একটি করে উপন্যাস লেখা যাবে। কিযী তাহ্‌নিন নিজেই হয়তো লিখবেন। আনোয়ারা সৈয়দ হকের কথা মেনে- একদিন হয়তো তাই হবে- কিযীর একটাই কাজ হবে- লেখালেখি। তাদের তার আকাশ ছোঁয়ার সম্ভাবনাটি পূর্ণতা পাবে বৈকি! আর কিযী’র জানালা- সেতো খোলাই থাকলো!

আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি- সমাবেশ থেকে প্রকাশিত বইটি মিলবে বইমেলায়।

সারাবাংলা/এমএম

ইচ্ছের মানচিত্র কিযী তাহ্‌নিন বইমেলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর