ধুলো উড়বে। আর সেই ধুলোতে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতাল হবে পাঠক। ফিরে দেখবে পুরনো সব বই। এমন হাতছানিতেই তো আসে ফেব্রুয়ারি। আসে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বছরঘুরে তা আবার এলো ফিরে। বই, পাঠক, লেখক আর প্রকাশকের অপরূপ এই মিলনমেলার অপেক্ষার দিন ফুরালো।
দীর্ঘ দিনের রীতি ভেঙে ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ শুরু হলো প্রাণের মেলা, বইমেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা উদ্বোধন করে প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দীর উদ্যান— দুই প্রান্তই পাঠকের জন্য খুলে দেওয়া হয়। হিম হিম সন্ধ্যায় সেই উন্মুক্ত মেলায় সোহরাওয়ার্দী প্রান্তে জার্মান প্রবাসী সাইদুর রহমান বই দেখতে দেখতে বলছিলেন, প্রতিবছর বইমেলাকে কেন্দ্র করেই তার দেশে আসা হয়। এই বইমেলার প্রতিটি ধুলো তিনি উপভোগ করেন। তবে ব্যাংকার কারিশমা কামাল প্রথম দিনেই ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছেন ভিড় কম থাকবে বলে।
সাইদুর ও কারিশমা দু’জনের মতোই প্রথম দিনের মেলায় যারাই এসেছেন, সবাই স্বস্তি নিয়ে ঘুরেছেন, কিনেছেন বইও। এবারের মেলায় দুই প্রান্ত মিলিয়ে ৫৯৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী প্রান্তে ঠাঁই হয়েছে ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের ৩৪টি প্যাভিলিয়নের। সন্ধ্যার মেলায় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই তৈরি পাঠকের জন্য।
আরও পড়ুন- প্রাণের মেলার যাত্রা শুরু
বাংলা একাডেমি প্রান্তে যথারীতি আছে মুক্তধারা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরেই ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করেছিল বইমেলা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা এবারের বইমেলা নিয়ে আশাবাদী প্রকাশকরা।
অগ্রজ প্রকাশক ওসমান গণি সেই আশাবাদের কথা জানিয়ে বলছেন, চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে যে বইমেলার যাত্রা শুরু, তা আজ সারাবিশ্বের বাংলাভাষীদের প্রাণের মেলা। সেই মেলার এবারের উপলক্ষ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। চেতনা, মননে আর বিশালতায় মেলা সফল হবে বলে তার বিশ্বাস।
আরও পড়ুন- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী লেখকরা পুরস্কৃত
তথ্যকেন্দ্রের হিসাব মতে, প্রথম দিনের মেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ ছাড়া আর কোনো বই না এলেও স্টলে স্টলে নতুন বইয়ের সংখ্যা কম ছিল না। এর মধ্যে সাংবাদিক গিয়াস আহমেদের প্রথম বই ভ্রমণ গদ্য ‘দ্য লুনাটিক এক্সপ্রেস: চন্দ্রযান’ বেরিয়েছে ভাষাচিত্র থেকে। আগামী থেকে প্রকাশিত হয়েছে মৌলি আজাদের গল্পগ্রন্থ ‘বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে’।
সন্ধ্যার মেলায় কিছুটা ছন্দপতন ঘটে বৈদ্যুতিক তার থেকে রাবেয়া বুকসের স্টলে আগুন লাগায়। দ্রুত সে আগুন নিভিয়ে ফেলা গেলেও শঙ্কা কমেনি। নিম্ন মানের তার ব্যবহারের ফলেই আগুন লেগেছে বলে জানিয়েছেন বইমেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ।
আরও পড়ুন- ‘বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম নয়, এটা বঙ্গবন্ধুর হিতোপদেশ’
তবে ছন্দময় ছিল লেখক কুঞ্জ। শুরুর দিনে লেখক রেজা ঘটক ও বিধান রিবেরু মুখোমুখি হয়েছিলেন পাঠকের। সঞ্চালনায় ছিলেন স্বকৃত নোমান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরিত হওয়া লিটল ম্যাগ চত্বর ঘিরেও আগ্রহ ছিল পাঠকের। এই আগ্রহ দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই পাবে পূর্ণতা।