বইমেলায় হাজারো নতুন বই এবং একজন ড. ফয়জুর
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:১৫
৯ দিনে নতুন বইয়ের সংখ্য ১,১৩৬টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ লেখক নবীন ও তরুণ। চিরকালীন সাহিত্যের বিচারে তাদের জায়গা কোথায়? প্রশ্নটা ছিল অ্যাডর্ণ প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হুসেইনের কাছে। বললেন, শুধু মেলা উপলক্ষে অনেক বই বেরিয়েছে। আমার কাছে এটা অপচয়। প্রস্তুতিটা যদি সারাবছরের হয়, তাহলে লেখক তরুণ ও নবীন হলেও আমি বইয়ের মান নিয়ে আশাবাদী।
আশাবাদী সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। প্রতিবছর তিনি মেলায় আসবেনই। বইমেলা আর বই তার কাছে অমোঘ এক হাতছানি। বলছিলেন, ‘আমি প্রচুর বই কিনি। তরুণদের বই নিয়েও আমার আগ্রহ অনেক। এটা তাদের সঙ্গে আমার একটা সাঁকোর মতো কাজ করে। তাদের ভাবনা আমি জানতে পারি।’
মেলায় এদিন আসা ১৭৯টি নতুন বইয়ের মধ্যে শাহেদ কায়েস সম্পাদিত ‘বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম স্মরণগ্রন্থ’ একটি। পাটের জিনতত্ত্বের আবিষ্কারক প্রয়াত এই বিজ্ঞানীর জীবনের জলছবি বলা যায় গ্রন্থটিকে। বইটি প্রকাশ উপলক্ষে ঢাকায় এলেন তার সহধর্মিণী রাফিয়া হাসান। বলছিলেন, বইটিতে তার জীবন ও কর্মকে দুই মলাটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য।
এছাড়া কথাপ্রকাশ এনেছে ‘বৈঠকখানায় নির্মলেন্দু গুণ’। সম্পাদনা করেছেন গিরীশ গৈরিক। হাসান আজিজুল হকের ‘আমার রবীন্দ্রযাপন’ মেলায় এনেছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ।
এদিকে, বয়স ৮৬ পেরুনো ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকীর ‘বাঙালির জয়, বাঙালির ব্যর্থতা’ বইয়ের সব কপি বিক্রি হয়ে গেছে এ দিনের মেলায়। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এই সাবেক বিজ্ঞান কর্মকর্তা ন্যূব্জ শরীর নিয়ে পুঁথি নিলয়ের প্যাভিলিয়নে বসে বলছিলেন, এ কী ম্যাজিক হলো! যেখানে প্রকাশকের কাছে গিয়ে বই রাখার জন্য ধরনা দিতে হতো, সেখানে হঠাৎ করেই সব বই শেষ! সামলে নিয়ে বললেন, আমার লেখা পত্রিকাগুলো ছাপে না।
অথচ তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল ২৩টি সন্দর্ভ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে প্রবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড এগ্রিকালচার, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি ও ওমনি ইন্টারন্যাশনাল কলেজ নামক লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজে রসায়নের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।
১৯৬৩ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত (প্রথমে তদানীন্তন পাকিস্তান, পরে বাংলাদেশ) পরমাণু শক্তি কমিশনের বিভিন্ন পদে চাকরি করে অবশেষে ১৯৯২ সালে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন চাকরি থেকে অবসর নেন। শিক্ষা ও চাকরি জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর, তেহরানের সেন্টো ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার সায়েন্সে পৌনে দুই বছর এবং ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে চার বৎসর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট গবেষণা এবং সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পরমাণু চুল্লি গবেষণা ইনস্টিটিউটে ১৩ মাস পোস্ট ডক্টরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। তার চাকরি জীবনে বাকি দিনগুলোতে পরমাণু শক্তি কমিশনের লাহোর, ঢাকা ও সাভারের গবেষণাগারে নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন।
বিজ্ঞান গবেষণায় ড. ফয়জুরের উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে— বিভিন্ন ধাতব অক্সাইডের ওপর আয়নের সমূহের অ্যাডজর্পশন, পরমাণু নিউক্লিয়াস ভাঙনজনিত কারণে রসায়নিক পরিবর্তন ও এ কারণে উৎপন্ন ত্রুটিগুলোকে বিভিন্ন এনিহিলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশোধনকরণ এবং বোরন ধাতুর পাইরো অ্যাসিটেট প্রস্তুত প্রণালী উদ্ভাবন।
উচ্চ শক্তিসম্পূর্ণ বিকিরণের সাহায্যে রাবার গাছের কষের (ল্যাটেক্সের) মধ্যে অবস্থিত রাবারকে ভালকানাইজ করার পদ্ধতি এবং কাঠ ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে উন্নত ধরনের কাঠের প্রস্তুত প্রণালীও উদ্ভাবন করেছেন ড. ফয়জুর।
‘প্লাস্টিক’ ও অনুবাদ করা ‘ইলেকট্রিসিটি শেখার সহজ উপায়’ নামে দু’টি বইও প্রকাশিত হয়েছে ড. ফয়জুরের। তিনি বাংলা একাডেমি ও রসায়ন সমিতির আজীবন সদস্য এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সদস্য।
এবারের মেলায় তাকে ঘিরে এই আগ্রহ ড. ফয়জুর রহমানকে নতুন করে অনেক লেখার আগ্রহ জাগিয়েছে। জানালেন, তার পরের বইটি হবে ‘ভার্চুয়াল বাংলাদেশ’ নিয়ে।
মূল মঞ্চে এদিন আলোচনার বিষয় ছিল বাংলা একাডেমি প্রকাশিত দিব্যদ্যুতি সরকারের ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন’। প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন রাশিদ আসকারী। সভাপতিত্ব করেছেন আবুল মোমেন।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা একুশে বইমেলা ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিকী বইমেলা