অরুণ কুমার বিশ্বাসের গোয়েন্দাচরিত্র অলোকেশ রয়-এর ৩ বই
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:১৭
কথাসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাসের গোয়েন্দাচরিত্র অলোকেশ রয়, একজন পেশাদার প্রাইভেট ডিটেকটিভ। মেধাবী, চৌকস ও অপরাধবিশেষজ্ঞ এই গোয়েন্দার সহযোগী মূলত দুজন- আর্কিটেক্ট উর্বী এবং ক্রাইমরিপোর্টার শুভজিত। তিনি মনে করেন, শুধু চেয়ে থাকার নাম দেখা নয়, মন ও মগজ একসঙ্গে করে দেখতে হয়। তাহলেই কেবল জটিল রহস্যের জট খোলা যায়। আগ্নেয়াস্ত্রের বদলে মগজের ব্যবহারে বিশেষ পারঙ্গম এই গোয়েন্দা। দৃশ্যমান ঘটনার আড়ালে যে নিগূঢ় গল্প লুকিয়ে থাকে, সেখানে আলো ফেলতেই বেশি আগ্রহী আমাদের প্রিয় ডিটেকটিভ অলোকেশ রয়।
কেন্দ্রিয় চরিত্র হিসেবে অলোকেশ রয়কে আমরা প্রথম দেখি জলপিপি উপন্যাসে, যেখানে তিনি কি না একটি পিস্তল ক্রয়ের সূত্রে প্রায় ফেঁসে যান এক খুনের মামলায়। পোড়খাওয়া মানুষ গগন চৌধুরি বুকে গুলি লেগে মারা যান। কিন্তু পুলিশ বুঝতে পারে না এটি খুন, নাকি আত্মহনন! ডিটেকটিভ অলোকেশ রয় অনেকটা নিজেকে বাঁচাতেই এই কেসের সঙ্গে যুক্ত হন, এবং একপর্যায়ে তথ্যপ্রমাণের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, গগন চৌধুরি খুন হননি। তিনি বরং একজনকে মারতে গিয়ে নিজেই মরেছেন। এর নাম রিকোশে বুলেট। গুলি করার পর বুমেরাং-এর মতো টার্গেট লোকটির ঘড়িতে হিট করে ফিরে এসে সেই গুলিটা তার নিজের বুকে লাগে। আর তিনি মারা যান। জটিল রহস্য, আর তারচেয়েও রোমাঞ্চকর এই উপন্যাসের আখ্যানভাগ।
‘আলিম বেগের খুলি’ অলোকেশকে ঘিরে রচিত আরেকটি গোয়েন্দা কাহিনী। এই বইয়ে বেশকিছু রোমাঞ্চকর গল্প রয়েছে, যেখানে আমরা অলোকেশের সঙ্গে তার দুই সহযোগী উর্বী আর শুভ’র উপস্থিতি লক্ষ্য করি। প্রতিটি আখ্যানে আমরা একজন বিজ্ঞানমনস্ক, মেধাবী, পর্যবেক্ষণশীল ও সত্যনিষ্ঠ অলোকেশকে দেখতে পাই। ফেলুদা বা শার্লক হোমসকে অনুকরণ না করেও লেখক অরুণ কুমার বিশ^াস একটি স্বতন্ত্র ধারার গোয়েন্দাচরিত্র সৃষ্টি করেছেন। ‘ডিটেকটিভ ক্লাব’ নামে গোয়েন্দাগল্প পাঠক ও লেখক সমন্বয়ে একটি সাহিত সোপান তৈরির প্রয়াস নিয়েছেন তিনি।
এবারের বইমেলায় অন্যপ্রকাশ থেকে আসছে তার আরেকটি গোয়েন্দা উপন্যাস ‘অনল মিত্রের অপমৃত্যু’। কাহিনী অনেকটাএরকম, বছর সাতেক আগে আচমকা মারা যান দেশের নামি আয়কর উপদেষ্টা অনল মিত্র। তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়, বিষক্রিয়ায় ভিকটিমের মৃত্যু হয়েছে বলে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের বরাতে উল্লেখ করে ফরেনসিক বিভাগ। পুলিশের খাতায় আত্মহত্যা কিংবা অপমৃত্যু। পরে অবশ্য অনলবাবুর স্ত্রী সাগর দত্ত বলে একজনকে আসামি করে খুনের মামলা দায়ের করেন। মামলা চলমান, কিন্তু এই কেসের কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। অনল মিত্রের মেয়ে পৃথা দীর্ঘদিন পর যোগাযোগ করে প্রাইভেট ডিটেকটিভ অলোকেশ রয়ের সঙ্গে, যার ক্যারিয়ারে ব্যর্থতা বলে আদতে কিছু নেই। তিনি চৌকস, পেশাদার ও অসম্ভব মেধাবী- এককথায় অন্তর্যামী। সহকারী উর্বী ও ক্রাইমরিপোর্টার শুভকে নিয়ে তিনি নেমে পড়েন অনল মিত্রের মৃত্যুরহস্য খুঁজতে। একে একে উঠে আসে বেশ কিছু নাম ও রহস্যজনক ঘটনা। হঠাৎ ব্যাংকের একটা চিঠি ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দশ লাখ টাকা লোন নিয়েছিলেন অনলবাবু! কেন? এ ব্যাপারে পরিবারের কেউ কিচ্ছু জানে না। নিহতের স্ত্রী রীতিমতো অন্ধকারে! অনল মিত্রের ঘরে পুরনো দলিল-দস্তাবেজ ঘাঁটতে গিয়ে বেরিয়ে আসে একটি ছবি। সেই ছবি থেকেই জট খুলতে শুরু করে অনল মিত্রের অপমৃত্যু রহস্যের।