এসে গেছে একুশ, মেলার দ্বার খুলবে সকাল ৮টায়
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:৪৫
বিকেলের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রান্তে গুটিগুটি পায়ে ঘুরছিলেন লন্ডন থেকে আসা ব্রিটিশ গবেষক জন বেকার। এর আগে তিনবার ঢাকায় এলেও অমর একুশে বইমেলায় এবারই প্রথম। বায়ান্নর ইতিহাস তার জানা। পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ, মহেশ্বেতা দেবী। বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগেই বলছিলেন, ‘পৃথিবীর বুকে ভাষার জন্য তোমাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস চিরস্মরণীয়। সেই ভাষাকে কেন্দ্র করে এত বড় বইমেলা দেখার ইচ্ছে ছিল। আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
বাংলা পড়তে না জানলেও ভাষা শহিদদের নাম জানেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রভাতফেরিতে যাওয়ার ইচ্ছাটাও জানিয়ে রাখলেন জন।
এমনিতে মেলাতে একুশের আঁচ। আজই পোশাকে সাদা-কালোর সমাহার। ২০১৩ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমানো নীলুফার ইয়াসমীন সাত বছর পর দেশে এলেন। বেশ নস্টালজিক হয়ে পড়লেন। আগের বইমেলার সাথে কোনো মিলই পেলেন না। বললেন, ‘তখন মেলার প্রাণটা অন্যরকম ছিল। এখন হয়তো আরেক রকম।’
প্রভাতফেরিতে শহিদ মিনারে যাওয়ার কথা জানিয়ে নীলুফার আরও বললেন, ‘একুশ যেমন আমাদের একটি শক্তি, তেমনি একুশের বইমেলাও আমাদের শক্তি।’
সেই অধিকার আদায়ের শক্তির বইমেলায় বৃহস্পতিবারটা জমজমাটই থাকলো। বাংলা একাডেমি প্রান্তে বিকেলে মোড়ক উন্মোচন হলো ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ গ্রন্থমালা’র। তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত ৫০টি বইয়ের এই সিরিজটির উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সম্পাদক সেলিনা হোসেন। গ্রন্থ উন্মোচন পর্বে বইগুলোর লেখকরা ছাড়াও কথা বলেছেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও সম্পাদনা পরিষদের সুরমা জাকারিয়া চৌধুরী। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এই সিরিজ প্রকাশ করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত— মেলায় বাড়তে থাকে পাঠক ভিড়। সেই সাথে বাড়ে আড্ডা। পাঞ্জেরি প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের বাইরে জমাট আড্ডায় ছিলেন নবীন-প্রবীণ লেখকরা। সবাই তাকিয়ে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারির দিকে। শুক্রবার মেলার দ্বার খুলবে সকাল ৮টায়। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
মেলার ঊনবিংশতিতম দিনে নতুন বই এলো ১৪৩টি। আর ১৯ দিনে এলো ২ হাজা ৮৮১টি। এর মধ্যে মম প্রকাশ এনেছে ড. মো. মনোয়ার হোসেনের ‘ড. নীলিমা ইব্রাহীমের সাহিত্য সাধনা’। অনন্যা প্রকাশ করেছে আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘উপন্যাসসমগ্র’।
মূল মঞ্চে আলোচনার বিষয় ছিল বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আবুল কাসেমের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু ও চা শিল্প’। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক দীপংকর মোহান্ত। সভাপতিত্বে ছিলেন বিশ্বজিৎ ঘোষ।