তুলির আঁচড়ে ‘মেঠোপথের গান’
২৭ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শহুরে জীবন নিয়ে একরাশ বেদনাবোধ আর গ্লানি আছে খ্যাতিমান শিল্পী মনসুর উল করিমের। গ্রামের মেঠোপথ তাঁকে টানে বেশি। শহুরে জীবন ছেড়ে তাই তিনি বেছে নিয়েছেন গ্রামকেই। গ্রামীণ আবহকে পরিণত শিল্পবোধ দিয়ে নতুনভাবে এঁকেছেন এই শিল্পী।
নিজ শিল্পসত্তাকে নতুন করে গড়তে আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে মনসুর উল করিমের তিনদিনের একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘মেঠোপথের গান’। চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর রোজভ্যালির চিত্রভাষা গ্যালারিতে শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়েছে। এমেরিটাস প্রফেসর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন এর উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী মনসুর উল করিম বলেন, ‘আমি আগে যেসব ছবি এঁকেছি, সেগুলো যেভাবে আঁকা হয়েছে, তার চেয়ে নতুন আঙ্গিকে আমি এই প্রদর্শনীর ছবিগুলো আঁকার চেষ্টা করেছি। আমি নিজেকে ভেঙে নতুনভাবে গড়তে চেয়েছি। আমার শিল্পকেও আমি ভাঙতে চেয়েছি। কারণ এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকলে শিল্পীর মৃত্যু হয়।’
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বলেন, ‘শিল্পী মনসুর উল করিম আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি আবারো আমাদের গ্রামে নিয়ে গেলেন। পরিণত শিল্পবোধের এ উপলব্ধিগুলো দর্শক-সমালোচককে নতুন জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেবে।’
গ্যালারির সমন্বয়ক মইনুল আলমের সঞ্চালনায় উপস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক শায়লা শারমিন স্বাতি, শিল্পী নাজলী লায়লা মনসুর, শিল্প সমালোচক আবুল মনসুর, শিল্পী আনোয়ার হোসেন পিন্টু, চারুকলার শিক্ষক জাহেদ আলী যুবরাজও তাদের প্রতিক্রিয়া জানান।
গ্যালারির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৯টি শিল্পকর্মের এ প্রদর্শনী চলবে। শেষ হবে আগামী ২৯ এপ্রিল।
শিল্পী মনসুর উল করিম ১৯৫০ সালে বাংলাদেশের রাজবাড়ী জেলায় জন্ম নেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে চারুকলায় স্নাতক এবং ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে অধ্যাপনা করেন। অবসর নেওয়ার পর বর্তমানে গ্রামে গিয়ে তিনি নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বুনন আর্ট স্পেস’ নামে একটি চিত্রকর্ম প্রতিষ্ঠান।
এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্নস্থানে শিল্পী মনসুর উল করিমের আঁকা ৫০টি চিত্রপ্রর্দশনী হয়েছে। চিত্রকলায় সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০০৯ সালে পেয়েছেন একুশে পদক। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সুলতান পদকসহ বিভিন্ন সময় তিনি একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমও