Sunday 11 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন বইয়ের সঙ্গে বাড়ছে বইপ্রেমীদের পদচারণা


৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩২ | আপডেট: ১০ মে ২০২২ ১৫:০৫

।। হাসনাত শাহীন, বইমেলা থেকে ।।

ঢাকা: বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের বিজয়ী চেতনা দীপ্ত অমর একুশে গ্রন্থমেলার সঙ্গে ২০১৪ সালে যুক্ত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার চেতনা। তখন থেকেই ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ধন্য প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। বাঙালির ঐতিহাসিক চেতনা দীপ্ত এই দুই স্থানে একসঙ্গে প্রাণের মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে বেড়েছে মেলার পরিসর ও মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা। পাশাপাশি প্রতিবছরই নান্দনিক হচ্ছে মেলার সার্বিক পরিবেশ।

বিজ্ঞাপন

বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় ‘বিজয় : বায়ান্ন থেকে একাত্তর, নবপর্যায়’ প্রতিপাদ্যের এবারের মেলার সার্বিক পরিবেশ ছাপিয়ে গেছে সকল মেলাকে। পরিবেশগত ভাবে অতীতের সকল মেলাকে ছাপিয়ে যাওয়া এবারের মেলার অতিবাহিত করলো তার চতুর্থ দিন। মেলার এ চতুর্থ দিনে প্রতি কর্ম দিবসের মতোই বিকেল ৩টার সময় যখন মেলার প্রবেশ দ্বার খুলে দেওয়া হয় তখন মেলায় প্রবেশের জন্য দীর্ঘ সারি দেখা না গেলেও যত সময় গড়িয়ে যায় ততই বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে বই-প্রেমীর সংখ্যা। মেলার মাঝামাঝি সময়েই সংখ্যায় কম হলেও মেলার দু’প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে প্রাণের তাগিদে বইয়ের চিরন্তন আগ্রহে একক, দ্বৈত ও দলবদ্ধ হয়ে মেলায় ছুটে আসা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার অমোঘ পদচারণায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বাংলা একাডেমি সর্বত্রই নির্ভয়ে-শঙ্কাহীন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার অমোঘ পদচারণায় ফুটে ওঠে চিরায়ত বাঙালির বইয়ের প্রতি প্রাণের অমোঘ ও অপাংক্তেয় আবেদন। তাদের মুখের ভাষা-চোখের চাহনি-ভালোবাসাময় পদক্ষেপ দেখে মনে হয়-তারা যেন একুশের চেতনায় নতুন করে ঋদ্ধ হতে মেলা প্রাঙ্গণে ছুটে এসেছেন।

বিজ্ঞাপন

আর, সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে মেলার শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থার স্টলগুলোর সামনে বেড়ে যায় ভিড়ের পরিমাণ। মনোযোগ সহকারে প্রিয় লেখকের পছন্দের বইয়ের পাতা উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখার পাশাপাশি কিনেও নিচ্ছেন কাঙ্খিত বইটি। প্রকাশকরাও জানাচ্ছেন-গত তিনদিনের তুলনায় আজ চতুর্থদিনে বেচা বিক্রি ছিল তুলনামূলক ভাবে বেশি। তারা বলছেন-মেলা নিয়ে এখনও সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব করার সময় না আসলেও আজকের বেচা-বিক্রিতে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এখনই অনেক বেশি আশাবাদী। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে খুব শিগ্রি মেলা সাফল্যের পথে হাঁটা শুরু করবে। তবে, চতুর্থদিনেও মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রকাশকদের বিক্রি ছিলো অপরিবর্তিত। শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনীর পাশাপাশি অচিরেই মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রকাশনীগুলোতে বিকিকিনি বাড়বে বলে আশাবাদী সকল প্রকাশকরাই।

মেলার নতুন বই : ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯’ মেলার চতূর্থদিনে নতুন বই এসেছে ১৪১টি। এর মধ্যে-গল্পগ্রন্থ ২৬টি, উপন্যাস ২৫টি, প্রবন্ধ ৭টি, কবিতা ৪৫টি, গবেষণা গ্রন্থ ৩টি, ছড়ার বই ২টি, শিশুসাহিত্য ৩টি, জীবনীগ্রন্থ ১টি, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই ২টি, নাটক ৪টি, বিজ্ঞান বিষয়ক বই ১টি, ভ্রমণ বিষয়ক বই ৪টি, ইতিহাস ভিত্তিক বই ১টি, রম্য/ধাঁধা বিষয়ক বই ২টি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বা সায়েন্স ফিকশন ৩টি এবং অন্যান্য বিষয়ে বই এসেছে ১২টি।

সোমবারের মেলার উল্লেখযোগ্য বই- প্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ড. মো. আবদুল ওহাবের গবেষণা গ্রন্থ ‘রাজশাহীর লোককবি’, আহমদ পাবলিশিং হাউস প্রকাশ করেছে পূজা মিত্রের গবেষণা গ্রন্থ ‘বাউলপদাবলীতে চৈতন্যপ্রভাব’, কথা প্রকাশ থেকে এসেছে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনর উপন্যাস ‘সময়ের ফুলে বিষপিঁপড়া’, বেঙ্গল পাবলিকেশন্স প্রকাশ করেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘অতুলপ্রসাদ সেন’, প্রতীক থেকে প্রকাশিত হয়েছে এ কে এম শাহনাওয়াজের ‘কিশোরদের বঙ্গবন্ধু ; বড় মানুষের গল্প’, আগামী প্রকাশনী প্রকাশ করেছে আসাদুজ্জামান আসাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘একাত্তরের গণহত্যা ও নারী নির্যাতন’, করাতকল থেকে প্রকাশিত হয়েছে আলম সিদ্দিকী’র কাব্যগ্রন্থ ‘আগুন ঘর’, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ নিয়ে এসেছে মাহবুব উল আলম চৌধুরী’র উপন্যাস ‘একজন স্বপ্নযাত্রী’ এবং অনুপম প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে তুষার আবদুল্লাহ’র শিশুতোষ গল্পের বই ‘স্কুল ভ্যান’।

মেলামঞ্চে সোমবারের আয়োজন : প্রতিদিনের মতো সোমবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এর শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। পরে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তোফায়েল আহমেদ।

প্রাবন্ধিক নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে, ১৯৬৯-এ ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে তোফায়েল আহমেদ যখন শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপধিতে ভূষিত করার ঘোষণা দেন তখন মঞ্চে উপস্থিত ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) ছাত্র ইউনিয়ন মেনন) ও ডাকসুসহ সকল ছাত্র নেতৃবৃন্দ রেসকোর্সের লক্ষ জনতার সাথে দু-হাত তুলে এই ঘোষণার প্রতি সমর্থন জানান। বস্তুত, সর্বসম্মতিক্রমেই শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কেউ কেউ কিছু না জেনেই ভিত্তিহীন মতদ্বৈধতার প্রশ্ন তুলতে চান, কেউ আবার ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি আগেই চয়ন ও ব্যবহারের কীর্তি দাবি করেন- যার কোনো ঐতিহাসিক মূল্য নেই। আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের ৫০ বছর পূর্তি এবং শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করার ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের মনে রাখতে হবে- এ দুটি ঘটনাই ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি এবং বাঙালি জাতির সম্মিলিত ইচ্ছার মহত্তম প্রকাশ।

সভাপতির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৬৯-এ সমগ্র বাঙালি জাতি স্বাধীনতার অগ্নি-অপেক্ষায় উজ্জীবিত হয়েছিল। সংগ্রামী ছাত্রজনতার সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছিল কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের মুক্তির দাবি। উপনেবিশের শৃংখল ভেঙে স্বাধীন সার্বভৌম বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল আসাদ, মতিয়ুর, সার্জেন্ট জহুরুল হক, শামসুজ্জোহা প্রমুখের রক্তে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে গতিবেগ দিয়েছে মিথ্যা মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তির দাবি। অবশেষে ছাত্রজনতার গণ সংর্বধনায় ১৯৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদানের মাধ্যমে যেন আসন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক হিসেবে যেন জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়। জাতির সে প্রত্যাশা তিনি পূরণ করেছেন। বাংলার বন্ধু হয়ে বাংলার মানুষের জন্য হাজার বছরের প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন।

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মেলার মূলমঞ্চে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার এবং ইকবাল আজিজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী ভাষ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাহমুদা আখতার। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াকুব আলী খান, লীনা তাপসী খান এবং ক্যামেলিয়া সিদ্দিকা। শিল্পীদের সঙ্গে যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন স্বরূপ হোসেন (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), রবিনস্ চৌধুরী (কী-বোর্ড), ফিরোজ খান (সেতার)।

এদিকে, এবারের মেলার ৪র্থ দিনের বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন-জাকির তালুকদার, নাসিমা আনিস, বিধান রিবেরু, তিথি আফরোজ এবং গিরিশ গৈরিক। এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সায়েরা হাবীব।

মেলামঞ্চের মঙ্গলবারের আয়োজন : অমর একুশে গ্রন্থমেলার পঞ্চম দিন আগামীকাল মঙ্গলবার গ্রন্থমেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং শেষ হবে রাত ৯টায়। এসময়ের মধ্যে বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কবি সিকান্দার আবু জাফর : জন্ম শতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি নাসির আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান, ড. শিরীণ আখতার এবং কবি বায়তুল্লাহ কাদেরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সারাবাংলা/এমএ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর