Saturday 10 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধূসর দিনের রঙিন বইমেলা


২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২০:২৫ | আপডেট: ১০ মে ২০২২ ১৫:৩০

মাকসুদা আজীজ

 সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা মেঘলা। সঙ্গে রয়েছে ঘন কুয়াশা। তবে দিনটি মলিন হলেও তা মোটেই মলিন করতে পারেনি বই মেলার প্রাণ।
আজ মেলার ২য় দিন, তার উপরে আবার শুক্রবার। উৎসব প্রিয় ঢাকার মানুষ দুপুর পাড় হতেই ভিড় জমিয়েছে মেলায়। প্রবেশ দ্বারে এমন জট যে, ‘ভাই আমি প্রেসের মানুষ, আমাকে একটু ঢুকতে দিন’ বলতেও পার করতে হয়েছে ১০ জনকে। এর আগে গেটের পুলিশকেও দেখা সম্ভব নয়। প্রেস কার্ড দেখিয়ে ঢুকে যাবে শুট করে, তাও হবার নয়। ঢোকার সময় পুলিশ কড়া নিরাপত্তা তল্লাশি করবে। তারপরই যেতে পারবেন ভেতরে।
মূল মেলায় ঢোকার আগে পায়ে হেঁটে পাড় হতে হয় সংরক্ষিত এলাকা। এ দিকে কার্জন হল ওদিকে টিএসসি, মাঝের রাস্তা বইমেলার জন্য আটকে রাখা। এর ভেতরে না ঢুকে গাড়ি, না হকার। শুধু ফুলের মুকুট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছোট ছোট শিশু ফুলওয়ালারা। একটা মুকুট কিনলেই লক্ষ তারা ঝলসানো একটা হাসি উপহার দিবে আপনাকে। সেই মুকুট মাথায় পরে বিভিন্ন বয়সী মেয়েরা বসন্তকে নামিয়ে এনেছে দিন দশেক আগেই।

বিজ্ঞাপন
বসন্ত যে এখনও আসেনি সে কথা অবশ্য বইমেলায় ভেতরে ঢুকে বলা যাবে না। হরেক রঙের বর্ণিল মেলায় স্টলগুলো দেখলে কোনটার চেয়ে কোনটার সুন্দর তা নিয়েই  বরং পরতে হবে দ্বিধায়।
বড় বড় প্যাভিলিয়নগুলো তো বটেই ছোট ছোট স্টলগুলো থেকেও চোখ ফেরানো দায়! কেউ মৃৎশিল্প কেউবা বাঁশ বেত, কেউবা শুধু কাগজ দিয়েই সাজিয়ে ফেলেছেন চমৎকার স্টল।
পায়ের নিচে এবড়োথেবড় মাটিকে সমান করতে বিছানো হয়েছে ইট। সারি বসানো ইটের মধ্যে এক দুটো ভাঙা, ভুল মাপে বসা ইট চলার পথে বাধা হচ্ছে। সে বাধা কেউ মানলে তো! এগুলোর উপর দিয়েই স্টল থেকে স্টল প্যাভিলিয়ন থেকে প্যাভিলিয়নে দৌড়ে বেড়াচ্ছে পাঠকরা।

বিজ্ঞাপন

কোনো কোনো স্টল এখনও গুছিয়ে উঠেনি। টানাটানি চলছে আলোর সংযোগ কি নামফলকের। এর মধ্যে বুঝি দেখা গেলো কোনো একজন লেখককে, ওমনি তার অনুসারী পাঠকরা দৌড়ে যাচ্ছেন অটোগ্রাফ নিতে। হালের পাঠকরা আবার শুধু অটোগ্রাফে খুশি নন। ফটোগ্রাফ তোলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। লেখককে না পেলে কেউ কেউ গোস্বা করে বই না কিনেই চলে যাচ্ছেন। কেউবা দাঁড়িয়ে আছেন অপেক্ষায় কখন আসবেন তার প্রিয় লেখক।

মেলায় হাঁটতে হাঁটতে যারা ক্লান্ত তাদের জন্য এবার আছে বসার জায়গাও। এক ব্লক অন্তর অন্তরই মরূদ্যানের মতো দেখা মিলবে সাদা বেঞ্চির। বিশাল মেলায় হেঁটে ক্লান্ত পাঠকরা খানিক জিরিয়ে নিচ্ছেন এখানে। তবে কেউ একবার বসলে আর উঠার নাম নেয় না। কেউ কেউ তো বেঞ্চে বইয়ের ব্যাগ প্যাটরা তুলেই বসে আছেন। অন্যদের যে সুযোগ দিতে হবে সে খেয়ালই নাই।

মেলার সোহরাওয়ার্দি প্রান্তে এক পাশে বসেছে ছোটদের কর্নার। সে কর্নারের মাঝামাঝিতে
বর্গাকার একটি মঞ্চ। ছুটির দিন সকালে সেখানে শিশুদের প্রিয় চরিত্ররা এসে দাপিয়ে যাবেন পুরো মাস। রাতে সে মঞ্চ শুধুই শিশুদের রাজত্ব। জুতো খুলে নিচে রেখে কাঠের পাটাতনে মনের খুশিতে ধুমধাম লাফাচ্ছে তারা। এক দুইজন শিশুর বাবা মা যদি তাকে সেখানে লাফাতে না দিচ্ছে, চিৎকার করে ধনুকের মতো বাঁকিয়ে প্রতিবাদ মুখর হচ্ছে সে। বাবা সালাম বরকত রফিকের প্রতিবাদের ধারার উত্তরাধিকারী না সে? এত সহজেই বাধা মেনে নিবে নাকি?

বইমেলার শেষ প্রান্তে আছে দুইটি খাওয়ার স্টল। বাণিজ্যমেলার মতো প্রাণঘাতী দাম না হলেও সুলভ তাও নয়। অত্র এলাকায় খাওয়া বাদ পানির জন্যেও সেই একটিই জায়গা। দাম না মেনে উপায়ও নেই কোনো।

আঁধার নামাতেও কমে না ভিড়। বইমেলা মাত্র নয়টা পর্যন্ত। এর পরই ফুরিয়ে যাবে আরও একটি দিন। তারপর মেলার বাকি থাকবে মোটে ২৬ দিন। অন্যদের জন্য তা অনেক মনে হলেও পাঠক জানে এক একটি দিন কত মূল্যবান!

সারাবাংলা/এমএ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর